এবার এক শিক্ষার্থীর গায়ে গরম চা ঢেলে নির্যাতন এবং তার হাত মচকে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আয়শা ইসলাম মীমের বিরুদ্ধে। অবৈধ শিক্ষার্থীরা পথ আগলে টেবিল রাখায় এর প্রতিবাদ করায় ঐশী নামে এই শিক্ষার্থীকে নির্যাতন করা হয়। অভিযুক্ত আয়শা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রীভার অনুসারী। সূত্র জানায়, ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের পর থেকে বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না। গত সোমবার সন্ধ্যায় ইডেন কলেজের শহীদ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রীনিবাসের ৩১৩ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। গত মে মাসে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয়। এরপর থেকেই কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ অন্য নেত্রীদের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ ওঠে। এর আগে গত ২০শে আগস্ট ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে না যাওয়ার কারণে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা একটি ছাত্রীনিবাসের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের কয়েক শিক্ষার্থীকে তাদের রুম থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দেন। এই ঘটনায় তামান্নার হুমকি দেয়ার একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। সেখানে ছাত্রীদের তামান্না ?‘এক পায়ে পাড়া দিমু, আরেক পা টাইনা ধইরা ছিঁড়া ফেলমু’ বলে শাসাতে শোনা গেছে।
অডিও ফাঁস হওয়ার ঘটনায় চাপের মুখে পড়ে ক্ষমা চাইলেও পুষে রাখা রাগ কমেনি রিভার।
এর তিন দিন পরই নতুন বিতর্কে জড়ান এই নেত্রী। এসময় দুই ছাত্রীকে ৭ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন ও নগ্ন করে ভিডিও ধারণ করে ভাইরাল করার হুমকির অভিযোগ উঠে এই নেত্রীর বিরুদ্ধে। বিতর্কের তালিকায় নতুন সংযোজন তামান্নার অনুসারী শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আয়শা ইসলাম মীম। তিনি ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক ও বর্তমানে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-দপ্তর সম্পাদক দেলওয়ার শাহজাদার স্ত্রী বলে জানা গেছে। এবারের শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনার সূত্রপাত, রিডিং রুমে অবৈধ ছাত্রীদের টেবিল রাখা নিয়ে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জানান, সোমবার সকালে ইডেন কলেজের শহীদ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রীনিবাসের রিডিং রুমে পড়তে যান কলেজ শিক্ষার্থী ঐশী। রিডিং রুমের সামনে গিয়ে দেখেন প্রবেশমুখে একটি টেবিল বসিয়েছেন অন্য একটি মহিলা কলেজের অবৈধ কয়েকজন ছাত্রী। যারা ছাত্রলীগ নেত্রী মীমের ছত্রছায়ায় ছাত্রীনিবাসে থাকে। প্রবেশমুখে টেবিল বসানোর কারণে ভেতরে ঢুকতে অন্য ছাত্রীদের সমস্যা হচ্ছিল। ঐশী ওই ছাত্রীদের টেবিল সরাতে বলেন। কিন্তু তারা প্রথমবার তার কথার গুরুত্ব দেয়নি।
এ সময় ভুক্তভোগী ঐশী তাদের বলেন, আপনারা অবৈধ হওয়ার পরও টেবিল সরাতে বললে সরান না। হলে থাকেন। এটা কেন? এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে ওই শিক্ষার্থী তাকে ‘দেখে নেয়া’র হুমকি দিয়ে চলে যান। সন্ধ্যায় শহীদ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রীনিবাসের ৩১৩ নম্বর কক্ষে বসে চা পান করছিলেন প্রতিবাদ করা শিক্ষার্থী ঐশী। এ সময় ওই ছাত্রীদের নিয়ে তার কক্ষে আসেন অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী আয়শা। কেন তার অনুসারী মেয়েদের সঙ্গে তর্কে জড়ালো এ নিয়ে ঐশীকে গালাগাল করতে থাকেন তিনি। এক পর্যায়ে ঐশীর হাতে থাকা গরম চা তারই গায়ে ঢেলে দেন। এবং তার একটি হাত মুচড়ে ধরেন। এতে তিনি গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন বলে জানান। কিছুক্ষণ পর ওই ছাত্রলীগ নেত্রী আবার ঐশীর কক্ষে আসেন। এ ঘটনা বাইরে জানাজানি হলে ঐশীকে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়ে সে চলে যায়।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ঐশী বলেন, মীম আপুর বহিরাগত মেয়েরা রিডিং রুমে যাতায়াতের পথে টেবিল রেখে সেখানেই পড়তো। তাদের বলেছি আপু, আমরা এখান দিয়ে যাওয়া-আসা করি, টেবিল সরিয়ে রাখলে ভালো হয়। এরপরও তারা সরায়নি। দ্বিতীয়বার বলার পর তারা চেঁচামিচি শুরু করলে আমি বলি, অবৈধ মেয়ে হয়ে এত কথা বলেন কেন? এটা শুনে তারা আমাকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়। এরপর সন্ধ্যায় চা খাচ্ছিলাম। আয়শা আপু আমার রুমে এসে গায়ের ওপর গরম চা ঢেলে দিয়ে রুমে সবাইকে বের হয়ে যেতে বলে। আমি ভয় পেয়ে কাউকে বের হতে দেইনি। পরে তিনি আমার হাত মুচড়ে ধরেন। এতে আমার হাত মচকে যায়। শিক্ষকদের বিষয়টি জানিয়েছি। তারা বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আয়শা ইসলাম মীম মানবজমিনকে বলেন, এরকম কিছু ঘটেনি। বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গেছে। কীভাবে মীমাংসা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কলেজ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেন। এ বিষয়ে জানতে ইডেন কলেজের অধ্যক্ষ সুপ্রিয়া ভট্টাচার্যকে ফোন দিলে তার ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
সোর্স : মানব জমিন