ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
দেশজুড়ে শিডিউল লোডশেডিং ঘোষণা করেছিল সরকার। টার্গেট ছিল বিদ্যুৎ সাশ্রয়। তবে ঘোষণার ১১ দিন অতিবাহিত হলেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণ হয়নি। রাত ৮টার পর দোকানপাট বন্ধ এবং অন্যান্য উপায়ে দিনে ১০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে চেয়েছিল সংশ্লিষ্ট বিভাগ। কিন্তু এতে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়েছে। এছাড়া দিনে ১০০০ মেগাওয়াটের মতো লোডশেডিং দেয়া হচ্ছিলো। এখন বাকি ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য নানা চিন্তা চলছে। বাড়ানো হতে পারে লোডশেডিং। এখন কোথায়ও এক ঘণ্টা, কোথায়ও দু’ঘণ্টা, চার ঘণ্টা বা তার চেয়েও বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎ থাকছে না। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)-এর হিসাব অনুযায়ী, গত ২৮শে জুলাই কর্মদিবসে সারা দেশে সন্ধ্যায় বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ধরা হয়েছিল ১৪ হাজার মেগাওয়াট।
এই সময়ে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ উৎপাদন ধরা হয়েছিল ১২ হাজার ৮৭৬ মেগাওয়াট। তাতে লোডশেডিং ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৩৬ মেগাওয়াট। সর্বনিম্ন উৎপাদন ধরা হয় ১০ হাজার ৭৬১ মেগাওয়াট বিদ্যুতের। পিডিবি’র ওয়েব সাইটে উল্লিখিত বিদ্যুতের লোডশেডিং পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ওইদিন ঢাকায় লোডশেডিং ধরা হয়েছে ২৮৭ মেগাওয়াট, চট্টগ্রামে ১১০ মেগাওয়াট, খুলনা এলাকায় ১৫২ মেগাওয়াট, রাজশাহী এলাকায় ১৪৪ মেগাওয়াট, কুমিল্লায় ১১৮ মেগাওয়াট, ময়মনসিংহে ১০৩ মেগাওয়াট, সিলেটে ৪৩ মেগাওয়াট, বরিশালে শূন্য এবং রংপুর এলাকায় ৮১ মেগাওয়াট বিদ্যুতের লোডশেডিং করার কথা বলা হয়েছে। যদিও দেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে সাড়ে ২৫ হাজার মেগাওয়াটের কিছু বেশি।
চলমান লোডশেডিংয়ে দেশে কতটুটু বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও কী পরিকল্পনা রয়েছে জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক (ডিজি) প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন মানবজমিনকে বলেন, আমরা বর্তমানে এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের লোডশেডিং করছি। রুটিন অনুযায়ী এতে কোথায়ও এক ঘণ্টা, কোথায়ও দু’ঘণ্টা বা তারচেয়ে বেশি লোডশেডিং করতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, দোকানপাট, শপিং মল এবং পাম্প বন্ধ রাখার ফলে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়েছে। কিন্তু এখান থেকে এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের চিন্তা রয়েছে। অর্থাৎ ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কম করা। পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক তাদের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে আরও জানান, বাকি অতিরিক্ত ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের জন্য সব জায়গায় সমানভাব রুটিন অনুযায়ী হয়তো তাদের লোডশেডিং করতে হবে। এই সিস্টেমেই সরকার এগুতে চায় বলে তিনি উল্লেখ করেন। তখন আর কারো বেশি লোডশেডিং হবে না। গত ১৮ই জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকের পর দেশে গত ১৯শে জুলাই থেকে বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় দেশজুড়ে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। প্রতিদিন এক সপ্তাহ জোন ভিত্তিক একঘণ্টা করে লোডশেডিং করার কথা বলা হলেও কোথায়ও কোথায়ও এর চেয়ে বেশি লোডশেডিং করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন গ্রাহকরা। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়।
এছাড়া রাত ৮টার পর শপিং মলসহ দোকানপাট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত কার্যকর এবং উপাসনালয়ে প্রার্থনার সময় ছাড়া এসি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানানো হয় সরকারের তরফে। রাত ৮টার পর দোকানপাট, মার্কেট, শপিং মল খোলা থাকলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হবে। রাত ৮টা থেকে কোনোরকম দোকানপাট, শপিং মল, আলোকসজ্জা- সব বন্ধ থাকবে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ বিভাগকে বলা হয়েছে, তারা খুব কঠিনভাবে এ বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবেন। যদি কেউ অমান্য করেন তাদের বিদ্যুতের লাইন বিচ্ছিন্ন করার কথা বলা হয়েছে।
সোর্স: মানবজমিন