বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান বলেছেন, জামায়াতে ইসলামী কুরআন-সুন্নাহর আদর্শ অনুসরণে গণমানুষের সার্বিক কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। আর্ত-মানবতার মুক্তি ও বিপন্ন মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর ব্রত নিয়েই জামায়াতের পথচলা শুরু। আর সে দায়িত্ববোধ থেকেই আজ আমরা আপনাদের জন্য কিছু ‘ঈদ উপহার’ নিয়ে হাজির হয়েছি। এতে কেউ সামান্য উপকৃত হলে আমাদের শ্রম সার্থক হয়েছে বলে মনে করবো। তিনি আসন্ন ঈদকে সর্বজনীন ও আনন্দঘন করার জন্য সরকার ও সমাজের বিত্তবান মানুষকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
তিনি আজ রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের পল্লবী দক্ষিণ থানা আয়োজিত স্থানীয় অভাবগ্রস্ত ও দরিদ্র মানুষের মাঝে ঈদ সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। থানা আমীর অধ্যাপক আশরাফুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য এবং মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য, ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি ও জোন পরিচালক লস্কর মোহাম্মদ তসলিম, থানা সেক্রেটারি আবুল কালাম পাঠান, জামায়াত নেতা আব্দুল গফুর, সরফরাজ খান ও ফারুক হোসেন খান প্রমূখ। এ ছাড়াও মিরপুর পূর্ব, মোহাম্মদপুর, কাফরুল উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিম থানায় পৃথক পৃথকভাবে ৬ টি স্থানে আমীরে জামায়াত প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে স্থানীয়দের মধ্যে ঈদ উপহার বিতরণ করেন। উপস্থিত ছিলেন বিশেষ অতিথিগণ। সংশ্লিষ্ট থানা আমীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানগুলোতে আরো উপস্থিত ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য ও মোহাম্মদপুরের জোন পরিচালক জিয়াউল হাসান, ঢাকা মহানগরীর মজলিসে শূরা সদস্য আশরাফুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ , আনোয়ারুল করিম, আব্দুল মতিন খান ও তারেক রেজা তুহিন, জামায়াত নেতা রেজাউল করিম, আবুল কাসেম পাঠান,নাজমুল হক, জামায়াত নেতা আনিসুর রহমান, জয়নাল আবেদীন, ফিরোজ আলম ও ইয়াসনি মনোয়ার প্রমূখ।
ডাঃ শফিকুর রহমান বলেন, উপহার বা হাদিয়া প্রদান এবং গ্রহণ উভয়ই সুন্নাহ। এটি অত্যন্ত উচ্চপর্যায়ের সদাকাহ। হাদিয়া বা উপহার দাতা ও গ্রহীতা উভয়কে সম্মানিত করে। কালামে পাকে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা তাদের সম্পদ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ব্যয় করে, অতঃপর খোঁটা বা তুলনা দিয়ে এবং কষ্ট দিয়ে তার অনুগমন করে না। তাদের জন্য রবের কাছে রয়েছে বিনিময়, তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।’ (সূরা আল বাকারা, আয়াত-২৬২)। হাদিসে রাসূল (সা.) এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা হাদিয়া বা উপহার দাও, তোমাদের মধ্যে প্রীতির বন্ধন দৃঢ় হবে।’ (তিরমিজি)। তাই আমাদের পারস্পরিক বন্ধন মজবুত করছে হাদিয়া দেয়া-নেয়ার সংস্কৃতি চালু করতে হবে।
তিনি বলেন, ইসলামে দরিদ্র ও অভাবগ্রস্তদের অভাব মোচনের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার কোনো দুঃখী, অসহায় উম্মতের হৃদয় খুশি করে, সে যেন আমার অন্তরকেই খুশি করলো। আর যে আমাকে খুশি করলো, সে যেন আল্লাহ তায়ালাকে খুশি করল। যে আল্লাহকে খুশি করল, তাকে আল্লাহপাক জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। হাদিসে আরো এসেছে, ‘দ্বীন হলো অপরের কল্যাণকামীতার নাম’। রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমরা পৃথিবীবাসীকে অনুগ্রহ কর, তাহলে আসমান-জমিনের মালিক তোমাদেরও অনুগ্রহ করবেন। (আবু দাউদ) মূলত, ইসলামী আদর্শের মধ্যেই রয়েছে আর্ত-মাবতার ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি। তিনি ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সকলকে শরীক হওয়ার আহবান জানান।
তিনি আরো বলেন, নানা কারণে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমলেও নিত্যপণ্যের দাম অতীতের সকল সীমা অতিক্রম করেছে। মূলত, সরকার সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেট ও প্রশাসনের উদাসীনতার কারণেই বাজার পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। ফলে দেশে আবারও দুর্ভিক্ষের প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে। সিলেট, সুনামগঞ্জ সহ দেশের উত্তরাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা হানা দিলেও সরকার দুর্গত মানুষের দুর্দশা লাঘবে কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তাই সরকারের অপশাসন-দুঃশাসন থেকে বাঁচতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।