মুহাম্মদ নূরে আলম : সীমান্তে বিএসএফের গুলীতে বাংলাদেশিদের হত্যার মিছিল থামছে না। বাড়ছে মারণাস্ত্রের ব্যবহার। ভারত প্রতিনিয়তই সীমান্তহত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে। প্রাণঘাতী গুলী ব্যবহার না করার কথা বলেছেন বিএসএফের কর্তা ব্যক্তিরা। তবে বাস্তবতা হচ্ছে সীমান্তে বাংলাদেশের বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা বন্ধ হয়নি, গুলীবর্ষণের হার কমেওনি। দিন দিন বাড়ছেই সন্দেহভাজনদের আক্রমণাত্মক ভীতি প্রদর্শন, নির্দয়ভাবে প্রহার এবং নির্যাতন। মানুষকে পাখির মতো গুলী করে মারা হচ্ছে নৃশংসভাবে। ভারতের সাথে ৬টি দেশের স্থল সীমান্ত রয়েছে। এ দেশগুলো হল পাকিস্তান, চীন, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার ও বাংলাদেশ। আর ভারতের সমুদ্র সীমান্ত রয়েছে শ্রীলংকার সাথে। আমরা এও জানি, এই সবগুলো দেশের সীমান্তেই ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বা বিএসএফ মোতায়েন আছে। বাংলাদেশ ছাড়া অন্য ৫টি দেশের সীমান্তে বিএসএফের গুলীতে কোনো লোক নিহত হওয়ার কোনো খবর কিন্তু চোখে পড়ে না। শুধু বাংলাদেশ সীমান্তেই কেন এই হত্যা? গত ১০ বছরে, আসকের তথ্য মতে, ২৯৪ জন বাংলাদেশী নাগরিককে হত্যা করেছে বিএসএফ। সীমান্ত হত্যার পরিসংখ্যান নিয়ে মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের তথ্য মতে, ২০০০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দুদশকে সীমান্তে বিএসএফের হাতে ১ হাজার ১৮৫ বাংলাদেশী নাগরিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীদ্বয় শীর্ষ বৈঠকে সীমান্ত-হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার বিষয়ে সম্মত হয়েছেন। তারা দক্ষিণ এশিয়া এবং এর বাইরে সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ ও মৌলবাদের বিস্তার রুখতে তাঁদের জোরালো অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামানোর ঘোষণার একদিন পার না হতেই গত ৭ সেপ্টেম্বর দিনাজপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলীতে মিনহাজুল ইসলাম মিনার (১৭) নামে এক বাংলাদেশি স্কুলছাত্র নিহত হয়েছে। গত বুধবার ৭ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে দিনাজপুর সদর উপজেলার দাইনুর সীমান্তে ৩১৪/১ পিলারের উত্তরে এ ঘটনা ঘটে। নিহত মিনহাজুল ইসলাম মিনার সদর উপজেলার খানপুর ভিতরপাড়া গ্রামের মাজেদুল ইসলামের ছেলে। সে খানপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্র। বিএসএফের গুলীতে নিহত মিনহাজুলের লাশ অনেক গড়িমাসি করে চারদিন পর ফেরত দেয়।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র-আসকের তথ্য মতে ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত গুলীতে হত্যা ৬ জন, তাড়া করে গুলীতে ২ জন, আহত ৪ জন, অপহৃত ৭ জন। এছাড়াও গত ৭ সেপ্টেম্বর দিনাজপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলীতে মিনহাজুল ইসলাম মিনার (১৭) নামে এক বাংলাদেশী স্কুলছাত্র নিহত হয়েছে। ২০২১ সালে গুলীতে হত্যা ১৬ জন, নির্যাতনে মৃত্যু ১ জন এবং তাড়া করে মৃত্যু ১ জন, আহত ৯ জন, অপহৃত ৩ জন। ২০২০ সালে গুলীতে হত্যা ৪২ জন, আহত ২৬, অপহৃত ২২ জন, নির্যাতন করে হত্যা ৬ মৃত্যুর ধরণ উল্লেখ নেই ১ জনের। অর্থাৎ ২০২০ সালে ৪৯ জনকে বিএসএফ হত্যা করে। ২০১৯ সালে সীমান্তে ৪৩ জন বাংলাদেশী নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে গুলীতে ৩৭ জন এবং নির্যাতনে ছয়জন। আহত হয়েছেন ৪৮ জন। অপহৃত হয়েছেন ৩৪ জন। ২০১৮ সালে নিহত হয়েছেন ১৪ জন। ২০১৭ সালের বিএসএফ ২৪ জনকে হত্যা করে। ২০১৬ সালে নিহত ৩১ জন। ২০১৫ সালে বিএসএফ হত্যা করেছে ৪৬ জন বাংলাদেশীকে; এর মধ্যে ৩১ জন গুলীতে এবং বাকি ১৪ জন শারীরিক নির্যাতনে মারা গেছে। ২০১৪ সালে হত্যা করা হয়েছে ৩৩ জন বাংলাদেশীকে। আহত হয়েছেন ৬৮ জন। এ ছাড়া বিএসএফ ধরে নিয়ে গেছে ৫৯ জনকে। ২০১৩ সালে মোট ২৭ জন বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে বিএসএফ সদস্যরা। এর আগে ২০০৯ সালে বিএসএফের গুলীতে রেকর্ড সংখ্যক ৬৬ জন বাংলাদেশি হত্যার শিকার হয়েছিল।
