বেলা তখন দেড়টা। রাজধানীর দক্ষিণ সিটির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসাবোর ওয়াসা রোডে বায়তুল ফালাহ জামে মসজিদের বিপরীত পাশে ডিলার মো: হুমায়ুন কবিরের ওএমএস দোকানের সামনে তখনও ক্রেতাদের ভিড়। পুরুষ ও নারীরা দু’টি পৃথক লাইনে দাঁড়িয়ে চাল নিচ্ছেন। ৩০ টাকা কেজি দরে পাঁচ কেজি করে কেনার সুযোগ রয়েছে ক্রেতাদের। ছয়জনের পেছনে দাঁড়িয়ে আছেন তাসলিমা খাতুন। তিনি বলেন, সকালে একবার আসছিলাম; কিন্তু তখন ছিল দীর্ঘ লাইন। এ জন্য কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে আবার চলে যাই। এখন আবার এসে দাঁড়িয়েছি প্রায় আধা ঘণ্টা আগে। এখনো কিনতে পারিনি। তিনি জানান, সপ্তাহে দু’দিন ওএমএস-এর চাল কেনা যায়। পাওয়া যায় ১০ কেজি। কিন্তু ছয়জনের সংসারে তা দিয়ে পাঁচ দিন চলে। বাকি দু’দিনের জন্য দোকান থেকে বেশি দামে চাল কিনতে হয়। ঠেলাগাড়ি চালক স্বামীর জন্য যা কষ্টকর হয়ে যায়। চাল কিনতে জাতীয় পরিচয়পত্র আনতে হয় এবং খাতায় নাম লিখে স্বাক্ষর বা টিপসই নেয়া হয় বলে তিনি জানান।
ওই ওএমএস দোকান থেকে পাঁচ কেজি চাল কেনেন মিলন নামে একটি বেসরকারি কোম্পানির এসআর। তিনি বলেন, কোম্পানি থেকে নিয়মিত বেতন দেয়; কিন্তু পরিমাণ কম। বর্তমানে প্রতিটি জিনিসের দাম যেভাবে বেড়েছে তাতে বেঁচে থাকাই কষ্ট হয়ে গেছে। সে জন্য এখান থেকে কিছুটা কম দামে চাল কিনতে এসেছি। তিনি জানান, ওএমএস দোকান থেকে যে মানের চাল কেনা যায় সে মানের চাল বাজারে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে এখান থেকে কিনতে পারলে বেশ সাশ্রয় হয়।
বাসাবোর ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ওয়াসা রোডে ওএমএস দোকান রয়েছে। এটির ডিলার ফরিদ উদ্দিন। তবে দোকানে চাল বিক্রি করছেন তার ভাই রুবেল। বেলা ২টার দিকে দোকানে চাল বিক্রি কিছু সময়ের জন্য বন্ধ রেখেছেন। এর মধ্যে দু’জন এসেছেন টিসিবির কার্ড নিয়ে। তাদেরকে পাঁচ কেজি করে চাল কেনার সুযোগ দিলেন। রুবেল জানান, টিসিবির যাদের কার্ড আছে তারাও ওএমএস চাল নিতে পারবেন। তবে মাসে ১০ কেজির বেশি নিতে পারবেন না। দোকানে সকাল থেকেই দীর্ঘ লাইন ছিল জানিয়ে তিনি মোবাইলে তোলা একটি ছবি দেখিয়ে বলেন, সকাল থেকে এ পর্যন্ত ৩০০ লোক চাল নিয়েছে। বিকেল ৫টা পর্যন্ত আরো প্রায় এক শ’ লোক চাল নিতে পারবেন।
খাদ্য অধিদফতর থেকে প্রতিদিন দুই টন করে চাল দেয়া হয় জানিয়ে তিনি বলেন, দুই দিনে মোট চার টন চাল বিক্রি করি। মানুষের এত চাহিদা থাকে অনেকসময় দুপুরের আগেই চাল শেষ হয়ে যায়। রামপুরা ব্রিজ থেকে মুগদা পর্যন্ত ডি-৮ এলাকায় ওএমএস-এর মোট ৫০ জন ডিলার রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সপ্তাহে দু’দিন আমরা চাল বিক্রি করি। তবে কোন দু’দিন তা নির্দিষ্ট নয়। ডিলারদের রোটেশন অনুসারে দু’দিন নির্ধারিত হয়। আমাদের এ সপ্তাহে সোম ও মঙ্গলবার দিন পড়েছে। তার দোকানে চাল থাকলেও গম নেই জানিয়ে রুবেল বলেন, গম আশপাশে কয়েকজন পেয়েছে। আমরা পাইনি। এ জন্য আমরা গম বিক্রি করতে পারছি না। চাল-গম বিক্রিতে কোনো অনিয়ম হয় না জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারের খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা প্রতিদিন বিক্রি মনিটরিং করেন। এখানে অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই। তিনি একটি কাগজ দেখিয়ে বলেন, সকাল ৯টায় উপ-খাদ্য পরিদর্শক বিবেক কীত্তনীয়া স্বাক্ষর করে হাসিব নামে একজনের কাছে চাল বিক্রির মাধ্যমে আজকের বিক্রি উদ্বোধন করে দিয়ে গেছেন। বিকেলে তিনি কী পরিমাণ বিক্রি হয়েছে তা দেখে যাবেন বলেও রুবেল জানান।
ডিলার ফরিদ উদ্দিনের ভাই রুবেল এ প্রতিবেদককে অনেকটা নির্দেশের সুরে বলেন, কোনো ধরনের খারাপ রিপোর্ট করা যাবে না। যায় করেন ভালো রিপোর্ট করবেন। প্রধানমন্ত্রীর নিজের অভিপ্রায়ে কম দামে এ চাল বিক্রি করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী কম দামে চাল খাওয়াতে চেয়েছিলেন সে অনুযায়ী তিনি এখন কম দামে চাল খাওয়াচ্ছেন। এতে অনেক পরিবার উপকার পাচ্ছে।
জানা যায়, গত ১ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে ওএমএস দোকানে চাল বিক্রি কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। এ সময় তিনি বলেন, দেশে ওএমএসের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ২০ লাখ টন চাল মজুদ আছে। প্রতি মাসে তিন লাখ টন চাল বিতরণ করা হবে। সামনে সরকার আরো কিছু চাল ও গম আমদানি করবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সাধারণ মানুষ সাশ্রয়ী মূল্যে চাল কিনতে পারবেন। কোনো অসাধু ব্যবসায়ীকে চাল নিয়ে চালবাজি করতে দেয়া হবে না। কাউকে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে দেয়া হবে না। চালের বাজার নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
খাদ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ঢাকা মহানগরে ৫০টি কেন্দ্রে ট্রাক সেলের মাধ্যমে চাল বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিটি কেন্দ্রে ৩ দশমিক ৫ মেট্রিক টন বা তিন হাজার ৫০০ কেজি চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। এ ছাড়া ঢাকা মহানগরের আরো ১৪৭টি দোকানে চাল বিক্রি করা হচ্ছে। এসব দোকানে দু’দিনে বরাদ্দ দেয়া হয় চার হাজার কেজি করে।
সোর্স : নয়া দিগন্ত