গ্যাসের অভাবে শিল্পোৎপাদনে ধস নেমেছে। গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো বলছে, চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে শিল্পকারখানায় সরবরাহ দিতে পারছে না তারা।
শিল্পের পাশাপাশি রাজধানীর অনেক আবাসিক এলাকায় সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গ্যাসের অভাবে চুলা জ্বলেনি। বৃহস্পতিবার বিকালের দিকে কিছুটা উন্নতি হলেও সন্ধ্যার পর ফের সংকট দেখা দেয়। একই অবস্থা বিদ্যুৎ খাতেরও।
দেশব্যাপী ১ ঘণ্টা করার কথা থাকলেও খোদ রাজধানীর অনেক জায়গায় ২/৩ ঘণ্টাও লোডশেডিং হয়েছে। ঢাকার বাইরে এর কোনো শিডিউলই ছিল না। কোথাও কোথাও দিনে ৪/৫ বারও লোডশেডিং হয়েছে। এ অবস্থায় গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে।
মালিকরা বলেছেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দেশের অনেক শিল্পকারখানা চালু রাখা সম্ভব হয়নি। এদিকে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সাশ্রয়ে নেওয়া সরকারি সিদ্ধান্তগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে কি না, তা মনিটরিং করার জন্য ৫ সদস্যবিশিষ্ট উচ্চপর্যায়ের একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে টাস্কফোর্সের আহ্বায়ক করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার অনলাইনে বিদ্যুৎ সচিব মো. হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে বিদ্যুতের সাশ্রয়ী ব্যবহার সংক্রান্ত পর্যালোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। ২০ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউসের সভাপতিত্বে ব্যয় সংকোচনসংক্রান্ত সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।
সভায় লোডশেডিংয়ের তথ্য এসএমএস-এর মাধ্যমে গ্রাহকদের অবহিত করা, রাত ৮টার পর দোকানপাট, শপিংমল, মার্কেট, বিপণিবিতান বন্ধের বিষয়টি মনিটরিং জোরদার করার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরমে সভা করা, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে বাতি ও এসি সর্বোচ্চ কম ব্যবহার নিশ্চিত করাসহ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের বিষয়ে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করার সুবিধার্থে বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে (প্রশাসন) আহ্বায়ক করে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।
পর্যালোচনাসভায় অন্যদের মধ্যে পিডিবির চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহমান, আরইবির চেয়ারম্যান মোহা. সেলিম উদ্দিন, পাওয়ার সেলের ডিজি মোহাম্মদ হোসাইনসহ দপ্তর/সংস্থার প্রধানরা সংযুক্ত ছিলেন।
এদিকে দেশব্যাপী শিল্পকারখানায় গ্যাস সংকট সম্পর্কে শিল্পমালিকরা বলেছেন, সাধারণত জেনারেটর বা বয়লার চালানোর জন্য পোশাক কারখানাগুলোয় ১৫ পিএসআই চাপের গ্যাস প্রয়োজন। কিন্তু এ চাপ ২-৩ পিএসআইয়ে নেমে আসায় ধুঁকে ধুঁকে চলছে গ্যাসচালিত মেশিনের কারখানাগুলো। এতে শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে ব্যাপকভাবে।
পেট্রোবাংলা বলেছে, গ্যাসের এই সংকট কাটানোর জন্য তারা বিকল্প উৎস থেকে গ্যাস উৎপাদনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্যাসের উৎপাদন বাড়তে পারে। তখন এই সমস্যা থাকবে না।
দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাস বিতরণ কোম্পানি তিতাস বৃহস্পতিবার চাহিদার অর্ধেক গ্যাসও পায়নি। বৃহস্পতিবার তিতাস এলাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রেগুলোর জন্য গ্যাসের চাহিদা ছিল ৭৫০ এমএমসিএফডি। সেখানে তারা পেয়েছে মাত্র ২৯৪ এমএমসিএফডি। অন্যান্য খাতে গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে চাহিদার অর্ধেকেরও কম।
