বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেছেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতে সীমাহীন অব্যবস্থাপনা, লাগামহীন দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে জাতীয় গ্রীডে বিদ্যুৎ সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সরকার নানা অজুহাতে প্রতিদিন একঘন্টা করে লোডশেডিং-এর ঘোষণা দিলেও তা এখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ফলে সারাদেশে ইতোমধ্যেই গণদুর্ভোগ শুরু হয়েছে। তিনি বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতে দুর্নীতি বন্ধ করে অবিলম্বে সারাদেশে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান। অন্যথায় সরকারকে জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
তিনি আজ রাজধানীতে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসাবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতে অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ও অসহনীয় লোডশেডিং-এর প্রতিবাদে এবং নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবিতে এক বিক্ষোভ পরবর্তী সমাবেশ এসব কথা বলেন। বিক্ষোভ মিছিলটি বাড্ডা ওভার ব্রিজের নিচ থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে মেরুল বাড্ডায় এসে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি লস্কর মোহাম্মদ তসলিম, মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দীন মোল্লা ও ডাঃ ফখরুদ্দীন মানিক, ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য হেমায়েত হোসাইন, জিয়াউল হাসান, ইয়াছিন আরাফাত, জামাল উদ্দীন, ঢাকা মহানগরী উত্তরের মজলিসে শূরা সদস্য মুহাম্মদ আতাউর রহমান সরকার ও মেসবাহ উদ্দিন নাঈম, শিবিরের ঢাকা মহানগরী পশ্চিমের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন ও উত্তরের সভাপতি জাকির আহমেদ প্রমূখ।
সেলিম উদ্দিন বলেন, সরকারের উপর্যুপরি ব্যর্থতার কারণেই সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত না করেই বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন সমস্যাকে আরো জটিল করে তুলেছে। দেশে গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির কোনো উদ্যোগ না নিয়ে বিদেশ থেকে গ্যাস আমদানি পরিস্থিতির বড় ধরনের অবনতি ঘটিয়েছে। আর এই আমদানীর লক্ষ্যই হচ্ছে চুরি এবং দলীয় ব্যবসায়ীদের সম্পদের পাহাড় তৈরির সুযোগ করে দেয়া। শুধুমাত্র অবৈধ অর্থলিপ্সার কারণেই সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিয়েছে। কিন্তু এর খেসারত দিতে হচ্ছে জনগণকে। মূলত, বর্তমান সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলেই জনগণের জন্য তাদের কোন দায়বদ্ধতা নেই। তাই এই অগণতান্ত্রিক সরকারকে ক্ষমতা থেকে বিদায় না করা পর্যন্ত জনগণের কোন সমস্যারই সমাধান হবে না। তিনি সরকার পতনের লক্ষ্যে দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।
তিনি বলেন, বিশেষ আইনে স্থাপিত রেন্টাল ও কুইক রেন্টালভিত্তিক ১৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্র দু-তিন বছরে বন্ধ হওয়ার কথা থাকলেও অপ্রয়োজনে তা এখনো চালু রাখা হয়েছে। বেশ কিছুসংখ্যক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন না করেও ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ বিপুল অর্থ নিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ ছাড়াই তিন বছরে সরকারকে ৫৪ হাজার কোটি টাকা গচ্চা দিতে হয়েছে। গত এক যুগে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার গচ্চা দিতে হয়েছে। বিদ্যুৎখাতে রাষ্ট্রীয় দায়দেনা এখন ২ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। বিদেশি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা। ২০২৪ সাল থেকে আগামী ৩০ বছরে সুদসহ এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে, যা জনগণের পকেট কেটে আদায় করা হবে।
তিনি বলেন, মূলত সরকারের লাগামহীন দুর্নীতি ও অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের কারণেই বিদ্যুৎখাতে মহাবিপর্যয় দেখা দিয়েছে। বিদ্যুৎ সঙ্কটের কারণে কলকারখানা ও উৎপাদন সেক্টরগুলোতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। দেশীয় সার কারখানা বন্ধ হওয়ায় কৃষিখাতে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বিপজ্জনক অবস্থায় থাকার কারণে সার আমদানি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে দেশের শিল্পোৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এমতাবস্থায় চলমান বিদ্যুৎ ও জ্বালানী সমস্যার সমাধান করা না গেলে জাতীয় উন্নয়নই স্থবির হয়ে পড়বে।
মহানগরী আমীর বলেন, সরকারের ভ্রান্তনীতির কারণেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন প্রান্তিক পর্যায়ে নেমে এসেছে। অথচ দৃশ্যমান কিছু মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার জাতিকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছে। মেগা প্রকল্পের নামে প্রকৃত খরচের ৪-৫ গুণ বেশি খরচ দেখিয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। পাচারকৃত অর্থের যে হিসাব আমাদের সামনে এসেছে, তা মোটেই বাস্তবসম্মত নয় বরং এর পরিমাণ আরও অনেক বেশি। তাই দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থেই এই গণবিরোধী সরকারকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করতে হবে। তিনি আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানের ডাকে সারা দিতে সকলকে সর্বশক্তি নিয়ে প্রস্তুত থাকার আহবান জানান।
সেলিম উদ্দিন বলেন, বর্তমান সরকার কথিত গণতন্ত্রের নামে নানা ধরনের ‘তন্ত্র’ কায়েম করেছে। সেগুলো হচ্ছে বাকশালতন্ত্র, ফাঁসিতন্ত্র, গুণ্ডাতন্ত্র, জুলমতন্ত্র ও গুমতন্ত্র। তারা বিচারের নামে জাতীয় নেতাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে। আওয়ামীলীগ কম গণতন্ত্র ও বেশি উন্নয়নের কথা বলে দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে নির্বাসনে পাঠিয়েছে। দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য সাবেক আমীরে জামায়াত অধ্যাপক গোলাম আযম নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকারের ফর্মূলা দিয়েছিলেন। আর সে ফর্মূলার ভিত্তিতে বর্তমান ক্ষমতাসীনরা জামায়াতের সাথে যুগপৎ আন্দোলন করে ক্ষমতায় গিয়েছিল। কিন্তু সেকথা তারা এখন ভুলে গেছে। এখন তারা গুমখুনের মাধ্যমে নিজেদের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। সে ধারাবাহিকতায় সরকার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমান আল আযমী ও ব্যারিষ্টার আরমানকে গুম করে রেখেছে। তিনি অবিলম্বে বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আযমী ও ব্যারিষ্টার আরমানের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন। অন্যথায় সরকারের পরিণতি মোটেই শুভ হবে না।
তিনি বিগত কয়েকটি নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে ক্ষোভের সাথে বলেন, ২০০৮ সালে অবাধ নির্বাচন হয়নি। ২০১৪ সালে ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। সে নির্বাচনে কোন মানুষ ভোট দিতে যায়নি; ভোট দিয়েছে হাইওয়ান। আর ২০১৮ সালে তো রাতেই ভোট নিয়ে নেয়া হয়েছে। আগামী নির্বাচনে তারা ইভিএম কারচুপীর মাধ্যমে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চান। কিন্তু সচেতন জনতা তাদের সে স্বপ্ন কখনোই বাস্তবায়িত হতে দেবে না। দেশের মানুষ তাদেরকে আর বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দেবে না। তিনি ব্যর্থ ও জুলুমবাজ সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়ার আহবান জানান। অন্যথায় জনগণই সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করবে-ইনশাআল্লাহ।