গত চার বছরে ভিন্নমত ও সরকারের সমালোচনা দমনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নজিরবিহীন অপপ্রয়োগ হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিন। সংস্থাটির মতে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত আইন কোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় থাকতে পারে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নির্বিচার ব্যবহার বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে দুর্বল করে একটি ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করেছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাসের চার বছর পূর্তি উপলক্ষে গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে আর্টিকেল নাইনটিন এসব কথা বলেছে। সংস্থাটি গণতন্ত্রের স্বার্থে এই আইনের বিতর্কিত ধারা সংশোধনে সরকারের প্রতিশ্রুতি অবিলম্বে বাস্তবায়নের দাবি জানায়।
আর্টিকেল নাইনটিন দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল বিবৃতিতে বলেন, ২০১৮ সাল থেকেই আর্টিকেল নাইনটিন মতপ্রকাশের অধিকার পরিপন্থী হিসেবে চিহ্নিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নিবর্তনমূলক ধারাগুলো সংশোধনের দাবি জানিয়ে আসছে। অপপ্রয়োগ হয়েছে স্বীকার করে সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের একাধিক মন্ত্রী আইনটির প্রয়োগের ক্ষেত্রে আরো সতর্ক হওয়া এবং সংস্কারের উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অব্যাহত গতিতে মামলা দায়ের ও গ্রেফতার হচ্ছে। সর্বশেষ, অনলাইনে একটি অনুষ্ঠান সঞ্চালন করায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থী এই আইনে গ্রেফতার হয়ে প্রায় এক মাস ধরে কারাগারে আছেন। তিনবার আবেদন করেও জামিন পাননি তিনি। দুই বছর আগে মামলা দায়েরের সময় তার বয়স ছিল সতেরো বছর। এই আইনে দায়ের হওয়া বেশির ভাগ মামলার মতো, ওই নারী শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার ভিত্তিও নড়বড়ে। তার বিরুদ্ধে একটি ওয়েবিনারের মাধ্যমে সরকার পতনে উসকানির অভিযোগ আনা হয়েছে, যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। আমরা এর আগে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদেরও এই আইনে দায়ের হওয়া মামলায় জড়ানোর উদাহরণ দেখেছি, যার মধ্যে ১৪ বছর বয়সী নবম শ্রেণীর এক ছাত্রকে প্রধানমন্ত্রীর মানহানি করার জন্য গ্রেফতার করা হয়েছিল। বিবৃতিতে আর্টিকেল নাইনটিন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীর অবিলম্বে মুক্তি এবং তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার প্রত্যাহার চায়। একই সাথে গণতন্ত্রের স্বার্থে এই আইনের বিতর্কিত ধারা সংশোধনের প্রতিশ্রুতি অবিলম্বে বাস্তবায়নের জোর দাবি জানায়।
সোর্স : নয়া দিগন্ত