বছরভিত্তিক সরকারি হিসেব অনুযায়ী, ২০০৯ সালে সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের হাতে মারা যান ৬৬ জন বাংলাদেশি, ২০১০ সালে ৫৫ জন, ২০১১ ও ২০১২ সালে ২৪ জন করে, ২০১৩ সালে ১৮ জন, ২০১৪ সালে ২৪ জন, ২০১৫ সালে ৩৮ জন, ২০১৬ সালে ২৫ জন, ২০১৭ সালে ১৭ জন এবং ২০১৮ সালে ৩ জন মারা যান সীমান্তে। তবে বেসরকারি সংস্থাগুলোর হিসাবে সীমান্তে হত্যার সংখ্যা অনেক বেশি।
অধিকারের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০০০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দুদশকে সীমান্তে বিএসএফের হাতে ১ হাজার ১৮৫ বাংলাদেশি নাগরিক হত্যাকা-ের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ২০০০ সালে ৩১, ২০০১ সালে ৮৪, ২০০২ সালে ৯৪, ২০০৩ সালে ২৭, ২০০৪ সালে ৭২, ২০০৫ সালে ৮৮, ২০০৬ সালে ১৫৫, ২০০৭ সালে ১১৮, ২০০৮ সালে ৬১, ২০০৯ সালে ৯৮, ২০১০ সালে ৭৪, ২০১১ সালে ৩১, ২০১২ সালে ৩৮, ২০১৩ সালে ২৯, ২০১৪ সালে ৩৫, ২০১৫ সালে ৪৪, ২০১৬ সালে ২৯, ২০১৭ সালে ২৫, ২০১৮ সালে ১১, ২০১৯ সালে ৪১ জন হত্যাকা-ের শিকার হয়। একই সময়ে ভারতীয় বাহিনীর হাতে ১ হাজার ১১৮ জন আহত, ১ হাজার ৪০১ জন অপহরণ ও ১১১ জন নিখোঁজ হয়। এ ছাড়া আসকের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৩ সাল থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত গত ৮ বছরে বিএসএফের গুলীতে ২৩৩ বাংলাদেশি মারা গেছে।
বিজিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ থেকে ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সীমান্তে বিএসএফ ও ভারতীয় নাগরিকদের হাতে মারা গেছেন ৯৩৬ জন বাংলাদেশি। এর মধ্যে বিএসএফের হাতে ৭৬৭ জন ও ভারতীয়দের হাতে ১৬৯ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। ২০০৯ সালে ৬৭ জন, ২০১০ সালে ৬০ জন, ২০১১ সালে ৩৯ জন, ২০১২ সালে ৩৪ জন, ২০১৩ সালে ২৮ জন, ২০১৪ সালে ৪০ জন, ২০১৫ সালে ৪৫ জন এবং ২০১৬ সালে ৩১ জন নিহত হয়েছেন। ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে সীমান্ত হত্যা বেড়েছে ১২ গুণ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জাতীয় সংসদে দেয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ২০১৭ সালে ১৭ জন এবং ২০১৮ সালে তিনজন এবং ২০১৯ সালে ৩৮ জন হত্যার শিকার হন।
২০১৮ সালের এপ্রিলে একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করেছিল বিজিবি-বিএসএফ। চুক্তিতে সীমান্ত অতিক্রমের ঘটনায় প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার না করার বিষয়ে উভয় বাহিনী একমত হয়। ওই বছর সীমান্তে বিএসএফের হাতে মারা যান ১১ জন, যা গত ২১ বছরের মধ্যে ছিল সর্বনিম্ন। তবে পরের বছরই (২০১৯) এ সংখ্যা প্রায় চারগুণ বেড়ে ৪১-এ দাঁড়ায়। সীমান্তে হত্যার ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় ওই বছরই (২০১৯ সাল) বিজিবির পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা চাওয়া হয় বিএসএফের কাছে। এসব হত্যাকে ‘অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু’ বলে দাবি করে তারা। বিজিবি ও বিএসএফের মহাপরিচালকের (ডিজি) বৈঠকে বিএসএফ ডিজি এমন দাবি করেন। ওই সময় অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে বিএসএফপ্রধান বলেন, দুর্বৃত্তরা হামলা চালালে আত্মরক্ষায় বিএসএফ সদস্যরা প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করেন।
ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের আইন অনুযায়ী শাস্তির বিধান: “ফরেনার্স অ্যাক্টে ১৯৪৬ (সংশোধিত ২০০৪) এবং পাসপোর্ট আইন ১৯৫০ দু ধরনের নির্ধারিত শাস্তির কথা বলা আছে। বৈধ কাগজপত্র বিহীন বা পাসপোর্ট-ভিসা তথা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোন বিদেশী নাগরিক ভারতের অভ্যন্তরীণ সীমানায় পাওয়া গেলে ফরেনার্স অ্যাক্টে ১৯৪৬ এর ধারা ১৪ তে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী তথা অবস্থানকারীর পাঁচ বছরের কারাদ- অথবা জরিমানা অথবা দু’ই নির্ধারিত শাস্তির কথা বলা হয়েছে। আবার ১৪ (খ) তে বলা হয়েছে যে, শাস্তি কোনমতে দুই বছরের কম এবং আট বছরের বেশি হবে না। আরও বলা হয়েছে জরিমানার টাকা দশ হাজার রুপির কম হবে না। এছাড়া ১৯৫০ সালের ভারতীয় পাসপোর্ট আইনের ৬ ধারায়, তিন মাসের কারাদ- অথবা জরিমানা অথবা দু’ শাস্তির কথা বলা হয়েছে”। এই আইনের বর্ণনা অনুযায়ী কোথাও গুলী করে হত্যা করার কথা বলা হয়নি। কোনো বিদেশী নাগরিক ভারতে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করলে গ্রেফতার করে আইন অনুযায়ী শাস্তির কথা বলা হয়েছে। সীমান্ত হত্যার ঘটনা মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। যদি বাংলাদেশের কোনো নাগরিক অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা না নিয়ে হত্যা কিংবা শারীরিকভাবে আঘাত করা গুরুতর অন্যায়। তাদেরকে গ্রেফতার করে প্রচলিত আইন মোতাবেক শাস্তি দেয়া যেত। ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশকালে তারা ভারতের প্রতি হুমকি হতে পারেন না। তাই বিএসএফ তাদের আটক করতে পারে, গুলী চালাতে পারে না। সীমান্তবর্তী বিভিন্ন থানা, বিজিবি এবং বাংলাদেশ পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সীমান্তের অধিকাংশ মৃত্যুই ঘটে বাংলাদেশিদের ভারতে অনুপ্রবেশের কারণে। অনুপ্রবেশের অন্যতম কারণ, ভারত থেকে গরু কিনে আনা। অনেকে সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া কাটার সময় বিএসএফের গুলীতে নিহত হন। এছাড়া ‘চোরাচালান দমনের অজুহাতে’ বিএসএফ সদস্যরা বাংলাদেশের সীমানায় প্রবেশ করে হত্যাকা- ঘটান এমন তথ্যও পাওয়া যায়।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, সীমান্তের হত্যা কমবে না, সংখ্যাটাও নিচে নামবে না। কারণ, ভারতের বিএসএফকে আমি সবসময় ট্রিগার হাতেই দেখি। তারা গুলী করার জন্য প্রস্তুত থাকে। আগে গুলী করে, পরে কথা বলে। নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন আরও বলেন, যদি ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে চায়, তাহলে তাদের নিচের লেভেলে (বিএসএফ) অ্যাকশন নিতে হবে। তবে এ ধরনের অ্যাকশন তারা আগে কখনো নেয়নি। এমনকি ফেলানীর ঘটনায়ও কিছু হয়নি। পলিটিক্যাল লেভেল থেকে শক্ত বার্তা না দিলে সীমান্তে হত্যার কোনো সুরাহা হবে না। এ হত্যাকা- বাড়তে থাকলে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ভারতবিদ্বেষী মনোভাব আরও প্রকট হবে’ যোগ করেন তিনি। সীমান্ত হত্যার কারণ হিসেবে ‘অপরাধ’-কে দায়ী করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর। তিনি বলেন, অপরাধ কমলে সীমান্ত হত্যা কমে আসবে। ভারতের সীমান্তে কিছু হত্যার ঘটনা ঘটছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। আমাদের (বাংলাদেশ-ভারত) মধ্যে ভালো বন্ধুত্ব রয়েছে। আমার বিশ্বাস, একসঙ্গে কাজ করলে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে পারব।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সিনিয়র কো-অর্ডিনেটর আবু আহমেদ ফয়জুল কবির গণমাধ্যমকে বলেন, বিএসএফ দ্বারা হত্যার পর কোনো বাংলাদেশির কাছে আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া গেছে এমন কোনো নজির বা ঘটনা নেই। যারা মারা যান, তাদের শতভাগই নিরীহ (ইনোসেন্ট)। যেহেতু বাংলাদেশের নাগরিকদের কাছে কোনো অস্ত্র থাকে না সেক্ষেত্রে বিএসএফ সদস্যরা তাদের আটক করে পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে পারে। আমরা নির্যাতন ও গুলী চাই না। এমনকি সীমান্তে ভারতের অনুপ্রবেশকারী নাগরিক থাকলে বিজিবি তাদের আটক করে ফিরিয়ে দেয়, হত্যার নজির নেই। অথচ আগ্নেয়াস্ত্র না থাকা সত্ত্বেও বিএসএফ বাংলাদেশিদের হত্যা করছে। বিএসএফের উচিত বাংলাদেশ ও ভারতের ঐতিহ্যবাহী সম্পর্কের কথা বিবেচনায় নিয়ে নমনীয় আচরণ করা।
সোর্স : দৈনিক সংগ্রাম