বিশ্ববাজারে ভোজ্য তেলের দাম কমা অব্যাহত থাকলেও দেশের বাজারে তার সুফল মিলছে না। ভোক্তাদেরকে এখনো বেশি দামেই ভোজ্য তেল কিনতে হচ্ছে। সরকারি তদারকি সংস্থাগুলো বলছে, তেলের দাম সমন্বয় করার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এখন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের কাজ চলছে। কিছুদিনের মধ্যেই ভোক্তারা এর সুফল পাবেন। অন্যদিকে ডলারের বিনিময়মূল্য স্থিতিশীল না হওয়ায় দেশের বাজারে এর সুফল মিলছে না বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া তাদের দাবি এখনো ১৭০০ ডলার দিয়েই তেল আমদানি করতে হচ্ছে। এদিকে ভোক্তাদের অভিযোগ, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বাজারে তেলের দাম বাড়িয়ে দেন বিক্রেতারা। কিন্তু কমলে দীর্ঘ সময়েও তার প্রভাব পড়ে না। অর্থাৎ দাম বাড়লে শতভাগ মাশুল দিতে হয় ভোক্তাকে, কিন্তু কমলে তার সুফল পান না।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি বছরের মার্চে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত পাম অয়েলের সর্বোচ্চ দাম ওঠে ১ হাজার ৭৭৭ ডলার। অন্যদিকে সয়াবিনের দাম মার্চে ওঠে ১ হাজার ৯৫৭ ডলারে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দেশে বোতলজাত সয়াবিনের দাম বাড়িয়ে ২০৫ টাকায় নির্ধারণ করে মিল মালিকদের এসোসিয়েশন ও সরকার।
তবে পাঁচ মাসের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে তেলের দাম প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। গত বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়ার বাজারে প্রতি টন পাম তেল ৭ হাজার ৭৫৭ রিঙ্গিত থেকে নেমে এসেছে ৩ হাজার ৭৫৯ রিঙ্গিতে। দেশের পাইকারি বাজারে এর প্রভাবে দাম কমলেও তার কোনো প্রভাব নেই খুচরা বাজারে। পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে প্রতি লিটার তেল ১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ টাকায়। কিন্তু তেল বিপণনকারী কোম্পানিগুলো দাম সমন্বয় না করার কারণে খুচরা বাজারে তাদের আগের নির্ধারিত দাম প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ১৭৫ টাকা এবং খোলা পাম তেল ১৪৫ টাকায় বিক্রি করছে। এ ব্যাপারে ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের সদস্য শাহ মো. আবু রায়হান আলবেরুনী মানবজমিনকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের দাম কমা অব্যাহত আছে। আগের তুলনায় অনেক কমেছেও। তবে এখানে মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ডলার।
কিন্তু দাম কমানোর প্রক্রিয়া আমরা শুরু করেছি। এখন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছি। দাম সমন্বয় করা হবে। সহসাই মানুষ এর সুবিধা পাবে বলে আশা করছি। তিনি বলেন, কতো টাকা কমবে এখনই বলা যাচ্ছে না, তবে এখন যে তেলের দাম ১৮০ টাকা সেটি হয়তো ১৭০ টাকা হবে। আর যেটির দাম ১৭০ টাকা সেটি ১৬২ টাকা হতে পারে। তবে চূড়ান্ত কিছু এখনই বলতে পারবো না। এখন বাজারে বিক্রি হওয়া তেল তো দেড় বা দুই মাস আগের আমদানি করা। তখন তো ডলার নিয়ে সমস্যা ছিল না। সেক্ষেত্রে তেলের দাম কমানোর ক্ষেত্রে ডলারের সমস্যার কথা বলা হচ্ছে কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেক সময় তেল আমদানি করার পর পেমেন্ট দিতে হয়। এ জন্য অনেক সময় সমস্যা হয়ে থাকে। আমরা তাদের আমদানি তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছি। সকল তথ্য যাচাই করেই সিদ্ধান্ত নেবো। এ বিষয়ে ভোজ্য তেল বিপণনকারী কোম্পানি টিকে গ্রুপের পরিচালক মো. শফিউল আতহার তাসলিম বলেন, দাম বাড়ানো বা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে মূলত ট্যারিফ কমিশন। তারা কাজ শুরু করেছে।
এখানে বিচার বিশ্লেষণ করার একটি ফর্মুলা আছে; কোনো পণ্য কখন আসলো, কতো টাকায় কেনা হলো, সেটা দেখতে হবে। তিনি বলেন, গত এক সপ্তাহ আগেও ভোজ্য তেলের যে চালান এসেছে সেগুলো ১৭৮০ ডলারে কেনা। এগুলো বাজারে ছাড়লে বর্তমানের চেয়ে আরও ৩০ টাকা বেড়ে যাওয়ার কথা। কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়লে সঙ্গে সঙ্গে দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়। কিন্তু দাম কমলে আমাদের ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাত দেখায়। সরকার যখন তেলের দাম ৫ থেকে ৬ টাকা কমিয়েছিল তখনো কিন্তু বিশ্ববাজারে তেলের দাম কম ছিল। কিন্তু ডলারের অজুহাত দেখিয়ে তেলের দাম আবারো বাড়ানো হয়েছিল। তিনি বলেন, সরকারি তদারকি সংস্থাগুলোকে একটিভ রোল প্লে করতে হবে। ব্যবসায়ীদের অজুহাত এনালাইসিস করে দেখতে হবে। তাহলে ভোক্তারা এর সুফল পাবে।
সোর্স : মানব জমিন