রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পর্যায়ক্রমে চলছে লোডশেডিং। গরম ও লোডশেডিংয়ে দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে জনজীবন। বিদ্যুতের চাহিদা নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিভিন্ন এলাকাকে নির্ধারিত সময়ে লোডশেডিং দেয়ার জন্য নোটিশও দেয়া হয়েছে। তবে লোডশেডিংয়ে বিদ্যুতের চাহিদা সহনীয় পর্যায়ে থাকবে এমন নির্দেশনাকে গ্রাহকরা স্থায়ী সমাধান বলে মনে করছেন না। দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সরকারের দেয়া কোন নির্দেশনাই লোডশেডিংয়ের সময় নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকছে না। এক ঘণ্টার কথা বলা হলে ২ থেকে ৩ ঘণ্টাও সময় কেটে যায়। আর রাজধানীর ঢাকায় বিভিন্ন এলাকা ভাগ করে চলে লোডশেডিং।
তাই লোডশেডিংয়ের সময় গরম ও রাতের অন্ধকার থেকে বাঁচতে বিকল্প ব্যবস্থা করছেন অনেকে। এই সময়টায় যেন পরিবারের লোকজন নিয়ে কষ্ট করতে না হয় সেজন্য চার্জার ফ্যান, লাইট, আইপিএস ও সোলারের সাহায্যে চলে এমন যন্ত্রের খুঁজ করছেন অনেকে। এতে হঠাৎ করে চাহিদা বেড়ে গেছে চার্জার ফ্যান, লাইট, আইপিএসসহ বিভিন্ন ইলেক্টনিক জিনিসপত্রের চাহিদা। এসব জিনিসের ক্রেতা ও চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে দামও বেড়েছে।
ক্রেতা সাধারণের অভিযোগ, সরকারি সিদ্ধান্তের সুযোগে ব্যবসায়ীরা রিচার্জেবল সকল পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। অনেকে ব্যবসায়ী বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করছেন। তাদের গোডাউনে পণ্য থাকলেও পর্যাপ্ত সরবরাহ করছেন না। কিছুদিন আগে যে চার্জার ফ্যানের দাম ছিল ২৮শ’ টাকা সেটি এখন বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার টাকায়। কিন্তু ব্যবসায়ীরা বলছেন তারা ইচ্ছে করে দাম বাড়ান নি। চাহিদার তুলনায় তারা পণ্য কম পাচ্ছেন এবং পাইকারি দামও বেশি নেয়া হচ্ছে। তাই দাম বাড়ছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নির্ধারিত দামের চেয়ে কয়েক হাজার টাকা পর্যন্ত বেশিতে পণ্য বিক্রি করছেন। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা। ক্রেতারা অভিযোগ করছেন কোম্পানি ভেদে চার্জার ফ্যানের ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। আর লাইট বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দামে।
ইলেকট্রনিক্স পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। ইতোমধ্যে স্টেডিয়াম মার্কেটে অভিযান চালায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। এসময় কয়েকটি ইলেকট্রনিক্স দোকান মালিককে জরিমানা করা হয়। একই কারণে নবাবপুর ইলেকট্রনিক্স মার্কেটেও অভিযান চালায় ভোক্তা অধিদফতর। সেখানেও বেশি মুনাফা করায় ইলেকট্রিক এজেন্সিকে জরিমানা করা হয়। