স্টাফ রিপোর্টার: ডিমের বাজারে ফের আগুন। মাত্র এক দিনের ব্যবধানে ডজনপ্রতি ডিমের দাম বেড়েছে ১৫-২০ টাকা। বিক্রেতাদের দাবি, মুরগির ফিডের মূল্যবৃদ্ধির কারণে উৎপাদন পর্যায়ে ডিমের দাম বাড়ানো হয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। তবে খামারিদের দাবি, সিন্ডিকেট করে এই দাম বাড়ানো হয়েছে। এর আগে ভোক্তা অধিকার জানিয়েছিল, সিন্ডিকেট চিহ্নিত ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু ফল হলো উল্টো।
ডিমের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে প্রতি ডজন ডিম ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, গলির ছোট দোকানে তা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়। যা এক দিন আগেও ছিল ১২০ টাকা। এক মাস আগে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর হু হু করে ডিমের দাম বাড়তে থাকে। সরকারের নানা উদ্যোগে দাম আবার নেমে আসে। কিন্তু আবারও খুচরা বাজারে ডিমের দাম বাড়ায় প্রভাব পড়েছে জনজীবনে। রাজধানীর কাওরান বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা হয়।
সেলিম হাসান নামের এক ক্রেতা বলেন, আমি গত পরশু ৪০ টাকা হালি দরে ডিম কিনেছি। যা গতকাল ৪৫ টাকা হালিতে বিক্রি হচ্ছে। এটা একধরনের সিন্ডিকেট। এ বিষয়ে সরকারের নজরদারি হওয়া উচিত। তা হলেই আগের মূল্যে ফিরে যাওয়া সম্ভব বলে মনে করছি।
শরিফ মিয়া নামের এক বিক্রেতা বলেন, হঠাৎ করে খামারিরা ডিমের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। বিদ্যুৎ ঠিক মতো না থাকায় খামারে মুরগী মরে যাচ্ছে। তারা বলছেন, খাবারের দাম বেড়েছে। দাম নাকি এখনো কমেনি। তাদের পোষাচ্ছে না। তাই দাম বাড়তি। অপরদিকে, খামারিরা দায়ী করছেন সিন্ডিকেটকে। তারা বলেন, মধ্যস্বত্বভোগীরা মূলত ডিমের বাজার অস্থিতিশীল করে রেখেছেন। আমাদের কাছ থেকে কম দামে কিনে তারা বেশি দামে বিক্রি করছেন।
বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুচরা বাজারে হাঁসের ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, আর ডজন ১৯৫ থেকে ২০০ টাকা। দেশি মুরগির ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা, আর ডজন ২০০ থেকে ২০৫ টাকা। খুচরা বাজারের ডিম বিক্রেতারা জানান, তারা পাইকারি বাজার থেকে শ (১০০) হিসেবে ডিম কেনেন। পাইকারি বাজারে দাম বাড়ায় খুচরা বাজারেও প্রভাব পড়েছে।
তারা জানান, পাইকারি বাজারে গত ১২ সেপ্টেম্বর ১০০ ডিমের দাম ছিল ৯৬০ টাকা। ১৩ সেপ্টেম্বর তা বেড়ে হয় ১০০০ টাকা, ১৪ সেপ্টেম্বর ১০৫০ টাকা। এরপর প্রতিদিন ১০ টাকা করে ওঠানামা করেছে। গতকাল তারা একশ ডিম কিনেছেন ১ হাজার ৬০ টাকা করে। এর সঙ্গে ভাড়া যোগ হয়ে বেড়েছে ডিমের দাম।
পলাশী বাজারে ডিম বিক্রেতা মো. কাওছার বলেন, ডিমের দাম একবারে বাড়েনি, ধাপে ধাপে বেড়েছে। এক সপ্তাহ আগে যে ডিম ৯৫০ থেকে ৯৬০ টাকা দিয়ে কিনেছি, এখন প্রতি ১০০ ডিমে আগের তুলনায় ১০০ টাকার বেশি দাম বেড়েছে। এর ফলে ডিমের হালিতে চার-পাঁচ টাকা বেড়েছে। কি কারণে দাম বেড়েছে, তা আড়তদার বলতে পারবে।
রাজধানীর তেজগাঁও স্টেশন বাজারের ডিমের আড়তদার ইউসুফ মিয়া বলেন, খাবারের (ফিড) দাম বাড়ায় মুরগির দাম যেমন বেড়েছে, ডিমের দামও তেমনি বেড়েছে। তার কথার সঙ্গে একমত হাতিরপুল বাজারের মুরগির দোকানদার মো. দুলাল। তিনি বলেন, মুরগির খাবারের দাম বাড়ায় ডিমের দামও বাড়ছে।
তিনি বলেন, তীর কোম্পানির ২৫ কেজির এক বস্তা খাবারের (ফিড) দাম তিন মাস আগে ছিল ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা। সেটা বাড়তে বাড়তে এখন ১১০০ টাকা হয়েছে। এর ফলে মুরগির পাশাপাশি ডিমের দামও বেড়েছে।
গত মাসের ২৩ আগস্ট জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেছিলেন, ডিম নিয়ে যে সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে সেটা স্পষ্ট। দাম নিয়ে যারা কারসাজি করেছে সে সব অসাধুদের খুঁজে বের করব। এর পেছনে কে বা কারা আছেন তাদের কালোহাত যেন আর কখনো না বাড়তে পারে সেই ব্যবস্থাও নেবো।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, দু-একজন ব্যবসায়ীর জন্য পুরো খাত ভূগবে সেটা আমরা হতে দেবো না। ডিম নিয়ে এমন অস্বাভাবিক ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি হতে দেওয়া হবে না। এটা আমরা ফাইন্ড আউট করবো। এমন নির্দেশনাও ওপর মহল থেকে আছে। এবার ছাড়বো না। অভিযানের মাধ্যমে আমরা যেসব তথ্য পেয়েছি, সেগুলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন আকারে জমা দিয়েছি। এরপর যথাযথ কর্তৃপক্ষ এর ব্যবস্থা নেবেন।
তিনি জানান, বিগত সময় তেল সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবেদন সাপেক্ষে প্রতিযোগিতা কমিশন বিভিন্ন কোম্পানিকে আটটি মামলা করেছে। যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে।
সফিকুজ্জামান বলেন, যখন জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে তখন একটি ডিমে ২০-৩০ পয়সা খরচ বেড়েছে। কিন্তু সিন্ডিকেট করে ডিমের দাম এক রাতে তিন টাকা বাড়ানো হয়েছে। এটা একদম অস্বাভাবিক। সরকার বিভিন্ন দিকে ব্যবসায়ীদের সুরক্ষা দিচ্ছে। এখন যদি আমদানি ওপেন করে দেওয়া হয় অনেকে পথে বসবেন। কিন্তু আপনারা সিন্ডিকেট করছেন। সে জন্য জনগণের কাছে সরকার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। কোম্পানি ডিমের দাম অবৈধভাবে বাড়িয়ে মূল্য নির্ধারণ করেছে। আড়তদাররাও একই কাজ করেছেন।
এ সময় কাজী ফার্মের প্রসঙ্গ টেনে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, পরিবহন সমস্যা হতে পারে। কিন্তু কয়েকদিনে তাদের ডিমের দাম তিন টাকা বেড়েছে। এ বাড়তি দামে কাজী ফার্মের যে দরদাতা সেই ফয়সালকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছিল। তিনি আসেননি।
সোর্স : দৈনিক সংগ্রাম