যে কারণে ঢাকার উত্তর অংশসহ আশুলিয়া, সাভার, জয়দেবপুর, সফিপুর, কাশিমপুর, কোনাবাড়ী, টাঙ্গাইল, এলেঙ্গা, নরসিংদী এবং এর আশপাশ এলাকায় তীব্র গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। গ্যাসের আধার হিসাবে পরিচিত জালালাবাদ গ্যাস বিতরণ কোম্পানিও বৃহস্পতিবার গ্যাস পেয়েছে মাত্র ২৫২ এমএমসিএফডি। অথচ তাদের চাহিদা ছিল ৪শ এমএমসিএফডির বেশি।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এসব অঞ্চলের পোশাক কারখানাগুলোয় গ্যাসের চাপ প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে ২-৩ পাউন্ডে (পিএসআই) নেমে এসেছে। এ কারণে বেশির ভাগ শিল্পকারখানা বন্ধ রাখতে হয়েছে।
আশুলিয়ার একটি পোশাক কারখানার কর্মকর্তা জানান, সকাল থেকেই গ্যাস কম থাকায় বয়লার চালু করা যায়নি। ফলে শ্রমিকরা কাজে এলেও বসে আছেন। গাজীপুরের সফিপুর এলাকার একটি শিল্পকারখানার মালিক জানান, কয়েকদিন ধরে চলছে গ্যাসের সংকট। ফলে উৎপাদন কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
এদিকে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে রাজধানীর ডেমরা ও আশপাশের এলাকায় প্রচণ্ড গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। আর চলমান লোডশেডিংসহ বাড়তি লোডশেডিংয়ের কারণে মানুষ ঘরে-বাইরে গরমে হাঁসফাঁস করছে বলে এলাকাবাসী জানান। এছাড়া সরকারি নির্দেশনামতো রাত ৮টার মধ্যে মার্কেট, শপিংমল ও এলাকার দোকানপাট বন্ধ করতে হচ্ছে বলে হতাশ হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বৃহস্পতিবার ডেমরার টেংরা, বাহির টেংরা, ফার্নিচার মোড়, কায়েতপাড়া, নলছাটা, ঠুলঠুলিয়া, খিলগাঁও থানাধীন বালুরপাড়, ইদারকান্দি, নাসিরাবাদ, দাসেরকান্দি এলাকায় সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত লোডশেডিং করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এদিন ডেমরার কোনাপাড়া, সিরাজ উদ্দিন রোড, শাহজালাল রোড, আল আমিন রোড ও মোমেনবাগ এলাকায় বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ ছিল না। মাতুয়াইল দরবার শরিফ রোড, গোল্ডেন ব্রিজ ও আদর্শবাগ এলাকায় বেলা ১২ থেকে ১টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ ছিল না।
রাজধানীর মিরপুরে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের নিয়ম মানা হচ্ছে না। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত জনজীবন।
বৃহস্পতিবার সকালের দিকে মিরপুর ১১ নম্বর নান্নু মার্কেট থেকে মিরপুর ১০ নম্বরের (অরজিনাল) আশপাশের এলাকায় দুইবার লোডশেডিং হয়। সকাল ১০টায় একবার আর দুপুর ২টায় আরেকবার। প্রতিবারই লোডশেডিংয়ের সময় ছিল ১ ঘণ্টারও কিছু বেশি।
মিরপুর ১১ নম্বর নান্নু মার্কেটের মা-মণি ফ্যাশনের প্রোপ্রাইটর কবির আহমেদ বলেন, বুধবার একবার লোডশেডিং হলেও বৃহস্পতিবার দুইবার হয়েছে। দুবারই এক ঘণ্টার ওপরে বিদ্যুৎ ছিল না। এমনিতে অনেক গরম। গরমে সাধারণত ক্রেতারা আসতে চায় না। তার ওপরে বিদ্যুৎ নেই। আর বিদ্যুৎ না থাকায় অনেকে দোকান বন্ধ করে চলে গেছে।
এদিকে ঢাকায় বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে শিডিউল মানা হলেও ঢাকার বাইরের চিত্র ছিল ভিন্ন। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় ৪/৫ ঘণ্টার বেশিও লোডশেডিং করতে দেখা গেছে বিতরণ কোম্পানিগুলোকে।
সোর্স : যুগান্তর