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান জানিয়েছেন, দোকানিদের কাছে বা স্টকে যে পণ্যগুলো আছে সেগুলোর তো দাম বাড়েনি। চার্জার লাইট-ফ্যানের দাম বাড়ানো অনৈতিক। মানুষকে জিম্মি করা, ঠকানোর বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলবে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, হঠাৎ করেই রিচার্জেবল জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। ঢাকার বাইরের খুচরা ব্যবসায়ীরা আসছেন আগের চেয়ে বেশি। তারা নামীদামী কোম্পানির পণ্যেরর সাথে সাথে চায়না ও দেশিয় পণ্য কিনছেন। অধিকাংশ ক্রেতাই চার্জার ফ্যান চাইছেন। এছাড়া এয়ার কুলার, আইপিএস ও সোলার প্যানেল কিনছেন অনেকে। আর হঠাৎ করে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও কিছুটা বাড়াতে হচ্ছে।
রাজধানীর নবাবপুর, বায়তুল মোকাররম, গুলিস্তান ও মালিবাগের বেশ কিছু ইলেকট্রনিক্স দোকানে দেখা গেছে এসব পণ্যের প্রচুর ক্রেতা। তারা রিচার্জেবল ফ্যান-লাইট, কুলার, আইপিএস এবং সোলার কিনছেন। বাজারে এখন সিঙ্গার, ওয়াল্টন, রহিম আফরোজ, ফিলিপস, বাটারফ্লাই, নাভানা, সুকান ও অনিকসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্য বিক্রি হচ্ছে। এর সাথে সাথে চায়নিজ কিছু পণ্য ভিন্ন ভিন্ন নামে বিক্রি করা হচ্ছে।
ক্রেতারা বলছেন, সময়সূচি ঘোষণার পর এলাকাভিত্তিক এক ঘণ্টা সময়ের বাইরেও লোডশেডিং হচ্ছে। ঢাকার কোথাও কোথাও তিন ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। আর ঢাকার বাইরে তো চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। এজন্য বাধ্য হয়ে গরম থেকে বাঁচতে এসব যন্ত্র কিনছেন তারা। তবে চার্জার ফ্যান, লাইট কিনতে মার্কেটে গিয়ে দেখা গেছে আগের তুলনায় এসব পণ্যের বাজার দর বেড়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি মানুষ চার্জার ফ্যান কিনছেন।
রিচার্জেবল ফ্যান কিনতে আসা সোহাগ বলেন, বিদ্যুতের লোডশেডিং শুরু হওয়ার পর থেকে বাসার বৃদ্ধ ও শিশুদের বেশি সমস্যা হচ্ছে। গরমের মধ্যে তাদের কষ্টের কথা চিন্তা করে রিচার্জেবল ফ্যান কিনতে আসলাম। তবে এসে দেখি ফ্যানের দাম আগের চেয়ে একটু বেড়েছে। এখন যে পরিস্থিতি দাম বাড়লেও পরিবারের প্রয়োজনের তাগিদে কিনতে হবে।
খিলগাঁও থেকে আসা বোরহান হোসেন বলেন, আমার বাচ্চার বয়স চার বছর। সে এখন স্কুলে যাচ্ছে। তার জন্য একটি রিচার্জেবল ফ্যান ও লাইট কিনতে আসলাম। সন্ধ্যায় বাচ্চাটা একটু পড়তে বসে সেসময়ের জন্য লাইট ও ফ্যানের দরকার হয়। তাই একটি ফ্যান ও লাইট কিনবো। আগে আমরা বিদ্যুৎ না থাকলে মোমবাতি ব্যবহার করতাম। কিন্তু এখন মোমবাতি তেমন একটা ব্যবহার করা হয় না।
কাপ্তান বাজার এলাকার ব্যবসায়ী আবুল হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, আগের তুলনায় চার্জার ফ্যানের চাহিদা অনেক বেড়েছে। চার্জার লাইটেরও চাহিদা বাড়ছে। প্রতিদিন আমাদের বিক্রি ভালো। খুচরার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা দোকানীদের কাছেও বিক্রি করছি। তবে আমাদের এই মার্কেটে চাইনিজ ও দেশি তৈরি পণ্যই বেশি চলে। চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে বেশিরভাগ পণ্যেরই দাম বেড়েছে। চায়নার একটি চার্জার ফ্যানের দাম আগে ছিল তিন হাজার টাকা। সেটি এখন কিনতে হচ্ছে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।
সোর্স : ইনকিলাব