ইভিএম নিয়ে নয়া বিতর্কে জড়িয়েছে নির্বাচন কমিশন। বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল ইভিএম’র বিপক্ষে মত দিলেও ইসি তাদের কর্মপরিকল্পনায় পক্ষে মত দেয়া দলের সংখ্যা বেশি দেখিয়েছে। এতে করে নির্বাচন কমিশনের ওপর রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষের আস্থার সংকট আরও বাড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ইসি’র এমন সিদ্ধান্তে আগামী নির্বাচন হবে আরও সংকটাপন্ন। এমনিতেই বর্তমান নির্বাচন কমিশন চরম আস্থার সংকটের সম্মুখীন। বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল বলছে, এই কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তারা সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে এসেছে। এজন্য ইভিএম ব্যবহারের মতো বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিবও আস্থার সংকটের কথা স্বীকার করে বুধবার বলেছেন, ‘ইসি অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন; আস্থাশীলতার ঘাটতিতে রয়েছে।’ নির্বাচন কমিশন নিয়ে যখন নানা বিতর্ক চলছে ঠিক তখনই নয়া বিতর্কের সৃষ্টি করলো ইসি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে গত বুধবার প্রকাশিত কর্মপরিকল্পনায় ইসি উল্লেখ করেছে, চলতি বছরের জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত সংলাপে ১৭টি দল কোনো না কোনোভাবে ইভিএম’র পক্ষে মত দিয়েছিল।
এর মধ্যে সরাসরি ইভিএম’র পক্ষে ছিল ১২টি দল। কিন্তু সংলাপে দেয়া রাজনৈতিক দলগুলোর লিখিত প্রস্তাব পর্যালোচনা এবং দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে, ইসি যে ১৭টি দলকে ইভিএম’র পক্ষে বলে প্রচার করেছে, তার মধ্যে ৩টি দল সরাসরি ইভিএম’র বিপক্ষে। ১টি দলের ইভিএম নিয়ে কোনো মতামত ছিল না। আর ৯টি দল ইভিএম নিয়ে বিভিন্ন শর্তের কথা বলেছিল। সরাসরি ইভিএম’র পক্ষে অবস্থান ছিল মাত্র চারটি দলের। এই চারটি দল হচ্ছে- আওয়ামী লীগ, তরীকত ফেডারেশন, সাম্যবাদী দল এবং বিকল্পধারা। নির্বাচন কমিশন তাদের প্রকাশিত কর্মপরিকল্পনায় দাবি করেছে, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট সরাসরি ইভিএম’র পক্ষে। কিন্তু গত ১৮ই জুলাই দলটি সংলাপে ইসিকে যে লিখিত প্রস্তাব দিয়েছে, তাতে তারা ইভিএম’র সরাসরি বিরোধিতা করেছিল।
দলটি ইসি’র কাছে যেসব প্রস্তাব দিয়েছিল, তাতে ইভিএম প্রসঙ্গে বলা হয়, ইভিএম মেশিনে নয় বরং স্বচ্ছ ব্যালট পেপারের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মতামত নিজেদের মতো করে পুরোপুরি উল্টে দিয়েছে। ইসি’র কর্মপরিকল্পনায় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসকেও ইভিএম’র পক্ষে দেখিয়েছে। ১৯শে জুলাই সংলাপে অংশ নিয়ে দলটি ইসি’কে যে লিখিত প্রস্তাব দিয়েছিল, সেখানে ইভিএম’র বিষয়ে কিছু ছিল না; বরং দলটির প্রস্তাব ছিল আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যালট পেপারের মাধ্যমে করার। ইভিএম’র ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর দেয়া মতামত কমিশনের পাল্টে দেয়ার বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক-এর (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার মানবজমিনকে বলেন, নির্বাচন কমিশনের যদি সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্য থাকতো তাহলে এই ধরনের কাজ করতো না।
আমার আশঙ্কা তারা পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এছাড়া বাধ্য হয়ে এমনটা করছে কি-না এটাও দেখার বিষয়। সরকারের চাপও থাকতে পারে। কারণ, ইভিএম’র মাধ্যমে জালিয়াতি করতে পারবে। তিনি বলেন, ইভিএম নিয়ে একটা বড় বাণিজ্য আছে। হাজার হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য। এজন্যও বেশি দলের মতকে পক্ষে দেখানো হতে পারে। তবে এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এতে রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষের আস্থার সংকট আরও বাড়বে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান বলেন, দলগুলোর লিখিত প্রস্তাব ও অডিও রেকর্ড শুনে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাহেব ঠিক করেছেন। বিষয়টি উনি ভালো বলতে পারবেন। আমরা শুধুমাত্র বিষয়টি দেখে দিয়েছি। তিনি বলেন, আমি পত্রিকার মাধ্যমে বিষয়টি ইতিমধ্যেই জানতে পেরেছি। আগামী রোববার আমরা অডিও রেকর্ড আবারো শুনবো এবং দেখবো কোন দল পক্ষে বলেছে, আর কোন দল বিপক্ষে বলেছে। তারপর বিষয়টি নিয়ে আমরা কথা বলবো।
সোর্স : মানব জমিন