পরনির্ভরতা, কর্মহীনতা ও অলসতার স্থান ইসলামে নেই বরং ইসলাম এসবকে কঠোরভাবে নিরুৎসাহিত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।
তিনি রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের পল্লবী থানা দক্ষিণ আয়োজিত আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও নবীন উদ্যোক্তাদের মাঝে আর্থিক সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলে। থানা আমীর অধ্যাপক আশরাফুল আলমের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি আবুল কাসেম পাঠানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি ডা. ফখরুদ্দীন মানিক। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন থানা কর্মপরিষদ সদস্য আবদুল গফুর, রুহুল আমীন, সরফরাজ খান পাপ্পু ও ফারুক হোসেন খান প্রমূখ।
জনাব সেলিম উদ্দিন বলেন, মূলত কর্মসংস্থানহীনতা ও বেকারত্বের মাধ্যমেই সমাজ-রাষ্ট্রে নানাবিধ অপরাধ প্রবণতা, অশান্তি, বিশৃঙ্খলা ও অনৈতিক কাজ ছড়িয়ে পড়ে। এসব কর্মহীন মানুষের হাতকে কর্মিষ্ঠ করার জন্য জামায়াতে ইসলামী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। মূলত, আর্ত-মানবতার কল্যাণ ও মানুষের মুক্তিই হলো ইসলামী আদর্শের মূলমন্ত্র। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। পবিত্র কালামে হাকীমের সূরা আল-ইমরানের ১১০ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমরাই সর্বোত্তম জাতি। তোমাদের কর্মক্ষেত্রে আনা হয়েছে মানুষের হিদায়াত ও সংস্কার সাধনের জন্য।’ কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, একশ্রেণির মানুষ মানুষের কল্যাণে কাজ করছে না বরং নিজেদের মেধা, মনন ও প্রজ্ঞাকে ধ্বংসাত্মক কাজে ব্যবহার করছে। স্বার্থপরতা, সংকীর্ণতা, দলীয়করণ, পারিবারিকীকরণ, আত্মীয়করণ, গোষ্ঠীস্বার্থ ও ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থ জাতীয় স্বার্থের বিপরীতে প্রাধান্য পাচ্ছে। কীভাবে নিজেদের প্রভাব-প্রতিপত্তি ও অবৈধ অর্থবিত্তের মালিক হওয়া যায় সেই অশুভ প্রতিযোগিতা এখন সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়েছে। তাই দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থেই আমাদেরকে এই অশুভবৃত্ত থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে। তিনি অসহায় ও বেকারদের হাতকে কর্মের হারিয়ারে পরিণত করতে সরকার, বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান, দাতব্যসংস্থা সহ সমাজের বিত্তবান মানুষকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
মহানগরী আমীর বলেন, মূলত, ইসলামী আদর্শ বিচ্যুতির আমাদের সমাজ-রাষ্ট্রে এই দুরাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ পৃথিবীতে কীভাবে চললে সফল, স্বার্থক ও সম্মানিত হবে সেই সর্বজনীন ও শ্বাসত জীবন ব্যবস্থার নামই হচ্ছে ইসলাম। কিন্তু আমাদের সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকলেও রাষ্ট্র পরিচালনায় ইসলামী আদর্শর কোন প্রতিফলন নেই বরং ইসলাম বিরোধীতাকেই রাষ্ট্রাচারের অংশ বানিয়ে ফেলা হয়েছে। আমাদের শিক্ষা কারিকুলামে ইসলামী আদর্শের কোন প্রতিফলন নেই বরং অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে ধর্মশিক্ষাকে বিতারণ করা হয়েছে। ফলে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ও অনৈতিকতায় নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। এমতাবস্থায় দেশ ও জাতির মুক্তি ও সব ধরণের অপশাসন এবং দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রাম করতে হবে। তিনি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকারের গণদাবি আদায় করতে সকলকে রাজপথে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।
তিনি আরো বলেন, ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান। যা আমাদের সব সময় ভ্রাতৃত্ব ও সাম্যের শিক্ষা দেয়। এক মুমিন আরেক মুমিনের ভাই। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে বলা হয়েছে, ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই।’ (সূরা হুজরাত, আয়াত-১০) অনত্র বলা হয়েছে, ‘ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক।’ (সূরা তওবা, আয়াত-৭১)। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন, যে তার বান্দাদের প্রতি দয়া করে।’ (সহীহ আল বোখারি, হাদিস-১৭৩২)। তাই অভাবগ্রস্ত, বিপন্ন ও কর্মসংস্থানহীন মানুষের কল্যাণে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। তিনি দ্বীনকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে সকলকে ময়দানে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তোলার আহবান জানান।