বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর জনাব মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেছেন, ইসলামের ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী পবিত্র আশুরা। তার মধ্যে ৬১ হিজরীর ১০ই মোহাররম কারবালা প্রান্তরে রাসূল (সা.) এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র ইমাম হোসাইন (রা.) এর শাহাদাত বিশ্ব ইতিহাসের সবচেয়ে শোকাবহ ঘটনা। তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েও অন্যায় ও অসত্যের কাছে আত্মসমর্পণ করেননি। তাই পবিত্র আশুরার শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে যে কোন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সত্য ও ন্যায়ের প্রতি অবিচল থাকতে হবে। তিনি পবিত্র আশুরার শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ন্যায়-ইনসাফের ভিত্তিতে ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত গণতান্ত্রিক নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।
তিনি আজ রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত ‘পবিত্র আশুরার শিক্ষা ও তাৎপর্য’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে সভাপতির বক্তব্যে একথা বলেন। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের পরিচালায় সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আব্দুর রহমান মুসা, মিরপুর দক্ষিণ থানা আমীর আব্দুল হামিদ, সেক্রেটারি রাকিবুল ইসলাম, জামায়াত নেতা এসএম ফয়জুর রহমান, তাফাজ্জল হোসাইন, শরীদুল ইসলাম, বাবর আলী ও আমীর হোসেন বাবলু প্রমূখ।
সেলিম উদ্দিন বলেন, পবিত্র আশুরার দিন নানা দিক থেকেই ঘটনাবহুল ও তাৎপর্যপূর্ণ। হযরত আদমকে (আ.) দুনিয়ার প্রতিনিধি হিসাবে সৃষ্টি, জান্নাতে অবস্থান, পৃথিবীতে প্রেরণ ও তওবা কবুল সবই আশুরার তারিখে সংঘটিত হয়। এ দিনেই হযরত ইবরাহিমের (আ.) জন্ম, ‘খলিলুল্লাহ’ উপাধিতে ভূষিত ও নমরুদের অগ্নি থেকে রক্ষা পান। সুদীর্ঘ ৪০ বছর পর হজরত ইউসুফ (আ.)-এর সঙ্গে তার পিতা হযরত ইয়াকুব (আ.)-এর সাক্ষাৎ যেদিন হয়-সে দিনটি ছিল আশুরার দিন। হযরত আইয়ুব (আ.) কুষ্ঠরোগ থেকে আরোগ্য লাভ করেছিলেন আশুরার দিন। হযরত ইউনূস (আ.) ৪০ দিন মাছের পেটে থাকার পর মুক্তি লাভ করেন একই দিনে। আল্লাহ তায়ালা হযরত মুসা (আ.) ও তার অনুসারী বনি ইসরাইলদের ফেরাউনের অত্যাচার থেকে মুক্ত করে পানির মধ্যে রাস্তা তৈরি করে দিয়ে পার করে দেন এবং ফেরাউনকে তার দলবলসহ সাগরে ডুবিয়ে মারেন আশুরার দিন। তিনি তুর পাহাড়ে আল্লাহর সাথে কথা বলেছিলেন এ দিনেই। এ দিনে হযরত ঈসার (আ.) জন্ম হয় এবং ইহুদিরা তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করলে আল্লাহতায়ালা তাকে ফেরেশতা কর্তৃক সশরীরে আসমানে উঠিয়ে নেন। মূলত, এই পৃথিবীর অস্তিত্বের সঙ্গেও আশুরার দিনের গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। আশুরার দিনেই আল্লাহতায়ালা সৃষ্টি করেছেন নভোমন্ডল, ভূমন্ডল, পর্বতরাজি, লওহ-কলম ও ফেরেশতাদের। তাই নানা দিক থেকেই এই দিন খুবই মর্যাদাবান।
তিনি বলেন, পবিত্র আশুরার চেতনা নবী-রাসূল (সা.) গণের প্রদর্শিত ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠা এবং সর্বোচ্চ কুরবানির নজরানা পেশের চেতনা। এই দিনেই রাসূল (সা.) এর দৌহিত্র হযরত হোসাইন বিন আলী এবং তার সঙ্গীরা (রা.) স্বৈরশাসক এবং তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন এবং শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করা পর্যন্ত লড়ে গেছেন। তিনি দেশ ও জাতির ক্রান্তিকালের কথা উল্লেখ করে বলেন, দেশ ও জাতির ঘাড়ে এক অগণতান্ত্রিক, স্বৈরাচারি ও বাকশালী শক্তি জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসেছে। তারা দেশে সুশাসনের পরিবর্তে অপশাসন-দুঃশাসন উপহার দিয়েছে। সম্প্রতি সরকার জ্বালানীর মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করে পুরো দেশেই অচলাবস্থার সৃষ্টি করেছে। ফলে জনদুর্ভোগ এখন চরমে উঠেছে। তাই দেশে গণতন্ত্র, সুশাসন ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এই অগতান্ত্রিক শক্তিকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করতে হবে। তিনি কারবালার কোরবানীর শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে জুলুমবাজ ও ব্যর্থ সরকারের পতন এবং কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ের দলমত নির্বিশেষ সকলকে রাজপথে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান। অন্যথায় ফ্যাসীশক্তির হাত থেকে দেশ ও জাতিকে মুক্ত করা যাবে না।