বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেছেন, সরকার দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যেই নিজেদের লাগামহীন দুর্নীতি ও লুটপাট অব্যাহত রাখার জন্যই অস্বাভাবিকভাবে জ্বালানীর মূল্যবৃদ্ধি করেছে। সরকার অতীতে দেশের বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণের কথা বলে কুইক রেন্টালের নামে ৭০ হাজার কোটি টাকা গচ্ছা প্রদান করলেও দেশে এখন লোডশেডিং-এর মহোৎসব চলছে। তিনি অবিলম্বে সরকারকে কান্ডজ্ঞানহীন সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে জ্বালানীরর দাম স্থিতিশীল রাখার আহবান জানান। অন্যথায় সরকারকে জনরোষে পড়তে হবে।
তিনি আজ বেলা ১.৫০ টায় রাজধানীতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত জ্বালানীর তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ও অবিলম্বে বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহারের দাবিতে এক বিক্ষোভ পরবর্তী সমাবেশে এসব কথা বলেন। বিক্ষোভ মিছিলটি শ্যামলী বাস স্টেশন থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শিশু মেলার সামনে এসে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহনগরীর সহকারি সেক্রেটারি লস্কর মোহাম্মদ তসলিম, মাহফুজুর রহমান ও ডাঃ ফখরুদ্দিন মানিক, ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য জিয়াউল হাসান, মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ ও জামাল উদ্দীন, ঢাকা মহানগরী উত্তরের মজলিসে শূরা সদস্য ডাঃ শফিউর রহমান, মুহাম্মদ আতাউর রহমান সরকার, এ্যাডভোকেট ইব্রাহিম খলিল ও আব্দুল হান্নান, ছাত্রনেতা জাকির হোসেন ও আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রমূখ।
রেজাউল করিম বলেন, সরকার বিশ্ব বাজারে জ্বালানীর মূল্যবৃদ্ধির কথা বললেও তা মোটেই সত্য নয়। গত জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে বিশ্ব বাজারে রেড ক্রুড তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৮০ সেন্ট বা শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ কমে ১০৩ দশমিক ১৫ ডলার হয়েছে। ওয়েস্ট ইন্টারমিডিয়েট ক্রুডের দাম প্রতি ব্যারেলে ১ দশমিক ১৮ ডলার বা ১ দশমিক ২ শতাংশ কমে ৯৭ দশমিক ৪৪ ডলার হয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল আমদানিকারক দেশ চীনে করোনাজনিত লকডাউনের কারণে জুলাইয়ে উৎপাদন কমেছে। মার্কিট ম্যানুফ্যাকচারিং পারচেজিং ম্যানেজার্স সূচক (পিএমআই) আগের মাসের ৫১ দশমিক ৭ থেকে জুলাই মাসে ৫০ দশমিক ৪ এ নেমে এসেছে। অন্যদিকে জাপানের উৎপাদনও গত ১০ মাসের মধ্যে জুলাইয়ে সবচেয়ে কমেছে। তাই এই মহুর্তে জ্বালানীরর মূল্যবৃদ্ধির কোন যৌক্তিকতা নেই।
তিনি বলেন, অস্বাভাবিকভাবে জ্বালানীরর দাম বৃদ্ধির কারণে কৃষক থেকে শুরু করে সকল শ্রেণির মানুষই ভোগান্তির শিকার হবেন। দাম বাড়বে নিত্যপণ্যের। নেতিবাচক প্রভাব পড়বে গণপরিবহন, কৃষি ও সেচ খাতে। দেশের বিদ্যুৎখাতও এর আওতার বাইরে থাকেবে না। কারণ, বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি তেল ব্যবহার করা হয়। সরকারের অদুরদর্শিতার কারণেই এমনিতেই দেশের অর্থনীতিতে বেহাল দশার সৃষ্টি হয়েছে। তারা বাজারে স্বাভাবিক সরবরাহ নিশ্চিত করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এমতাবস্থায় জ্বালানীরর মূল্যবৃদ্ধি সার্বিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে। মূলত, বর্তমান সরকার ঔপনিবেশিক স্টাইলে দেশ শাসন করছে। তারা এখন নীলকর বণিকদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। তাই এই অগণতান্ত্রিক ও বাকশালী শক্তির হাত থেকে দেশ-জাতিকে বাঁচাতে গণবিরোধী সরকারের পতনের কোন বিকল্প নেই। তিনি সরকার পতনের লক্ষ্যে দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।
তিনি আরও বলেন, সরকার দেশের গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দিয়ে অবৈধ ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তারা জনগণের টাকায় পরিচালিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জনগণের ওপর লেলিয়ে দিয়ে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের স্টাইলে নির্বাচন করে ইভিএম তেলেসমাতির মাধ্যমে আবারো ক্ষমতায় যাওয়ার দিবাস্বপ্নে বিভোর। তারা এজন্য নতুন করে হত্যা ও গুমের পথ বেছে নিয়েছে। কিন্তু সচেতন জনতা তাদের সে স্বপ্নবিলাস কখনোই বাস্তবায়িত হতে দেবে না। তাই আসন্ন আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগণের পাশে থাকতে হবে। তিনি ব্যর্থতার দায় নিয়ে অবিলম্বে সরকারকে পদত্যাগ করে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে জনমত যাচাইয়ের আহবান জানান। অন্যথায় জনগণ রাজপথেই গণদাবি আদায় করবে-ইনশাআল্লাহ।