বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেছেন, ঘাদানিকেরা কথিত গণকমিশনের নামে দেশ বরেণ্য আলেম-উলামার চরিত্র হননের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। অথচ আলেমগণই উম্মাহর শ্রেষ্ঠ সন্তান। আলেমদের মর্যাদা সম্পর্কে সূরা আল ফাতিরের ২৮ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয় তার বান্দাদের মধ্যে আলেমগণই আল্লাহকে বেশি ভয় করেন’। সুনানে আবু দাউদে আলেমদেরকে নবীগণের উত্তরসূরী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই জাতির এসব রাহবারদের বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্র জনগণ বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দেবে না। তিনি দেশ, জাতি, ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধবিরোধী ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।
তিনি আজ রাজধানীতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত তথাকথিত গণকমিশন কর্তৃক দেশ বরণ্যে ১১৬ আলেমের বিরুদ্ধে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দুর্নীতি, মানিলন্ডারিং, জঙ্গীবাদে অর্থায়ন, ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানো ও ইসলামের অপব্যাখ্যার কথিত অভিযোগের প্রতিবাদে এবং তথাকথিত গণকমিশনের হোতাদের আইনের আওতায় আনার দাবিতে এক বিক্ষোভ পরবর্তী সমাবেশে এসব কথা বলেন। বিক্ষোভ মিছিলটি মিরপুর-১ গোল চত্বর থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে টেকনিকেলে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটার লস্কর মোঃ তসলিম, মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দীন মোল্লা ও ডাঃ ফখরুদ্দীন মানিক, ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য জিয়াউল হাসান, মোস্তাফিজুর রহমান ও জামাল উদ্দীন, ঢাকা মহানগরী উত্তরের শূরা সদস্য ডা. শফিউর রহমান, মু. আতাউর রহমান সরকার ও ডা. মাঈনুদ্দীন, ছাত্রশিবিরের ঢাকা মহানগরী উত্তরের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম ও পশ্চিমের সভাপতি সাব্বির বিন হারুন প্রমূখ।
সেলিম উদ্দিন বলেন, কুচক্রীমহলের সেবাদাস ঘাদানিক চক্র বরাবরই দেশের আলেম সমাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে এসেছে। অর বিনা ভোটের সরকার তাদেরকে বরাবরই পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে এসেছে। সে ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় বিশ্বখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ, প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন ও শহীদ সাবেক আমীরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী এবং বিশ্বনন্দিত মুফাসসিরে কুরআন ও নায়েবে আমীর আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে পাতানো ও সাজানো মামলায় মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি করেছে। সে সময় দেশের আলেমসমাজ যদি ঐক্যবদ্ধ হতে পারতেন তাহলে ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র কখনোই সফল হতো না এবং পরবর্তীতে হেফাজতের আলেমদের দলে দলে জেলে নিতে পারতো না। একইভাবে হেফাজতের বিরুদ্ধে জুলুম-নির্যাতন মোকাবেলায় উলামারা তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে পারলে ষড়যন্ত্রকারীরা ১১৬জন আলেমের চরিত্র হনন করার দুঃসাহস দেখাতো না। মূলত, আলেম সমাজের অনৈক্যের কারণেই সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ঘাদানিকেরা বারবর সীমালঙ্ঘন করে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় আলেম-জনতা ঐক্যবদ্ধ না হলে আগামী দিনে আরো ভয়াবহ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে। তিনি দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে এবং নিজেদের মর্যাদা রক্ষায় আলেম সমাজকে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তোলার আহবান জানান।
তিনি বলেন, ঘাদানিকেরা অনেক আগেই ‘গণ’ শব্দের অপব্যবহার শুরু করেছে। অতীতে তথাকথিত ‘গণআদালত’ ‘গণতদন্ত কমিশন’ ও ‘গণজাগরণ মঞ্চ’ গঠন করে তারা দেশব্যাপী হত্যা, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য চালিয়েছে। অথচ জনগণের সাথে এসব বায়বীয় সংগঠনের কোন সম্পর্ক অতীতে ছিল না, এখনো নেই; আর আগামী দিনেও থাকবে না। কোন কমিশন গঠন করতে হলে সেক্ষেত্রে আইনানুগ কর্তৃপক্ষের প্রয়োজন হয়। কিন্তু কথিত গণকমিশন কারা গঠন করেছেন তার কোন সদুত্তর নেই। প্রচলিত আইন-আদালত ও রাষ্ট্রীয় সংবিধানকে পাশ কাটিয়ে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের চরিত্রহননের জন্য যে স্বেতপত্র প্রকাশ করা হয়েছে তা কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বরং এর মাধ্যমে রাষ্ট্রের কার্যকারিতাকেই রীতিমত প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। তিনি জাতিকে বিভক্তকারীদের বিরুদ্ধে সকলকে সতর্ক থাকার আহবান জানান।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশের এমন কোন সেক্টর নেই যেখানে দুর্নীতি ও অনিয়ম স্থায়ী রূপ লাভ করেনি। কিন্তু কথিত গণকমিশন সেসব বিষয়কে পাশ কাটিয়ে স্বেতপত্রের নামে ধর্মীয় নেতাদের বিরুদ্ধে কল্পকাহিনী রচনা করেছে। ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক তার দলের নেতাদের অর্থপাচারের আত্মস্বীকৃতি দিলেও সে বিষয়ে কথিত ‘গণকমিশন’এর কোন তৎপরতা নেই। এসব ইসলামী বক্তাদের দুর্নীতি, মানি লন্ডারিং আর জঙ্গীবাদে অর্থায়নের সুযোগই বা কোথায় ? এদের অর্থের উৎসই বা কী ? একজন জেলা পর্যায়ের ছাত্রনেতা বিদেশে যত অর্থপাচার করেছেন ১১৬ জন ধর্মীয় নেতাদের মোট সম্পদের পরিমাণ তত হবে বলে কোন বিবেকবান মানুষ বিশ্বাস করেন না।
মহানগরী আমীর বলেন, আপীল বিভাগের বিতর্কিত সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রইব্যুনালের বহিস্কৃত প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমদের বিরুদ্ধে যে খিস্তিকেউর করেছেন তার কোন আইনী ও নৈতিক ভিত্তি নেই। অথচ বিচারপতি মানিকের বিরুদ্ধেই নানাবিধ গুরুত্বর অভিযোগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতোমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, নৈতিক স্খলনের জন্য তুরিন আফরোজকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিম থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। এমনকি তার মা প্রকাশ্য সংবাদ সম্মেলনে তার বিরুদ্ধে গুরতর অভিযোগ করেছেন। অথচ এসব গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্তরাই জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের চরিত্র হননের জন্য কথিত ‘স্বেতপত্র’এর প্রকাশ করেছে। কথিত কমিশন অভিযোগ করেছে যে, আলেম-উলামারা ইসলামের অপব্যাখ্যা করে সমাজে ঘৃণা ছড়াচ্ছেন। অথচ কমিশনের চেয়ারম্যান আত্মস্বীকৃতিতে বলেছেন যে, ইসলাম সম্পর্কে তার তেমন জানাশোনা নেই। তাহলে তারা কীভাবে জ্ঞাত হলেন যে, আলেমগণ ইসলামের অপব্যাখ্যা করছেন বা ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন। মূলত, আলেমদের খ্যাতি ও জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে এবং ইসলামে বিজয় ঠেকানোর জন্যই একটি অশুভচক্রের দালালের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন মানিক-আফরোজ গংরা। তিনি এসব ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন করতে তুলতে সকলকে একযোগে কাজ করার আহবান জানান।