চট্টগ্রামের হালিশহর, ইপিজেড, পতেঙ্গা ও সংলগ্ন এলাকায় ডায়রিয়া আক্রান্ত মানুষের ৮০ শতাংশ ওয়াসার পানি ব্যবহার করে। তাদের মধ্যে ৬৪ শতাংশ পানি বিশুদ্ধ না করেই পান করে থাকে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
গত মাসে চট্টগ্রাম নগরের কয়েকটি এলাকায় হঠাৎ ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়।
এর কারণ অনুসন্ধানে আইইডিসিআরের সাত সদস্যের বিশেষজ্ঞ দল অনুসন্ধান চালায়। এরপর তাদের দেওয়া প্রতিবেদনে এসব বিষয় উঠে আসে। বুধবার আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীনের কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।প্রতিবেদনে বলা হয়, নিরাপদ সুপেয় পানির ঘাটতি, বিশুদ্ধ না করে পান করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব এবং ট্যাংক জীবাণুর মাধ্যমে দূষিত হওয়ায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ৩৮, ৩৯ ও ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব হয়েছে। এসব এলাকার অনেক অংশ প্রায়ই জোয়ারের পানিতে নিমজ্জিত হয়। ফলে সরবরাহব্যবস্থার যেকোনো ত্রুটি পানিকে অনিরাপদ করে তোলে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আইইডিসিআরের ল্যাবরেটরিতে বিআইটিআইডি হতে সংগৃহীত ৩০ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর মধ্যে আটজনের নমুনায় কলেরা জীবাণু পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে সাতজন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের এবং একজন সীতাকুণ্ড উপজেলার। বিআইটিআইডি হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের জীবাণুর উপস্থিতি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে কালচার ও সেন্সিটিভিটি পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরের ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়। এ ছাড়া ডায়রিয়া আক্রান্ত এলাকার বিভিন্ন সন্দেহজনক উৎস থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করে মাইক্রোবায়োলজিক্যাল পরীক্ষার জন্য আইসিডিডিআরবির ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়।
আইইডিসিআরের ডা. সুমন বড়ুয়ার নেতৃত্বাধীন ওই বিশেযজ্ঞদলের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, গত মাসের ২৭ দিনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকসাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) মোট ৮৯৮ জন নতুন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়। এ ছাড়া কমিউনিটি পর্যায়ে তদন্ত দল আরো ১৩১ জন ডায়রিয়া রোগী শনাক্ত করে। বিআইটিআইডিতে ভর্তি রোগী ও কমিউনিটি পর্যায়ে শনাক্ত রোগীদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতে বিভিন্ন এলাকায় ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব শুরু হয় এবং আগস্টের মাঝামাঝি সর্বাধিক রোগী আক্রান্ত হয়।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আজকে (গতকাল) মাসিক সভায় ওয়াসার প্রতিনিধিকে বলেছি, পানি দুর্গন্ধযুক্ত ও ঘোলা, এ কারণে ডায়রিয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে ওয়াসাকে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি। যাতে তারা সতর্কতার সঙ্গে পানি বণ্টন সুচারুরূপে সম্পাদন করে। ’
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে এম ফজলুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ওয়াসার পানিতে যদি কোনো জীবাণু থাকত তাহলে সারা শহরে ডায়রিয়া হতো। কিন্তু শুধু কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় কেন ডায়রিয়া? আইইডিসিআর ওয়াসার পানি নিয়ে যে তদন্ত করল আমাদের কেন অবহিত করা হলো না? ওরা ওয়াসার পানি নিয়ে যে প্রতিবেদন দিল সে বিষয়েও আমাদের জানানো হয়নি। ’
ডায়রিয়া মোকাবেলায় করণীয়
তদন্তকারী দল ডায়রিয়া প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে উপদ্রুত এলাকায় প্রচারপত্র বিলি করে এবং আন্তর্ব্যক্তিক যোগাযোগের মাধ্যমে সচেতন করার প্রয়াস চালায়। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগকে ৩৮, ৩৯ ও ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে অধিবাসীদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য মাইকিং, প্রচারপত্র বিলি করা এবং সিভিল সার্জন কার্যালয় চট্টগ্রামের সহায়তায় পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণের উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। চট্টগ্রাম ওয়াসার সঙ্গে আলোচনা করে পানি সরবরাহ লাইন নিয়মিত সংস্কার করার পাশাপাশি পানিতে ক্লোরিনের আদর্শ মাত্রা বজায় রাখার সুপারিশ করা হয়।