স্টাফ রিপোর্টার: স্বস্তি নেই নিত্যপণ্যের বাজারে। একের পর এক বিভিন্ন জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলছে। নতুন করে বাড়ছে চাল-ডিম ও সবজির দাম। চালের দাম বস্তাপ্রতি ১শ থেকে ১৫০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই হিসেবে প্রতি কেজিতে বেড়েছে ২ থেকে ৩ টাকা। আর ডিমের দাম ডজনে বেড়েছে ২০ টাকা। এদিকে সবজির দামও অস্বাভাবিক বেড়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে নিত্যপণ্যের কয়েকটির দাম নির্ধারণ করে দেয়ার ঘোষনা দেয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহে এসব দাম নির্ধারণ করা হবে বলে জানা গেছে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বাজারে দেখা গেছে, চাল ও ডিমের দাম বেশি। মোটা-সরু সব চালের দামই বেড়েছে কেজিতে ২-৩ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ২ টাকা বেড়ে স্বর্ণা ৫০-৫২ টাকা ও বি আর-২৮ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬২ টাকায়। অথচ এর আগে প্রতি কেজি গুটি স্বর্ণা ৪৮-৫০ টাকা ও বি আর-২৮ এর দাম ছিল ৫৮-৬০ টাকা। এছাড়া আগের চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে মিনিকেট ও নাজিরশাইল। এসব চাল মানভেদে বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৭০-৮৪ টাকায়। পাইকারী চাল ব্যবসায়ীরা জানান, পাইকারি বাজারে চালের দাম বেড়েছে। এখন চালের সিজন (মৌসুম) শেষ। চাল আমদানি হলেও বাজারে সেগুলো আসছে না। এজন্য দাম বাড়তি। মিলপর্যায়ে বস্তাপ্রতি চালের দাম ১০০-১৫০ টাকার মতো বেড়েছে। অগ্রিম টাকা দিয়েও মিলছে না চাহিদামতো চাল। মোকামে যে পরিমাণ চালের অর্ডার দেওয়া হচ্ছে তা পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে বাজারে আবারও অস্থির হয়ে উঠেছে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম। তিনদিনের ব্যবধানে খুচরা বাজারে ডজনপ্রতি ডিম ১৩০ টাকা থেকে বেড়ে এখন ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর আগে গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে অস্থিতিশীল ছিল ডিমের বাজার। সে সময় ডিমের ডজন ১৬০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। এর আগে দেশে কখনো ডিমের দামের এতটা বৃদ্ধি দেখা যায়নি। এখন আবার সেই পথে হাঁটছে পণ্যটি।
বাজারে দেখা গেছে, খুচরায় প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। ডজন নিলে ১৪৫-১৫০ টাকা। যদিও কিছু কিছু বাজারে ডজনে ৫-১০ টাকা কম নিতে দেখা গেছে। তবে সে সংখ্যা খুব কম।
ডিম ব্যবসায়ীরা জানান, বুধবার থেকে ডিমের দাম হুট করে বেড়েছে। তার আগেও দুদিন বেড়েছে দাম। তবে সেটা ৫-৭ টাকা। শেষ বৃহস্পতিবার সকালে পাইকারিতে ডিমের ডজন ১৪০ টাকায় ঠেকেছে। পাইকারিতে প্রতিটি ডিমের দাম পড়ছে ১১ টাকা ৭০ পয়সা। যা অন্যান্য খরচ মিলে এখন সাড়ে ১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে ডিমের সরবরাহ কম। সেজন্য দাম বেড়েছে।
সবজি বাজারে দেখা গেছে, অধিকাংশ সবজির দাম বাড়তি। বেগুন প্রতি কেজি ১০০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, মুলা ৬০, শসা ৭০, উস্তা ৮০, করলা ৮০, ঢেঁড়স ৬০, পটল ৬০, টমেটো ১২০, সিম ১৬০, কচুর মুখি ৬০, পেঁপে ৩০, চিচিঙ্গা ৬০, বরবটি ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে লাউ ৬০, বাঁধাকপি ও ফুলকপি ৫০ টাকা ও চাল কুমড়া ৪০ টাকা পিস হিসেবে এবং মিষ্টি কুমড়ার ফালি ৩০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। আর কাঁচকলা ৪০ ও লেবু ৩০ টাকা হালি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে।
সবজি বাজারে সবচেয়ে বেশি দামে ১২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে গাজর ও টমোটো। রকমভেদে মরিচের কেজি বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত। কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে আলু ৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এদিকে আদার কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। প্রতি কেজির দাম ১৪০ টাকা, যা কয়েক দিন আগেও ১২০ টাকা ছিল। তবে পেঁয়াজ ও রসুন আগের দরেই বেচাকেনা হয়েছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা ও রসুন ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। এদিকে গরু ও খাসির গোশত আগের বাড়তি দামে বিক্রি হলেও বেড়েছে মুরগির দাম। গরু গোশত বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা আর খাসির গোশত বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা কেজি। এদিকে কেজিতে ৪০ টাকা বেড়েছে সোনালি মুরগির দাম। মুরগী ব্যবসায়ীরা জানান, সোনালি মুরগি কেজিতে ৩০-৪০ টাকা বাড়ছে। গত সপ্তাহে দাম ছিল ২৯০ থেকে ৩০০ টাকা, এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৩০ টাকা কেজি। এ ছাড়া প্রতি কেজি ব্রয়লার ১৭৫ টাকা, দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা, লাল লেয়ার মুরগি ২৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এদিকে মাছের বাজারে দেখা গেছে, গত এক মাসে সব ধরনের মাছের দাম কেজিতে ৩০-৫০ টাকার বেশি বেড়েছে। বাজারে ২০০ টাকার নিচে তেলাপিয়া মাছ পাওয়া যাচ্ছে না; যা গত মাসের শুরুর দিকেও ১৫০-১৬০ টাকায় বিক্রি হতো। এ ছাড়া ২৫০ গ্রাম ইলিশের কেজি ৫০০, ৮০০ গ্রামের ইলিশের কেজি ১ হাজার ৪৫০, পাঙ্গাশ ১৮০, মাঝারি রুই ২৮০, চাষের কই ২৩০, নলা মাছের কেজি ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজার নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গতকাল বলেছেন, বিশ্ব বাজারের সাথে সঙ্গতি রেখে আগামী ৭ দিনের মধ্যে ৯টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ঠিক করে দেওয়া হবে। বাজার অস্থিতিশীলতা নিয়ন্ত্রণে সকল ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে পণ্যের মূল্য তালিকা ঝোলানো বাধ্যতামূলক করা হবে। তিনি বলেন, আমরা ট্যারিফ কমিশনকে ১৫ দিন সময় দিয়েছি। আরও হয়তো ৭ দিন সময় লাগবে এ কাজে। আমরা ইতোমধ্যে খাবার, স্টিলসহ ৯টি পণ্যের দাম ঠিক করে দিয়েছি। যাতে ব্যবসায়ীদের অনৈতিক সুযোগ নেওয়া কমে যায়।
সোর্স : দৈনিক সংগ্রাম