ন্যায়-ইনসাফ ও মানবিক মূল্যবোধভিত্তিক শোষণ ও বঞ্চনামুক্ত কল্যাণমূখী সমাজ গড়ার প্রত্যয় গ্রহণের মাধ্যমে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপনের জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নগরবাসীর উদ্দেশে এক শুভেচ্ছা বাণীতে তিনি এসব কথা বলেন।
সেলিম উদ্দিন বলেন, দীর্ঘ এক মাস সিয়াম ও কিয়াম পালনের পর আমাদের মাঝে ফিরে এসেছে পবিত্র ‘ঈদুল ফিতর’। ঈদের প্রকৃত শিক্ষাই হচ্ছে আর্ত-মানবতার কল্যাণ এবং বিপন্ন ও অভাবগ্রস্ত মানুষের প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শন। কালামে পাকে ইরশাদ হয়েছে, ‘…বড় সৎকাজ হল এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর, কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসূলগণের উপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্নীয়-স্বজন, এতীম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে।…(সুরা বাকারা, আয়াত-১৭৭) হাদিস শরীফে এসেছে, রাসুল (সা.) জিজ্ঞাসিত হলেন, ভাল আমলকারী কারা ? প্রত্যুত্তরে তিনি বললেন, যারা মানুষের অভাবের কথা শুনলো, আর তার অভাব দূর করার জন্য সাথে সাথে নিজেকে নিয়োজিত করলো-এই আমলই আল্লাহর কাছে সবচাইতে প্রিয়। অন্য হাদিসে এসেছে, মানুষের কোন সমস্যার সমাধান করা ৩০ দিন মসজিদের ইতিকাফ করার চেয়েও উত্তম। তিনি ঈদুল ফিতরের প্রকৃত শিক্ষা ধারণ করে আর্ত-মানবতার কল্যাণে সকলকে একযোগে কাজ করার আহবান জানান।
তিনি বলেন, জাতির এক মহাক্রান্তিকালে আমাদের মাঝে হাজির হয়েছে ঈদুল ফিতর। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্দ্ধগতির কারণেই সাধারণ মুসলমানদের সিয়াম ও কিয়াম পালন স্বাচ্ছন্দপূর্ণ হয়নি। নানাবিধ কারণেই সাধারণ মানুষে ক্রয়ক্ষমতা এখন প্রান্তিক পর্যায়ে নেমে এসেছে। ইসলাম আমাদেরকে মানুষের প্রতি দয়া-অনুগ্রহ প্রদর্শন ও আত্মীয়-স্বজনের হক যথাযথভাবে আদায় করার শিক্ষা দিয়েছে। তাই সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদেরকে এতিম, অসহায়, দুঃস্থ, কর্মক্ষমতাহীন, বিকলাঙ্গ, অভাবগ্রস্ত আত্মীয়-স্বজন, তালাকপ্রাপ্তা ও বিধাবসহ অসহায় মানুষের কল্যাণে সামর্থ অনুযায়ি সাহায্য করতে হবে। কালামে হাকীমে বলা হয়েছে, ‘বস্তুত, আমি তাকে (পাপ ও পুণ্যের) দু’টি পথ দেখিয়েছি। কিন্তু সে দুর্গম গিরিপথ অতিক্রম করার সাহস করেনি। আপনি জানেন, সে গিরিপথ কি? তা হচ্ছে দাসমুক্তি। অথবা দুর্ভিক্ষের দিনে অন্নদান, ইয়াতীম আত্বীয়কে, অথবা ধুলি-ধুসরিত মিসকিনকে। (সুরা আল বালাদ, আয়াত-১০-১৫) হাদিসে রাসূল (সা.) বলা হয়েছে, রাসূল (সা.) বলেছেন, সে ব্যক্তিই আল্লাহর কাছে প্রিয় যে মানুষের কল্যাণে কাজ করে। তাই আর্ত-মানবতার কল্যাণের ব্রত নিয়েই আমাদেরকে আগামী দিনের কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে হবে।
মহানগরী আমীর বলেন, সরকারের উপর্যুপরি ব্যর্থতার কারণেই দেশে দুর্ভিক্ষের প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে। এমতাবস্থায় অভাবগ্রস্থ ও বিপন্ন মানুষের কল্যাণে যাকাত, সাদাকাহ, ফিতরাসহ নিজ নিজ সঞ্চিত অর্থ নিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে দুর্গত ও অসহায় মানুষের কল্যাণে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি সরকারের রাজনৈতিক নিপীড়নের কথা উল্লেখ করে বলেন, বিনাভোটের সরকার নিজেদের ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য প্রহসনের মাধ্যমে জামায়াতের শীর্ষনেতাদের একেরপর এক হত্যা করেছে। সরকারের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে এখনো কারাবন্দী রয়েছেন বিশ্বখ্যাত মুফাসসিরে কুরআন ও নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ও অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল খালেক মণ্ডলসহ শীর্ষ জাতীয় নেতৃবৃন্দ। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী জুুলুম-নির্যাতন চালিয়ে অতীতে কোন আদর্শকে নির্মূল করা যায়নি; আর কখনো যাবেও না। তিনি প্রতিহিংসা ও বিভেদের রাজনীতি পরিহার করে ঈদের আগেই মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন এবং নগরবাসীর প্রতি ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানান।