বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর জনাব মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেছেন, আমরা মহান আল্লাহর কাছ থেকে এসেছি আবার তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে। তাই আল্লাহ তা’য়ালার কাছে যেন আমরা হাসি মুখে ফিরে যেতে পারি, আমাদেরকে তেমনিভাবে কাজ করতে হবে। এজন্য দুনিয়ার প্রতিটি সময়কে কাজে লাগাতে হবে। দুনিয়া কোন হাসি-তামাশার জায়গা নয় এখানে আমাদের সময়কে ব্যয় করতে হবে ইবাদাত বন্দেগিতে, ভালো কাজে, একে অন্যের কল্যাণ কামনায়। আল্লাহ তা’য়ালা পবিত্র কুরআনের সূরা আল ইমরানের ১১০ নাম্বার আয়াতে বলেছেন, “তোমরাই সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি, যাদেরকে মানব কল্যাণের জন্য বাছাই করা হয়েছে।”এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহনগরী উত্তর বেশ কিছু পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, গরীব কিন্তু সক্ষম ব্যাক্তিদেরকে কিছু পুঁজি দিয়ে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যাবস্থা করা যেন তারা স্বাবলম্বী হতে পারে। সেজন্যই আজকের এই আয়োজন।
তিনি আরও বলেন, মানুষ যখন বিপদে পড়ে তখন কেউ তার পাশে দাঁড়ালে বিপদ কাটিয়ে ওঠা তার জন্য অনেকটা সহজ হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের সমাজ আজ এমন পর্যায়ে গেছে, যে অন্যের বিপদে মানুষ এখন হাসে এবং বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির কাছে কেউ ছুটে যায় না। কিন্ত ইসলাম বলেছে, অন্যের বিপদে পাশে দাঁড়াতে। বিশেষ করে আত্নীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের বিপদে পাশে দাঁড়ানোর জন্য জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। ইসলাম সকল মুমিনদেরকে বেশি বেশি করে সাদকা করার জন্য বলেছে। কারণ তাদের সম্পদ তাদের একার না, এর মধ্যে গরীব দুঃখীদেরও হক রয়েছে। ইসলাম রাষ্ট্রকেও গরীব-দুঃখীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বলেছে। কিন্তু বর্তমান সরকার এসব থেকে অনেক দূরে। সরকার যদি শুধুমাত্র যাকাতের টাকা সংগ্রহ করে কাজে লাগাতো তাহেলেই দেশের দারিদ্র বিমোচন হয়ে যেত। এজন্য দেশে এমন এক সরকার প্রয়োজন যাদের এই বিষয়ে জ্ঞান আছে এবং কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই এগিয়ে যাচ্ছে। তাই আজ দেশের সর্বস্তরে আওয়াজ উঠছে, “আগামী দিনে দরকার জামায়াতে ইসলামীর সরকার”। বাংলাদেশের জনগণকে সাথে নিয়ে আগামী দিনে জামায়াতে ইসলামী একটি দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন এবং শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায়। এজন্য সবাইকে জামায়াতে ইসলামীর পাশে থাকার উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।
তিনি আজ মঙ্গলবার মিরপুর পশ্চিম ও কাফরুল পশ্চিম থানার উদ্যোগে আয়োজিত ‘আত্নকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও নবীন উদ্যোক্তাদের’ মাঝে আর্থিক সহায়তা, রিক্সা, ভ্যান, শেলাই মেশিন ও বিভিন্ন উপকরণ প্রদান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে আলাদা আলাদা দু’টি অনুষ্ঠানে উপরোক্ত কথা বলেন।
অনুষ্ঠান দু’টিতে ঢাকা মহানগরী উত্তরের মজলিসে শুরা সদস্য যথাক্রমে মিরপুর পশ্চিম থানা আমীর জনাব হাকিম আব্দুল মান্নান ও কাফরুল পশ্চিম থানা আমীর জনাব আব্দুল মতিন খানের সভাপতিত্বে এবং মিরপুর পশ্চিম থানা সেক্রেটারি জনাব জসিম উদ্দিন ও কাফরুল পশ্চিম থানা সেক্রেটারি জনাব খান হাবিব মোস্তফার সঞ্চালনায় এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও মহানগরী নায়েবে আমীর জনাব আব্দুর রহমান মুসা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও মহানগরী সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে জনাব লস্কর মোহাম্মদ তাসলিম ও জনাব মাহফুজুর রহমান। এছাড়াও অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মিরপুর পশ্চিম থানা নায়েবে আমীর জনাব তাজিরুল ইসলাম, থানা শুরা ও কর্মপরিষদ সদস্য হাফেজ মাওলানা ফরহাদ হোসাইন, মোহাম্মদ আলী বিশ্বাস, আল-আমিন এবং কাফরুল পশ্চিম থানার শুরা ও কর্মপরিষদ সদস্য জনাব সুলতান মাহমুদ ও রায়হান উদ্দিন প্রমুখ।
মহানগরী আমীর বলেন, আল্লাহ তা’য়ালা বাংলাদেশকে অমূল্য সম্পদে ভরপুর করে রেখেছেন। এদেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো দেশের মানুষ। একটা বড় অংশ যুবক এবং কর্মপ্রিয়। এদেশের যুবকদের যদি সঠিকভাবে কাজে লাগানো যেত, এদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে যদি কর্মমূখী করা যেত, তাহলে আজকে মানুষকে কারো কাছে হাত পাততে হত না। আমাদের দেশের মাটি অনেক উর্বর। এত উর্বর মাটি পৃথিবীর খুব কম দেশেই রয়েছে। তরপরও এদেশের অনেক অগণিত মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে জীবন যাপন করছেন। এ অবস্থার জন্য অন্যতম কারণ হল, যারাই এ দেশে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হয়েছে, তাদেরকে পরকালে মহান আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে এ অনুভূতি তাদের মাঝে খুবই দূর্বল। তাছাড়া দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় নৈতিক শিক্ষার উপস্থিতি নেই বললেই চলে। যেটুকু ছিল সেটিও প্রায় ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। ফলে দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, স্বজনপ্রীতির বলি হয়েছে এদেশের জনগণ।
পরিশেষে মহানগরী আমীর বলেন, এদেশের অনেক এমপি-মন্ত্রী রয়েছে, যাদের ছেলেমেয়ে পড়াশুনা করে বিদেশে। ফলে এদেশের শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি তাদের কোন ভ্রূক্ষেপ নেই । তাই আগামী দিনে জনগণকে এমন পরিস্থিতি থেকে উদ্ধারের জন্য প্রয়োজন, জনদরদী সরকার যারা এদেশে থেকে পরগাছার মত আচরণ করবে না। এদেশকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় জামায়াতে ইসলামী বদ্ধপরিকর। তাই জামায়াতে ইসলামীর দাওয়াত প্রতিটি ঘরে-ঘরে পৌছে দেওয়া আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব। এ আন্দোলনে সবাইকে অংশগ্রহণ করার উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।