ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। বাড়ছে মৃত্যুও। একদিনে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এ বছর ডেঙ্গুতে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪৩১ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক জরিপ বলছে, ডেঙ্গু ঝুঁকিতে রাজধানীর ২৭টি ওয়ার্ড। শতাংশ বিবেচনায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার ১৩ শতাংশ এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রায় ১২ শতাংশ বাড়িতে ডেঙ্গুর লার্ভা রয়েছে। সারা দেশের পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের নিয়মিত ডেঙ্গু বিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি মাসেই মারা গেছেন ২৫ জন। যা আগস্ট মাসে ছিল ১১ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৪৩১ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
নতুন ডেঙ্গু রোগী নিয়ে সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৫৫৭ জন। চলতি মাসে ডেঙ্গু রোগী ও মৃত্যু আগস্টে মাসের চেয়ে দ্বিগুণ বেড়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৪৩১ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৩২৮ জন এবং ঢাকার বাইরে ১০৩ জন।
নতুন ৪৩১ জনসহ বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ভর্তি থাকা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৫৭ জনে। ঢাকার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১ হাজার ১৯০ জন এবং ঢাকার বাইরে ৩৬৭ জন। এতে আরও বলা হয়েছে, চলতি বছরের ১লা জানুয়ারি থেকে ২১শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হাসপাতালে সর্বমোট রোগী ভর্তি ছিলেন ১২ হাজার ৪৩৮ জন। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ১০ হাজার ৮৩৫ জন। এই বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গুতে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ঢাকার ২৭টি ওয়ার্ড: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক জরিপে দেখা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১৩টি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১৪টি ওয়ার্ড ডেঙ্গুতে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। শতাংশ বিবেচনায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার ১৩ শতাংশ বাড়িতে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রায় ১২ শতাংশ বাড়িতে এ লার্ভা পাওয়া যায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরে অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ডিএনসিসি ৪০ ওয়ার্ডে ৪৮টি সাইট এবং ডিএসসিসি’র ৫৮টি ওয়ার্ডে ৬২টি সাইটসহ মোট ১১০টি সাইটে ৩ হাজার ১৫০টি বাড়িতে সার্ভে পরিচালনা করা হয়েছে। ২১টি টিমের মাধ্যমে ১০ দিনব্যাপী এই স্টাডি পরিচালনা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
প্রতিটি টিম অন্তত ১৫টি সাইট সার্ভে করে। জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, ৩ হাজার ১৫০টি বাড়িতে পরিচালিত এই সার্ভেতে ২ হাজার ৮২৯টি বাড়িতেই নমুনা পরীক্ষায় ফলাফল নেগেটিভ এসেছে, আর ১৫৯টি বাড়িতে ডেঙ্গু ফলাফল পজেটিভ এসেছে। মোট পজেটিভ আসা বাড়িগুলোর মধ্যে ৬৩টি বাড়ি ডিএনসিসিতে এবং ৯৬টি বাড়ি ডিএসসিসিতে অবস্থিত। শতাংশ বিবেচনায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার ১৩ শতাংশ বাড়িতে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রায় ১২ শতাংশ বাড়িতে এ লার্ভা পাওয়া যায়। দুই সিটি করপোরেশন মিলিয়ে দেখা যায় ১০ শতাংশ বাড়িতেই এই লার্ভা পাওয়া গেছে।
জরিপে দেখা গেছে, দুই সিটিতে পড়ে থাকা বা ফেলে রাখা ভেজা পাত্রে সবচেয়ে বেশি মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও ঘর বা ভবনের মেঝে প্লাস্টিকের ড্রাম বা প্লাস্টিকের নানা ধরনের পাত্রেও এই লার্ভা পাওয়া যায়। ঢাকা দক্ষিণ করপোরেশনের ২৬ শতাংশ এ ধরনের পাত্রে ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২২ শতাংশ পাত্রে মশার এ লার্ভা পাওয়া গেছে। ১১ থেকে ২৩শে আগস্ট দুই করপোরেশনে এই জরিপ হয়েছে। জরিপকারীরা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৬২টি ওয়ার্ডে তারা মোট ১ হাজার ৮৩০টি বাড়ি পরীক্ষা করেছেন। এসব বাড়িতে তারা মোট ১ হাজার ৩৩৭টি ভেজা পাত্র দেখেছিলেন। তারা প্রায় ১২ শতাংশ বাড়িতে মশার লার্তা পেয়েছেন। অন্যদিকে প্রায় ২২ শতাংশ ভেজা পাত্রে মশার লার্তা ছিল। মশার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে ৮ নম্বর ওয়ার্ড (কমলাপুর ও মতিঝিল), ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড (নবাবপুর ও বংশাল) এবং ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে ওয়ারী ও নারিন্দা)।
সোর্স : মানব জমিন