বাফেদা ও এবিবির বেঁধে দেয়া নতুন দর কার্যকর হওয়ার পরেও ডলারের বাজারে অস্থিরতা কাটেনি। আবার অনেক ব্যাংকেই এটি কার্যকর হয়নি। উল্টো একদিন পরেই আন্তঃব্যাংকে প্রতি ডলারের দাম বেড়েছে। আমদানির জন্য ডলারের দাম বিভিন্ন ব্যাংকে বিভিন্ন দর অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে কিছু ব্যাংক আমদানির জন্য ডলারের দর কমিয়েছে। আবার কিছু ব্যাংক বাড়িয়েছে। আন্তঃব্যাংকে ডলারের দাম বাড়ায় সব খাতেই এর দাম বাড়বে বলে জানান ব্যাংকাররা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা পদক্ষেপ নেয়ার পরও দেশে ডলারের বাজারে অস্থিরতা কাটছে না। ফলে মার্কিন মুদ্রা ডলারের দর নিয়ে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হযবরল অবস্থায় পড়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এ দিকে রপ্তানি আয়ে ডলারের দাম কম হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন রপ্তানিকারকরা।
জানা গেছে, ডলারের দর নির্ধারণের একদিন পর গত বুধবার আন্তঃব্যাংকে ডলার বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ১০৬ টাকা ৯০ পয়সা দরে। আগের দিন মঙ্গলবার ছিল ১০৬ টাকা ১৫ পয়সা।
এ হিসাবে একদিনে ডলারের দাম বেড়েছে ৭৫ পয়সা। আবার মঙ্গলবার সর্বনিম্ন দর ছিল ১০১ টাকা ৬৭ পয়সা। বুধবার তা বেড়ে ১০২ টাকা ৩৭ পয়সা হয়েছে। সর্বনিম্ন দরে ডলারের দাম বেড়েছে ৭০ পয়সা। এদিকে সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার নতুন আন্তঃব্যাংক রেট বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে। তাতেও ফের আন্তঃব্যাংকগুলোতে ডলারের গড় ক্রয়মূল্য বেড়েছে। একদিনের ব্যবধানে এ দাম ৪ টাকা ২৩ পয়সা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৬ টাকা ৬০ পয়সা, যা বুধবার ছিল ১০২ টাকা ৩৭ পয়সা। তবে ডলারের গড় ক্রয়মূল্য বাড়লেও বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই। অর্থাৎ বুধবারের দামেই ডলার বিক্রি হচ্ছে ১০৬ টাকা ৯০ পয়সায়। এর আগে রেমিট্যান্স, রপ্তানি ও আমদানির ক্ষেত্রে ডলারের একটি করে একক বা অভিন্ন দর ঘোষণা করে এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ অথরাইজড ডিলার এসোসিয়েশন (বাফেদা)। দেশে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের অস্থিতিশীলতা কমাতে নেয়া হয় এ সিদ্ধান্ত। নতুন ঘোষণা অনুযায়ী প্রবাসী আয় রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে ডলারের সর্বোচ্চ দর ১০৮ টাকা এবং রপ্তানি বিল নগদায়ন ডলারে ৯৯ টাকা ছাড়াও আমদানিকারকের কাছে ১০৪ টাকা ৫০ পয়সা দরে ডলার বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় ব্যাংকগুলো। গত সোমবার থেকে এই দর কার্যকর হয়েছে। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, উন্নত বিশ্ব যেভাবে মুদ্রার হার বাজারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করছে।
আমরাও সেদিকে এগোব। আগে নিজেরাই ডলারে মূল্য নির্ধারণ করে দিতাম। সেভাবেই বেচাকেনা হতো। এখন আমরা নিজেরা চিন্তাভাবনা করছি উন্নত বিশ্ব এবং আন্তর্জাতিক বাজারে যেভাবে মুদ্রা বাজার চলে আমরা সেভাবে পরিচালনা করবো। গত বুধবার সরকারি ক্রয় এবং অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান তিনি। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ডলারের দামে এত পার্থক্য থাকা ঠিক নয়। রপ্তানির ডলারের মূল্য সবচেয়ে কম ৯৯ টাকা। এতে রপ্তানিকারকরা নিরুৎসাহিত হবেন। এতে রপ্তানি কমে যাবে। আন্ডার ইনভয়েসিং (পণ্যের মূল্য কম ধরা হবে) বেড়ে যাবে। সরকার হারাবে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব। এদিকে রপ্তানিকারকদের ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৯ টাকা। কিন্তু রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে ১০৮ টাকা। এই বৈষম্য দূর করার জন্য রপ্তানিকারকদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অচিরেই চিঠি দেয়া হবে বলে জানা গেছে।
তারা বলেছেন, একই ডলারের দামে এত ব্যবধান হতে পারে না। বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, রেমিট্যান্স ক্রয়ে ১০৮ টাকা দেয়া সম্ভব হলে রপ্তানি আয়ে ৯৯ টাকা হবে কেন? এ দর কিসের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হলো। এখানে চরম বৈষম্য করা হয়েছে। এতে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ডলার ক্রয় এবং বিক্রিতে এক টাকার পার্থক্য থাকতে পারে। এর বেশি নয়। ডলারের দাম নির্ধারণের পূর্ণ ক্ষমতা বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে থাকা উচিত। তা না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। তবে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ অথরাইজড ডিলারস এসোসিয়েশনের (বাফেদা) চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আফজাল করিম বলেন, রপ্তানিকারকরা লোকসানে পড়বেন না। কারণ তারা রপ্তানি খাতে প্রণোদনা পেয়ে থাকেন। এ ছাড়া ডলারের এই দাম চিরস্থায়ী নয়। সময়ে সময়ে বদলাবে। ঘোষিত দামে আপাতত পাঁচ কার্যদিবস চলবে। তারপর আবার সংশোধন করা হবে।
সোর্স : মানব জমিন