চলমান অর্থনৈতিক সংকটের মুখে বাড়তে পারে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি। এমনকি দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছতে পারে। আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা, দেশে জ্বালানি তেলের দামের সমন্বয় ও ডলারের দাম রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি—সব কিছু মিলিয়ে আগস্টে মূল্যস্ফীতি হতে পারে ৯ শতাংশের ওপরে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর একাধিক সূত্র দিচ্ছে এমন তথ্য। তবে মূল্যস্ফীতি ঠিক কত হতে পারে, তা বলতে নারাজ তারা। সার্বিক মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ বা দুই অঙ্কের ঘরে এখনো যায়নি বলে জানা গেছে। সরকারি নীতিনির্ধারকরাও স্বীকারে করছেন যে আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি অনেকটাই বাড়বে।
সূত্র বলছে, আগস্টের মূল্যস্ফীতি নিয়ে চলমান কাজ একেবারে শেষ পর্যায়ে। এই মাসে মূল্যস্ফীতি হতে পারে ৯ শতাংশ বা ৯.২০ শতাংশের ওপরে। এখন মূল্যস্ফীতির তথ্য চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায়।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান গণমাধ্যমকে বলেন, এখনো মূল্যস্ফীতির হিসাব চূড়ান্ত হয়নি। আরো দু-চার দিন সময় লাগবে। এর আগে তিনি বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের সর্বোচ্চ অথরিটি। তাঁর অনুমোদন ছাড়া এই তথ্য প্রকাশ করা যায় না। ’
গত মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক শেষে এম এ মান্নান বলেন, ‘আগস্টে দেশের মূল্যস্ফীতি বাড়বে। সেটি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থাকবে। তবে অক্টোবরে কমতে শুরু করবে। কারণ রোপা আমনসহ বোরো ধান উঠতে শুরু করবে। আমাদের চালের মজুদ আছে। সেই সঙ্গে জ্বালানি তেলের দাম এর মধ্যে কমতে শুরু করেছে। আশা করছি, আরো সমন্বয় করা হবে। ফলে এসবের প্রভাবে কমবে মূল্যস্ফীতি। ’
ওই দিন তিনি বলেন, ‘আমাদের নিজেদের কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে না। এটা আন্তর্জাতিক বিষয়। এর আগে করোনা মহামারির কারণে অনেকটা চাপ সৃষ্টি হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে আমাদের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাশিয়া থেকে তেল কিনছে সবাই। ইউক্রেনও কিছু পণ্য রপ্তানি শুরু করেছে। পাশাপাশি প্রণোদনা প্যাকেজের মতো প্রধানমন্ত্রী দ্রুত কৃচ্ছ্র সাধন এবং আমদানি ব্যয় কমানোর ফলে ডলার ভয়ংকর রূপ ধারণ করেনি। এতে মূল্যস্ফীতি অক্টোবরে কমে আসবে। পরবর্তী সময়ে তা অব্যাহত থাকবে।
আগস্টের প্রথম দিকে হঠাৎ করে পেট্রল, ডিজেল, কেরোসিন, অকটেনসহ সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম একবারেই অধিক পরিমাণে বাড়িয়ে দেয় সরকার। এর প্রভাবে বেড়েছে মূল্যস্ফীতি। যদিও পরবর্তী সময়ে দাম কিছুটা সমন্বয় করে ২৯ আগস্ট সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম লিটারে পাঁচ টাকা কমানো হয়েছে। কিন্তু সেটি মূল্যস্ফীতি কমানোর ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, আগস্টে মূল্যস্ফীতি ৯ থেকে ১০ শতাংশই হওয়া উচিত। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘সার্বিক দিক বিবেচনা করে আমার মতে, এই আগস্ট মাসের মূল্যস্ফীতি ৯ থেকে ১০ শতাংশে হওয়া উচিত। ’
তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি একটি বস্তুনিষ্ঠ বিষয়। এর অনুমোদন কেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নিতে হবে? এটি তো কোনো নীতিনির্ধারণী বিষয় নয়, এই তথ্য প্রকাশের জন্য বিবিএস সচিবই যথেষ্ট। যদি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এসব তথ্যের অনুমোদন নেওয়া হয়, তাহলে জনসাধারণের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। তারা ভাবে, এই তথ্য রাজনৈতিকীকরণ করা হচ্ছে কি না। ’
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, চলতি বছরের শুরু থেকে সার্বিক মূল্যস্ফীতির গতি ঊর্ধ্বমুখী। জানুয়ারিতে তা ছিল ৫.৮৬ শতাংশ, ফেব্রুয়ারিতে ৬.১৭ শতাংশ, মার্চে ছিল ৬.২২ শতাংশ, এপ্রিলে ৬.২৯ শতাংশ, মে মাসে ৭.৪২ শতাংশ, জুনে ছিল ৭.৫৬ শতাংশ, জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৭.৪৮ শতাংশ।
সোর্স : কালের কন্ঠ