লনা ব্যুরো : আধুনিক যুগের আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে সর্বক্ষেত্রে। তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে করেছে অতি-সহজলভ্য ও আরামদায়ক। জীবনে এনেছে আমূল পরিবর্তন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অন্যতম উপহার হলো স্মার্ট মোবাইল ফোন। বাজারে বিভিন্ন ব্যান্ডের স্মার্ট মোবাইল ফোন আমাদের আধুনিক জীবনের প্রতিটি স্তরকে অতি সহজলভ্য করে তুলেছে। তবে মোবাইল ব্যবহারে সুফল বয়ে আনলেও সম্প্রতি অতিমাত্রায় মোবাইল আসক্তির বেড়াজালে বন্দী হয়ে পড়েছে নারীসহ শিশুরা।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, কোমলমতি শিশুদের এই মোবাইল আসক্তি একদিকে যেমন মেধা ধ্বংস করছে, তেমনি আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পাচ্ছে কর্মস্পৃহা। মাত্রারিক্ত হারে মোবাইল ফোন ব্যবহারে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ।
নগরীর একাধিক এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের সাথে কথা বলা জানা গেছে, এক সময় রূপকথার গল্প শুনিয়ে শিশুদের খাওয়ানো কিংবা ঘুম পাড়ানো আজ বিলুপ্ত। দিন যতই গড়াচ্ছে, ততই শিশুসহ উঠতি বয়সী তরুণেরা নানা গেইম আর কার্টুনের বেড়াজালের পরে মোবাইল ও ইলেকট্রনিক ডিভাইসে অতিমাত্রায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। একই সাথে আসক্তি বাড়ছে নারীদেরও। দেড় হতে দুই বছরের শিশুরা প্রাথমিক পর্যায়ে অতি সহজে মোবাইল ফোনের ভেতর ইউটিউব বা গুগুলে ঢুকে কার্টুন বা গেইম বের করে অভিভাবকের বাহ্ বাহ্ কুড়াচ্ছে, আর পরবর্তীতে এই বাহ্ বাহ্ পরিণত হচ্ছে চরম আসক্তিতে। ক্রমশই ধাপে ধাপে বাড়ছে আসক্তির মাত্রা।
অভিভাবক লামইয়া আক্তার জানান, আমার বাচ্চার সকালটা শুরু হয় মোবাইল দিয়ে। এটা কোনোভাবেই কন্ট্রোল করতে পারছি না।
মোবাইল না দিলে কিছু খেতে চায় না, কান্নাকাটি করে। তখন বাধ্য হয়ে ফোন দিতে হয়। কি করবো? ক্রমশই মোবাইলের প্রতি বাচ্চার আসক্তি বাড়ছে। ফোন হাতে দিলে খায়, না দিলে ঝামেলা করে। জানি এটা বাচ্চাদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতির তবুও করার কিছু নেই।
স্কুল ছাত্র কৌশিক জানায়, কোচিং, ব্যাচ আর বাসার টিচারের পড়াশুনার চাপে বন্ধুদের সাথে বিকালে মাঠে গিয়ে খেলার সময় হাতে থাকে না। সকালে স্কুল, স্কুল হতে ফিরতে না ফেরতে বিকালে কোচিং আবার সন্ধ্যার পর বাসার টিচার, সময় কোথায়? তাই যখনি একটু সময় পাই মোবাইলে গেইম খেলি বা মুভি দেখি।
সাবেক কাউন্সিলর এডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন হেলাল জানান, মোবাইল আমাদের জীবনকে অতি আরামদায়ক করে তুলেছে, বিশেষ করে যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে। তাছাড়া সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম এই ক্ষুদ্র ডিভাইসটির ভূমিকা অনিস্বীকার্য। তবে বর্তমান সময়টিতে শিশুসহ তরুণেরা যেভাবে মোবাইল ডিভাইসে আসক্ত হচ্ছে তা অনেকটাই সামাজিক বন্ধন ছিন্ন করে তুলছে। গেইমের নেশা তরুণদের বিপথে নিয়ে যাচ্ছে। এই আসক্তি হতে বেরিয়ে আসা উচিৎ বলে আমি মনে করি, নইলে আগামী প্রজন্ম ধ্বংসের দিকে ধাবিত হবে।
শিশুদের মোবাইল ফোন আসক্তি বিষয়ে নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞদের সূত্রে জানা যায়, এটি শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। মোবাইল ফোন থেকে নির্গত রশ্মি শিশুদের দৃষ্টিশক্তির ভীষণ ক্ষতি করে। যেসব শিশু দৈনিক পাঁচ-ছয় ঘণ্টা মোবাইল ফোনে ভিডিও গেমস খেলে, খুব অল্পবয়সে তাদের চোখের সমস্যা হবে। সেদিন খুব বেশি দূরে নয়, যখন মোবাইল ফোনকে সিগারেটের চেয়েও বেশি ক্ষতিকর হিসেবে চিহ্নিত করা হবে।
সোর্স : দৈনিক সংগ্রাম