বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেছেন, সরকার ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য একটি বাস্তবতা বিবর্জিত ও গণবিরোধী বাজেট পেশ করেছে। ঘোষিত বাজেটে শুধুমাত্র সরকারের আশীর্বাদপুষ্টদের স্বার্থরক্ষা ও লুটপাটের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে ক্ষমতাসীনরা কীভাবে আরও লুট করবে সে পথও সৃষ্টি করে দেয়া হয়েছে এবারের বাজেটে। তাই এই বাজেট জনগণ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। তিনি গণবিরোধী বাজেট প্রত্যাহার করে অবিলম্বে সরকারকে দলনিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে জনগণের ম্যান্ডেট নেয়ার আহবান জানান। অন্যথায় অনাধিকারের কারণে সরকারকে জনগণের কাছে জবাবদিহী করতে হবে।
তিনি আজ রাজধানীতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য গণবিরোধী বাজেট ঘোষণার প্রতিবাদে এবং অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের দাবিতে এক বিক্ষোভ পরবর্তী সমাবেশে এসব কথা বলেন। বিক্ষোভ মিছিলটি মিরপুর ১০ থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ১২ গোলচত্তরে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি লস্কর মোহাম্মদ তসলিম, মাহফুজুর রহমান ও ডাঃ ফখরুদ্দিন মানিক, ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য জিয়াউল হাসান, হেমায়েত হোসানি, মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ, ইয়াছিন আরাফাত ও জামাল উদ্দিন প্রমূখ।
ড. রেজাউল করিম বলেন, এ সরকারের বাজেট প্রণয়নের কোন অধিকারই নেই। কারণ, তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। তারা নৈশ্যভোটের সরকার। যারা জনগণের প্রতিনিধি নয়, তারা বাজেট প্রণয়নের কোন অধিকার রাখে না। মূলত, এ বাজেট সাধারণ জনগণকে আরও চাপে ফেলবে। ঘোষিত বাজেটে পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনার অবারিত সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। যা অনৈতিক এবং একই সাথে সংবিধান ও আইনের শাসন বিরোধী। সর্বোপরি সামাজিক ন্যায়বিচারের পরিপন্থি। কোনো সভ্য সমাজে এটা হতে পারে না। অনির্বাচিত ও লুটেরা সরকার বলেই তারা এ সুযোগ দিয়েছে। মূলত, জনগণের কাছে তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। তাই দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থেই এই গণবিরোধী সরকারকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
তিনি বলেন, এবারের বাজেট বর্তমান কঠিন সময়ের প্রেক্ষিতে সম্পূর্ণ বাস্তবতা বিবর্জিত। বাজেটে দেশের মুষ্টিমেয় ধনিক শ্রেণির স্বার্থ রক্ষা করা হয়েছে। এতে করে লাভবান হবে সরকার সংশ্লিষ্ট একটি বিশেষ গোষ্ঠী। অন্যদিকে নতুন বাজেটের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে আরও প্রান্তিকতায় পতিত হবে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী। ডলারের বিপরীতে স্বল্পতম সময়ে টাকার মারাত্মক অবমূল্যায়ন ও দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতির কারণে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। ঘোষিত বাজেটে তার কোনো সমাধান নেই। বাজেটে দেশি-বিদেশি ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধের চাপও দরিদ্র জনগণের ওপরেই পড়বে। এ বছর বাজেটে মূল্যস্ফিতি রোধ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, কৃষি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, মানবসম্পদ ও খাতে সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বলা হলেও আসলে বাস্তবতার সাথে তার কোনো মিল নেই। তাই এই মিথ্যাচারের বাজেট জনগণ মেনে নেয় নি; নেবেও না।
তিনি আরো বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে মোট এডিপি ধরা হয়েছে ২ লক্ষ ৪ হাজার ৬৬ কোটি টাকা, রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে ৪ লক্ষ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দায়িত্ব ছিল ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহের। কিন্তু গত ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) রাজস্ব সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ২ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা থেকেও সংগ্রহ ১ লাখ ২৬ হাজার কোটি কম। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের শেষ তিন মাসে আয় করতে হবে ১ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। যা আদায় করা প্রায় অসম্ভব।
মহানগরী সেক্রেটরি বলেন, বাজেটে বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ ও অনুদান গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯৫ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা। ব্যাংক ঋণ ধরা হয়েছে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লক্ষ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা অর্থাৎ মোট বাজেটের ৩৬ দশমিক ১৪ শতাংশই ঋণ নির্ভর। গত বছরের ন্যায় ঋণ পরিশোধ করতেই সরকারের নাভিশ্বাস উঠে যাবে। তাই জাতীয় উন্নয়নে সরকারের কিছুই করার থাকবে না। মূলত, এই বিনাভোটের সরকার জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে জনগণের ওপর জগদ্দল পাথবের মত চেয়ে বসেছে। তারা নিজেদের অবৈধ ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য জাতীয় নেতাদের একের পর হত্যা করে জাতিকে মেধা ও নেতৃত্বশূণ্য করার মিশনে নেমেছে। সরকার জাতীয় অভিভাবক কারাগারে অন্তরীণ রেখে নিজেদের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করতে চায়। কিন্তু তাদের সে স্বপ্নবিলাস জনগণ কখনোই সফল হতে দেবে না। তিনি অবিলম্বে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ কারারুদ্ধ সকল জাতীয় নেতাদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন। অন্যথায় জনগণই তাদের নেতাদের মুক্ত করেই ছাড়বে-ইনশাআল্লাহ!