গুমের অভিযোগ তদন্তে বাংলাদেশ সফরে আসতে চায় গুমবিষয়ক জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ। গতকাল মঙ্গলবার জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের বার্ষিক প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনায় গ্রুপের প্রধান লুসিয়ানকো হাজান বলেন, ওয়ার্কিং গ্রুপের ১২৫তম অধিবেশনে বাংলাদেশে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অধিকারসহ মানবাধিকার সংগঠনগুলোর ওপর অন্যায়ভাবে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
লুসিয়ানকো হাজান আরো বলেন, গত মাসে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল বাশেলেত বাংলাদেশ সফর শেষে যে সুপারিশগুলো করেছেন, সেগুলো বাংলাদেশের অনুসরণ করা উচিত।
তিনি বলেন, গুমবিষয়ক জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ বাংলাদেশ সফরের অনুমতি চেয়ে সরকারকে অনুরোধ করেছে। ওই অনুমতি দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
মানবাধিকার পরিষদে বিশ্বজুড়ে গুমের অভিযোগ নিয়ে ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছে। সেই প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনার সময় বেসরকারি কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থার প্রতিনিধিরা তাঁদের বক্তব্যে বাংলাদেশের নাম উল্লেখ করেছেন। আসিয়ান লিগ্যাল রিসোর্স সেন্টারের প্রতিনিধি এনজিও হিসেবে অধিকারের সনদ নবায়ন না করার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, মিশেল বাশেলেতের সফরের পর মানবাধিকারকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে।
দি অর্গানাইজেশন ফর পোভার্টি অ্যালিভেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের প্রতিনিধি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় গুম এক রাজনৈতিক বাস্তবতা। গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রতিবেদনে গুমের অভিযোগের বিষয়ে বাংলাদেশের তথ্য দেওয়ার প্রশংসা করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশের এখনো অনেক কাজ বাকি আছে।
এর আগে রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশের একজন মানবাধিকার পরিষদকে বলেন, ‘আমরা ওয়ার্কিং গ্রুপের রিপোর্ট আমলে নিয়েছি। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বাধ্যবাধকতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা ওয়ার্কিং গ্রুপের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে সম্পৃক্ত আছি। কথিত গুমের অভিযোগগুলোর প্রায় সব কটির ব্যাপারেই আমরা তথ্য দিয়েছি। ’
বাংলাদেশের প্রতিনিধি জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদকে বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে কথিত গুমের শিকার অনেকে ফিরে এসেছেন। তবে বাংলাদেশ সরকার যেকোনো নিখোঁজের ঘটনায় নিখোঁজ ব্যক্তিকে খুঁজে বের করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। ’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ভুয়া পরিচয়ে অনেকে অপহরণ করছে। সরকার আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে কোনো ধরনের ছাড় না দেওয়ার নীতি অনুসরণ করছে। তবে একটি মহল সরকারকে হেয় এবং সরকারের ইতিবাচক অর্জনগুলোকে ক্ষুণ্ন করতে সব নিখোঁজের ঘটনাকে গুম হিসেবে আখ্যায়িত করছে। ’
মানবাধিকার পরিষদে গতকালের আলোচনায় প্রায় সব পশ্চিমা দেশ গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। ওই দেশগুলো গুমের যেকোনো অভিযোগ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। তবে কোনো কোনো রাষ্ট্র গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। রাশিয়া ইউক্রেনে গুমের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। চীন গুয়ানতানামো বন্দিশিবির নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাঠামো ব্যবহার করার নিন্দা জানিয়েছে কিউবা। উত্তর কোরিয়া জাতিসংঘ কাঠামোকে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকে সম্মান জানানো এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার ওপর জোর দিয়েছে। তুরস্কের প্রতিনিধি তাঁর দেশে গুমের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। আফগানিস্তানের প্রতিনিধি তাঁর দেশে তালেবানের একের পর এক গুমের অভিযোগ তুলে ধরেন।
গুমবিষয়ক জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপের সভাপতি বলেন, এ বছর গুমবিরোধী জাতিসংঘ সনদের ৩০তম বার্ষিকী। গুম থেকে সুরক্ষার ব্যাপারে রাষ্ট্রগুলোর অঙ্গীকার সত্ত্বেও ভয়ংকর এই প্রবণতা অব্যাহত আছে।
সোর্স : কালের কন্ঠ