আমাদের বিদেশী ঋণের বোঝা ক্রমেই বাড়ছে। এমনকি তা এখন একেবারে অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। প্রাপ্ত তথ্যমতে, বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি বিদেশী ঋণ ইতোমধ্যেই সাড়ে ৯৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, জুন ২০২২ শেষে মোট বিদেশী দায়দেনা পূর্ববর্তী ৯ মাসের তুলনায় সাড়ে ১১ শতাংশ বেড়ে ৯৪.৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এ সময়ে সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতের বিদেশী ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদেশী ঋণ বেড়েছে স্বল্প ও দীর্ঘ উভয় মেয়াদেই।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, জুন ’২২ শেষে সরকারি খাতের ঋণ সেপ্টেম্বর ’২১-এর ৬৫.০৫ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ৬৮.৫৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। এরমধ্যে সরকারি খাতের ঋণ রয়েছে ৫৬.৫৪ বিলিয়ন ডলার, যা ৮ মাস আগে ছিল ৫৪.০৩ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে স্বায়ত্তশাসিত সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিদেশী ঋণ বিবেচ্য ৯ মাসে ১১ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ১২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। এরমধ্যে স্বল্পমেয়াদি বিদেশী ঋণ রয়েছে ২.৮৯ বিলিয়ন ডলার আর দীর্ঘমেয়াদি ঋণ রয়েছে ৯.১১ বিলিয়ন ডলার।
বেসরকারি খাতের বিদেশী ঋণ এ সময়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেপ্টেম্বর ’২১ এ বিদেশী বেসরকারি দায় যেখানে ১৯.৬৮ বিলিয়ন ডলার ছিল তা জুন ’২২ এ এসে দাঁড়িয়েছে ২৫.৯৫ বিলিয়ন ডলারে। এরমধ্যে বড় অংশই হলো স্বল্পমেয়াদি ঋণ। সেপ্টেম্বর ’২১ এর ১২.৫২ বিলিয়ন ডলার থেকে ৯ মাসে স্বল্পমেয়াদি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭.৭৫ বিলিয়ন ডলারে। এর মধ্যে বায়ার্স ক্রেডিট রয়েছে ৯.৭৭ বিলিয়ন ডলার। দীর্ঘমেয়াদি বেসরকারি ঋণ বিবেচ্য ৯ মাসে ৯.১৫ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮.১৯ বিলিয়ন ডলারে।
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিদেশী ঋণ লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। ৯ মাস আগের ৮৪.৭৪ বিলিয়ন ডলারের বিদেশী ঋণ পরের তিন মাস শেষে দাঁড়ায় ৯০.৭৯ বিলিয়ন ডলারে। এরপরের ৩ মাসে আরো বেড়ে দাঁড়ায় ৯৩.২৩ বিলিয়ন ডলারে। আর সবশেষে বিদেশী ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৯৪.৫০ বিলিয়ন ডলার।
গত কয়েক মাসে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম ১০ শতাংশ বেশি বৃদ্ধি পাওয়ায় টাকার অঙ্কে বিদেশী দায়ে বড় ধরনের উল্লম্ফন ঘটেছে। এর সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বেসরকারি বিদেশী ঋণের ক্ষেত্রে। বেসরকারি বিদেশী ঋণের বড় অংশই স্বল্পমেয়াদি। ৪-৫ শতাংশ সুদে এ ঋণ বিদেশী ব্যাংক থেকে নেয়া হলেও বিনিময় হারে ডলারের বাজার দর ২০ শতাংশের বেশি বেড়ে যাওয়ায় সুদের কার্যকর হার ২৫ শতাংশ অনেক ক্ষেত্রে ছাড়িয়ে যাচ্ছে, যা অনেক ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের জন্য দুর্বহ হয়ে উঠতে পারে।
দেশে উন্নয়নের জোয়ারের ঢাক-ঢোল পেটানো হলেও আমাদের দেশের বৈদেশিক ঋণ এখন গোদের ওপর বিষফোঁড়া হয়ে দেখা দিয়েছে। এমনকি অর্থনীতিবিদরা বৈদেশিক ঋণকে অস্বাভাবিক বলেই মনে করছেন। কারণ, ইতোমধ্যেই বৈদেশিক ঋণ যে পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে তা কোনভাবেই পরিশোধ করার সামর্থ্য আমাদের অর্থনীতির নেই। তাই অপ্রয়োজনে ঋণ নয় বরং সকল ক্ষেত্রেই কৃচ্ছ্রতা সাধন জরুরি। অন্যথায় ঋণ বাহুল্য বা বোঝার কারণেই আমাদের অর্থনীতিতে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।
সোর্স : দৈনিক সংগ্রাম