স্থানীয় রিফাইনারিদের কাছ থেকে বিনা টেন্ডারে আরো ১ কোটি ৬৫ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কিনবে সরকার। ভর্তুকি মূল্যে এক কোটি পরিবারের কাছে বিক্রির জন্য এ তেল কিনবে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। গতকাল বুধবার সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠকে টিসিবি কর্তৃক সয়াবিন তেল কেনার তিনটি পৃথক প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। এর আগে গত সপ্তাহে টিসিবি কর্তৃক পাঁচটি পৃথক প্রস্তাবে সোয়া দুই কোটি লিটার সয়াবিন তেল কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছিল।
সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত ক্রয় কমিটির ভার্চুয়াল সভায় সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো: আব্দুল বারিক এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে ১০টি ক্রয়প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে এক হাজার ৭২৬ কোটি ৮ লাখ টাকা।
তিনি জানান, বৈঠকে স্থানীয় তিন রিফাইনারির কাছ থেকে একই দরে ৫৫ লাখ লিটার করে এক কোটি ৬৫ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার তিনটি পৃথক প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ জন্য প্রতি রিফাইনারকে দেয়া হবে ১০১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। রিফাইনারি প্রতিষ্ঠান তিনটি হচ্ছে- সুপার অয়েল রিফাইনারি লিমিটেড, সিটি এডিবল অয়েল লিমিটেড ও মেঘনা এডিবল অয়েল রিফাইনারি লিমিটেড।
তিনি জানান, বৈঠকে আগামী ২০২৩ সালের শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণের দ্বিতীয় প্যাকেজের আওতায় ইবতেদায়ি (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণী), মাধ্যমিক (বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন) ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণী, শিক্ষক নির্দেশিকা এবং কারিগরি (ট্রেড বই) স্তরের ১১ কোটি ২০ লাখ এক হাজার ৪৭৪টি বই মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ১৮২টি লটে এসব বই কেনা হবে। এতে ব্যয় হবে ৪৮৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
অতিরিক্ত সচিব জানান, রূপপুর গ্রিনসিটি আবাসিক কমপ্লেক্সে এক্সটারনাল ইলেক্ট্রিফিকেশন ওয়ার্কস অব ১৫০০ এসএফটি ফোর ইউনিটস টুয়েনটি স্টোরেড টু বিল্ডিংয়ের ক্রয়প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এ কাজটি পেয়েছে মাজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। এতে ব্যয় হবে ৪১ কোটি ৮৬ লাখ ৯২ হাজার টাকা।
তিনি জানান, সভায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) কর্তৃক মরক্কোর ওসিপি এসএ থেকে ৮ম লটে ৩০ হাজার টন টিএসপি সার আমদানির একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ২২১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।
অতিরিক্ত সচিব জানান, বৈঠকে রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে কাতারের মুনতাজাত থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম লটে ইউরিয়া সার আমদানির দু’টি পৃথক প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে চতুর্থ লটে ৩০ হাজার টন ব্যাগড প্রিল্ড ইউরিয়া সার আমদানিতে ব্যয় হবে ২০৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। আর পঞ্চম লটে ৩০ হাজার টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানিতে ব্যয় হবে ২০৯ কোটি ১০ লাখ টাকা।
তিনি জানান, সভায় কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলায় ঘোড়া উতরা নদীর ওপর এক হাজার দুই মিটার ব্রিজ নির্মাণ পূর্তকাজের ঠিকাদার নিয়োগের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। দরপত্রে অংশ নিয়ে ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ১৪৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।
অতিরিক্ত সচিব জানান, সভায় জামালপুর জেলার সদর উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদীর উপর ৬০৬ মিটার ব্রিজ নির্মাণের পূর্তকাজের ঠিকাদার নিয়োগের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। দরপত্রে অংশ নিয়ে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ১০৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা।
তিনি জানান, ক্রয় কমিটির বৈঠকের আগে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ২টি প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়। এর মধ্যে একটি ‘ঢাকা জেলার দোহার উপজেলাধীন মাঝিরচর থেকে নারিশাবাজার হয়ে মোকসেদপুর পর্যন্ত নদী ড্রেজিং ও বাম তীর সংরক্ষণ কাজ সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে করার প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া হয়। অপর প্রস্তাবটি হচ্ছে- কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলাধীন নির্মিতব্য মিঠামইন সেনা স্থাপনার ভূমি সমতল উঁচুকরণ, ওয়েভ প্রটেকশন ও তীর প্রতিরক্ষা কাজ সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
সোর্স : নয়া দিগন্ত