দেশের বিভিন্ন স্থানে ৩৪টি বাফার সার গুদাম নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল ২০১৮ সালে। এই প্রকল্পটি নির্মাণকাল ধরা হয় ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ৯৮৩ কোটি চার লাখ টাকা। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গুদামগুলো নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে, এখন প্রকল্প ব্যয় বেড়ে হয়েছে দুই হাজার ৪৬৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। শতকরা হিসেবে যা ২৪ শতাংশ। আর টাকার অঙ্কে ব্যয় বৃদ্ধি ৪৮২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, দেশে সারের মজুদ সুনিশ্চিত করা, আপদকালীন সময়ের জন্য সার মজুদকরণ ও দ্রুত সময়ে প্রান্তিক কৃষকদের মধ্যে সার পৌঁছানোর জন্য দেশে আরো ৩৪টি বাফার গোডাউন নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটির প্রস্তাবিত প্রথম সংশোধনীর ওপর সুপারিশ নেয়ার জন্য সম্প্রতি একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে প্রকল্পটির ব্যয় বাড়িয়ে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পের প্রথম সংশোধন প্রস্তাব করা হয়েছে।
সভা সূত্রে জানা গেছে, সভায় বিসিআইসির চেয়ারম্যান জানান যে, শুরু থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পের ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় ২২২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, যা প্রকল্প ব্যয়ের ১১.২১ শতাংশ এবং এর বাস্তব অগ্রগতি ১৮.১৫ শতাংশ। প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার জটিলতা, প্রস্তাবিত জমির মধ্যে বৈদ্যুতিক খুঁটি থাকা, রেলওয়ের জমি, খাস জমি ও নদী শ্রেণীর জমি থাকা, রাস্তা সংক্রান্ত জটিলতা, পরিবেশ ছাড়পত্র প্রাপ্তিতে বিলম্ব, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কর্তৃক স্থান পরিবর্তনের প্রস্তাব, করোনাকালীন সাধারণ ছুটি এবং লকডাউনের কারণে জমি অধিগ্রহণ তথা প্রকল্প বাস্তবায়ন দেরি হয়েছে। এরই মধ্যে প্রকল্পের আওতায় ৩৪টির মধ্যে ২৪টি গোডাউনের জন্য জমি পাওয়া গেছে, বাকি জমিগুলো অধিগ্রহণের কাজ চলমান রয়েছে।
সভায় পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের উপপ্রধান সভাকে জানান প্রকল্প অনুমোদনের প্রক্রিয়াকরণ সংক্রান্ত পরিপত্র অনুসারে মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার তিন মাস আগে সংশোধন প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠাতে হয়। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ ২০২২ সালের জুনে শেষ হওয়ার প্রায় দুই মাস অতিবাহিত হওয়ার পর সংশোধিত ডিপিপি প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে, যা অনভিপ্রেত। তিনি বলেন, প্রকল্পের অগ্রগতি সংক্রান্ত উপস্থাপনা থেকে দেখ যায় ছয়টি জমির অধিগ্রহণ ২০১৯ ও ২০২২ সালের মধ্যে এবং ১০টি জমির অধিগ্রহণ ২০১১ সালের মধ্যে সম্পন্ন হয়েছিল কিন্তু টেন্ডার আহ্বান করা সম্ভব হয়নি। ফলে প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় উভয়ই বৃদ্ধি পেয়েছে।
সভার সভাপতি বলেন, যেহেতু ২০১৮ সাল থেকে চার বছরে জমির অধিগ্রহণ কার্যক্রমই সম্পন্ন হয়নি এবং বাকি ১০টি গুদামের জন্য জমি কবে পাওয়া যাবে তাও সুনির্দিষ্ট নয়। সেহেতু প্রল্পটি শুধুমাত্র প্রাপ্ত ২৪টি জায়গায় গুদাম নির্মাণের জন্য সুনির্দিষ্ট রেখে ডিপিপি পুনর্গঠন করলে প্রকল্পটির ব্যয় সঙ্কোচন করা সম্ভব হবে, আর এতে প্রকল্পের বাস্তবায়নও ত্বরান্বিত হবে।
সভার সভাপতির সাথে একমত পোষণ করেন আইএমইডির মহাপরিচালক। তিনি তিন মাসের মধ্যে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে বাকি ১০টি জমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন করার পরামর্শ দেন। অন্যথায় যে ১০টি জমি পাওয়া যায়নি সেগুলো ডিপিপি থেকে বাদ দেয়ে ডিপিপি সংশোধন করা সমীচীন মনে করেন। পরবর্তী পর্যায়ে বাকি ১০ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দেন। সভায় কার্যক্রম বিভাগের উপপ্রধান বলেন, প্রকল্পটি ‘বি’ ক্যাটাগরির। তিনি আর্থিক সংকুলানের বিষয়টি বিবেচনা করে প্রল্পটির ব্যয় ৪৮২ কোটি টাকা বৃদ্ধি করে সংশোধন না করে পর্যায় ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা যেতে পারে বলে মত দেন। এ ছাড়াও তিনি পরামর্শক, ভূমি অধিগ্রহণ ও ফার্নিচার বাবদ ব্যয় প্রাক্কলন যৌক্তিকভাবে হ্রাস করা ও কম্পিউটার সরঞ্জমাদি বাবদ ব্যয় প্রাক্কলন বাদ দেয়ার পরামর্শ দেন। এ বিষয়ে সভায় উপস্থিত সবাই মত দেন বলে সূত্র জানায়। তবে বিসিসিআই চেয়ারম্যান সভায় ধারণক্ষমতার বিস্তারিত এবং প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে ৩৪টি গুদাম নির্মাণের গুরুত্ব তুলে ধরেন। একই সাথে তিন মাসের মধ্যে টাস্কফোর্স গঠনের মাধ্যমে বাকি ১০টির জমি বিষয় নিষ্পত্তির কথা তুলে ধরেন।
সূত্র জানায়, অর্থ সাশ্রয়ের বিষয়টি মাথায় রেখে প্রকল্পের ব্যয় কমানোর জন্য অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কাটছাঁট করে ৩৪টি গুদাম নির্মাণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে তিন মাসের মধ্যে টাস্কফোর্স গঠন করে বাকি ১০টি গুদামের জমি অধিগ্রহণ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
সোর্স : নয়া দিগন্ত