বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেছেন, জামায়াত কোন ক্ষমতাকেন্দ্রীক, উচ্চাভিলাষী ও গতানুগতিক রাজনৈতিক সংগঠন নয় বরং বাতিলের ওপর দ্বীনে হক্ব বিজয়ী করার প্রচেষ্টা জামায়াতের রাজনীতির মূল দর্শন। একই সাথে আমরা সমৃদ্ধ জাতি গঠন ও ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠায়ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই দেশ ও জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হলে দাওয়াতি কার্যক্রম সম্প্রসারণের কোন বিকল্প নেই। তিনি দ্বীনকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে জাহেলিয়াতের সাথে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করে সকলকে দ্বীনের ভিত্তিতে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তোলার আহবান জানান।
তিনি আজ রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরীর হাতিরঝিল থানা পশ্চিম আয়োজিত থানা মজলিসে শুরার ষান্মাসিক অধিবেশন ও ওয়ার্ড সভাপতি সম্মেলনে ভার্চুয়ালী সংযুক্ত থেকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। ঢাকা মহানগরী উত্তরের মজলিসে শুরা সদস্য ও থানা আমীর মুহাম্মদ আতাউর রহমান সরকারের সভাপতিত্বে ও থানা সেক্রেটারি ইউসুফ আলী মোল্লার পরিচালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি ডা.ফখরুদ্দীন মানিক ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও হাতিরঝিল অঞ্চল পরিচালক মুহাম্মদ হেমায়েত হোসেন। উপস্থিত ছিলেন থানা কর্মপরিষদ সদস্য আবু তানজিল, কলিম উল্লাহ, মাওলানা গোলাম মাওলা, আকতার হোসেন ও আবু সাঈদ মন্ডল প্রমূখ।
সেলিম উদ্দিন বলেন, দ্বীন কায়েমের প্রচেষ্টা চালানো আল্লাহ তায়ালা সকল মুসলমানদের ওপর ফরজ বা অত্যাবশ্যকীয় করে দিয়েছেন। আর এই মহতি কাজে আঞ্জাম দিতে হলে বাতিলকে সবার আগে চিহ্নিত করতে হবে। নিজের চরিত্র থেকে হক্ব পরিপন্থী সকল কিছুই বিতারিত করতে হবে। মূলত, ইসলাম ও জাহেলিয়াতের সহাবস্থান কোন ভাবেই সম্ভব নয়। আর সকলকে দ্বীনের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে দাখিল হতে হবে। পবিত্র কালামে হাকীমের সুরা বাকারার ১৭৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর নাযিল করা কিতাবের অংশ বিশেষ গোপন করে রাখে এবং সামান্য মূল্যে তা বিক্রি করে দেয় তারা এটা দিয়ে যা হাসিল করে এবং যা দিয়ে তারা নিজেদের পেট ভর্তি করে রাখে, তা মূলত আগুন ছাড়া আর কিছুই নয়। শেষ বিচারের দিনে আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না’। মূলত, প্রত্যেক মুমিনের জীবনোদ্দেশ্যই হচ্ছে দ্বীন। তাই ঈমানের দাবিতে সকল বাধা-প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে ইসলামী আন্দোলনকে বিজয়ী করার জন্য প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালাতে হবে। সকলকে আগামী দিনে নেতৃত্বের যোগ্যতর হিসাবে গড়ে তোলার জন্য যথাযথ মানসিক বিকাশ ও দায়িত্বশীলদের নেতৃত্বের গুণাবলী অর্জন করতে হবে। তিনি দ্বীন বিজয়ের লক্ষ্যে প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে দাওয়াত পৌঁছানোর জন্য শপথের জনশক্তিকে কার্যকর ভূমিকা পালনের আহবান জানান।
মহানগরী আমীর বলেন, আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের জন্য খুবই উর্বর। জনমতও আমাদের পক্ষেই রয়েছে। আর এই ব্যাপক জনমতকে সংঘবদ্ধ করতে পারলেই ইসলামের বিজয় অবশ্যাম্ভাবী হয়ে উঠবে। তাই ইসলামের পক্ষে জনগণকে সংগঠিত করতে হলে ইসলামী আন্দোলনের নেতৃস্থানীয়দের নেতৃত্বের গুণাবলী অর্জন করতে হবে। আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য বেশি বেশি কুরআন-হাদিস ও ইসলামী সাহিত্য অধ্যয়ন ও তাহাজ্জুদ গোজার হতে হবে। একই সাথে ধৈর্য্য, বুদ্ধিমত্তা, প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতার সাথে দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে ময়দানে নিজের সকল প্রতিভা, শক্তিকে ও সম্ভবনাকে ইখলাসের সাথে যুগপৎভাবে কাজে লাগাতে হবে।
দ্বীনি আন্দোলনের কর্মীদের কোন অবস্থায় আবেগপ্রবণ হওয়ার সুযোগ নেই বরং বিচক্ষণতার সাথেই উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। তিনি ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মাধ্যমে মোকাবেলা করতে সকলকে প্রস্তুত থাকার আহবান জানান।
তিনি বলেন, সরকার দেশ পরিচালনায় সার্বিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। জনগণের ক্রয়ক্ষমতা যখন প্রান্তিক পর্যায়ে নেমে এসেছে, তখন নিত্যপণ্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতি ইতোমধ্যেই গণদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। সিলেটসহ সারাদেশে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হলেও সরকার দুর্গত ও পানিবন্দী মানুষের কল্যাণে কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তিনি অবিলম্বে সারাদেশে বন্যাদুর্গতদের জন্য প্রয়োজনীয় ত্রাণ ও যথাযথভাবে পূনর্বাসনের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান। তিনি সরকারের উপর্যুপরি ব্যর্থতার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, মূলত, সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলেই জনগণের জন্য তাদের কোন দায়বদ্ধতা নেই। এমতাবস্থায় দেশ ও জাতিকে এই শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে মুক্ত করতে হলে জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার কোন বিকল্প নেই। তিনি একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য অবিলম্বে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে সরকারকে জনমত যাচাইয়ের আহবান জানান। অন্যথায় দুর্বার গণআন্দোলনের মাধ্যমে জনগণই গণদাবি আদায় করবে-ইনশাআল্লাহ।