বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ু প্রভাবিত অঞ্চলগুলোতে তীব্র খাদ্যাভাব বেড়ে দ্বিগুণের বেশি হচ্ছে। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা অক্সফাম ইন্টারন্যাশনালের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের খাদ্যবিষয়ক সংস্থাও খাদ্যাভাবের সতর্কসংকেত দিয়েছে।
অক্সফাম কর্তৃক প্রকাশিত ‘উষ্ণ বিশ্বে ক্ষুধা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে দেখা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ১০টি দেশে ছয় বছরের ব্যবধানে তীব্র খাদ্যাভাবের মাত্রা ১২৩ শতাংশ বেড়েছে।
এ বিষয়ে অক্সফাম আমেরিকার মানবিক নীতিবিষয়ক উপদেষ্টা লিয়া লিন্ডসে বলেন, আবহাওয়ার মারাত্মক অবস্থার কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রভাব এরই মধ্যে অনুভূত হচ্ছে।
প্রতিবেদনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ১০টি দেশ সম্পর্কে বলা হয়, গত দুই দশক ধরে সোমালিয়া, হাইতি, জিবুতি, কেনিয়া, নাইজার, আফগানিস্তান, গুয়াতেমালা, মাদাগাস্কার, বুরকিনা ফাসো ও জিম্বাবুয়ে আবহাওয়ার চরম অবস্থার কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। অক্সফাম এই দেশগুলোকে জলবায়ু ‘হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
অক্সফামের খাদ্যাভাবের সংজ্ঞা অনুযায়ী, বিশ্বের চার কোটি ৮০ লাখ মানুষ তীব্র খাদ্যসংকটে ভুগছে। ২০১৬ সালের হিসাবে দুই কোটি ১০ লাখ মানুষ এ সংকটে ছিল। তখন বলা হয়েছিল, এক কোটি ৮০ লাখ মানুষ ক্ষুধার সংকটের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।
অক্সফামের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘আবহাওয়ার নতুন ও ক্রমবর্ধমান চরম ভাবাপন্ন আচরণ দরিদ্র মানুষ, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের দেশে ক্ষুধা নিবারণ এবং পরবর্তী ধাক্কা সামলানোর ক্ষমতাকে ক্রমাগত কেড়ে নিচ্ছে। ’
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পাকিস্তানের এক-তৃতীয়াংশ বন্যার কবলে পড়ায় ফসল, অবকাঠামোসহ আবাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আফ্রিকার দেশ সোমালিয়ার পরিস্থিতি বেশ খারাপ। সেখানে ১০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। গুয়াতেমালায় আবহাওয়া পরিস্থিতির কারণে ভুট্টা ফলনের প্রায় ৮০ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে।
অক্সফাম বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত এই খাদ্যাভাব ‘বৈশ্বিক অসমতার জাজ্বল্যমান প্রদর্শন। ’
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বের শিল্পোন্নত জি-২০ জোটের দেশগুলো বিশ্বের তিন-চতুর্থাংশ কার্বন নিঃসরণ করে। অন্যদিকে জলবায়ু হটস্পটভুক্ত ১০টি দেশ মাত্র ০.১৩ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ করে।
অক্সফাম ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক গ্যাব্রিয়েলা বুচার বলেন, ‘বিশেষ করে দূষণকারী ধনী দেশগুলোর নেতাদের অবশ্যই নিঃসরণ হ্রাসের প্রতিশ্রুতি পালন করতে হবে। ’
২০২২ সালের জন্য জাতিসংঘের মানবিক সহায়তার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৯০০ কোটি ডলার। এ বিষয়ে অক্সফাম বলেছে, গত ৫০ বছরে জীবাশ্ম জ্বালানি কম্পানিগুলোর গড় লভ্যাংশের দিকে তাকালে জাতিসংঘের এই সহায়তার অঙ্ক তাদের ১৮ দিনের লাভের সমান।
অক্সফামের নির্বাহী কর্মকর্তা আরো বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সহায়তা করা উন্নত দেশগুলোর ‘নৈতিক বাধ্যবাধকতা, দাতব্যকাজ নয়’।
ডাব্লিউএফপির সতর্কবার্তা : এদিকে বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে দাঁড়িয়ে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডাব্লিউএফপি) নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বিসলি বলেন, সংস্থাটি বিশ্বের যে ৮২টি দেশে কাজ করে সেখানে ৩৪ কোটি ৫০ লাখ মানুষ মারাত্মক খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা মোকাবেলা করছে। এ সংখ্যা ২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারি আঘাত হানার আগের সময়কালে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মুখে থাকা মানুষের তুলনায় দ্বিগুণ। এ ছাড়া সাত কোটি মানুষ অভুক্ত থাকার কাছাকাছি রয়েছে। এ জন্য ইউক্রেন যুদ্ধকে দায়ী করে তিনি বলেন, বিশ্ব ‘অভূতপূর্ব মাত্রার এক জরুরি অবস্থার’ মুখোমুখি হচ্ছে।
বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কা বিশ্বব্যাংকের
বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সুদের হার বৃদ্ধি ২০২৩ সালে বৈশ্বিক মন্দার কারণ হতে পারে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। মূল্যস্ফীতি ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো যেভাবে সুদের হার বৃদ্ধি করেছে তার মাত্রা ‘গত পাঁচ দশকে সর্বোচ্চ’ বলছে সংস্থাটি।
বর্তমান সুদের হার ঋণ নেওয়াকে আরো ব্যয়বহুল করেছে। এতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থর হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক নীতিবিষয়ক বৈঠকের আগে বিশ্বব্যাংক এই সতর্কতার কথা জানাল। এই দুই প্রতিষ্ঠান আগামী সপ্তাহে সুদের হার বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে।
গত বৃহস্পতিবার বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, সত্তরের দশকের মন্দা-পরবর্তী পুনরুদ্ধারের পরে এখন বিশ্ব অর্থনীতি সবচেয়ে মন্থর। এ অবস্থায় মাঝারি ধরনের কোনো নেতিবাচক প্রভাবও বিশ্ব অর্থনীতিকে মন্দার দিকে ঠেলে দিতে পারে। সূত্র : এএফপি ও আলজাজিরা