বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেছেন, হিজরি দ্বিতীয় সনের ১৭ রমজান ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। এটি ছিল ইসলামের ইতিহাসে প্রথম সম্মুখ সমর। জেহালতের তিমিরাচ্ছন্নতার অবসান ঘটিয়ে ঐশী নূরের আলোকে বিশ্ববাসীর জন্য ইসলামের সুশীতল ঝরনাধারা প্রবাহের বিষয়টি সুনিশ্চিত হয়েছিল বদরের প্রাঙ্গণ থেকে। পবিত্র কালামে পাকে মহান আল্লাহ তায়ালা বদর দিবসকে ‘ইয়াওমুল ফুরকান’ তথা সত্য-মিথ্যার প্রভেদকারী দিবস হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তাই ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধ বিরোধী সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় বদর দিবসের শিক্ষা ধারণ করে শ্রমিকদেরকে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। তিনি বদরের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত দেশ গঠন ও গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণে জাতীয় ঐক্যমত প্রতিষ্ঠার জন্য দলমত নির্বিশেষে সকলের প্রতি আহবান জানান।
তিনি রাজধানী একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ঢাকা মহানগরী উত্তরের মিরপুর জোন আয়োজিত ঐতিহাসিক বদর দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। জোন পরিচালক গাজী মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সহকারি পরিচালক আব্দুর রশীদের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ঢাকা মহানগরী উত্তরের সভাপতি মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ। উপস্থিত ছিলেন শ্রমিক নেতা আলাউদ্দীন, মোঃ মামুন, আবু তাহের মেসবাহ ও আবু জফর প্রমূখ।
সেলিম উদ্দিন বলেন, বস্তুত মহানবী (সা.) যুদ্ধপ্রবণ ব্যক্তি ছিলেন না। কিন্তু তৎকালীন কুফরী ও খোদাদ্রোহী শক্তির নানামুখী ষড়যন্ত্র, নির্যাতন আর ইসলামকে অঙ্কুরেই ধ্বংস করে দেওয়ার অপ্রয়াস মোকাবিলায় রাসুলে পাক (সা.)-এর হাতে যুদ্ধ ব্যতীত কোনো বিকল্প পথ ছিল না। তাওহিদ ও রেসালতের প্রতি আনুগত্যকারী মোহাজের ও আনসারদের সমন্বয়ে অসম সাহসী সাহাবায়ে কেরামের এক প্রত্যয়দীপ্ত বাহিনী বিশ্বনবীর (সা.) নেতৃত্বে নজিরবিহীন বীরত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন বদরের প্রান্তরে। মহানবী (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের সাথী হয়েছিল মহান আল্লাহপাক প্রদত্ত রহমত, মদদ ও সুসংবাদ সংবলিত বার্তাবলির অমোঘ শক্তিমত্তা। পবিত্র কালামে হাকীমের সুরা আলে ইমরানে আল্লাহপাক ঘোষণা করেন, ‘সুনিশ্চিতভাবেই মহান আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করেছেন বদরের যুদ্ধে, যেখানে তোমরা ছিলে ক্ষীণ-শক্তির দুর্বল এক পক্ষ’। তাই যেকোন বিজয় অর্জনের নিজেদের শক্তি-সামর্থই আসল কথা নয় বরং সকল ক্ষেত্রেই আল্লাহর সাহায্য একান্ত জরুরি। তিনি আল্লাহ তায়ালার ওপর ভরসা রেখে নিজেদের সামর্থ অনুযায়ি ইক্বামাতের দ্বীনের কাজে আত্মনিয়োগ করতে সকলের প্রতি আহবান জানান।
তিনি বলেন, মূলত বদর যুদ্ধই ছিল ইসলামের টার্নিং পয়েন্ট। যে যুদ্ধ ইতিহাসের গতিপথই পরিবর্তন করে দিয়েছিল। আর রক্তাক্ত বদরের সিঁড়ি বেয়েই মহান আল্লাহর রহমত ও মদদে অত্যন্ত দ্রুত বেগে ইসলাম সম্মুখপানে এগিয়ে চলেছিল এবং পরিণত হয়েছিল বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল এক পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধানে। এ যুদ্ধে প্রমাণিত হয়েছিল বৈষয়িক শক্তি ও সংখ্যাধিক্যের মাধ্যমে বিজয় অর্জন করা যায় না বরং প্রতিটি বিজয়ের জন্য আল্লাহর মদদ অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে। পরিসংখ্যান অনুযায়ি, এ যুদ্ধে অমুসলিম বাহিনীর সৈন্যসংখ্যা ছিল ১ হাজারেরও বেশি। যুদ্ধ উপকরণেরও আধিক্য ছিল তাদের। তাদের সাথে ছিল ১০০ ঘোড়া, শতাধিক উট, ছয় শতাধিক লৌহ বর্মসহ অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্র। পক্ষান্তরে মুসলিম বাহিনীর সৈন্যসংখ্যা ছিল মাত্র ৩১৩। সঙ্গে যুক্ত ছিল ৭০টি উট ও মাত্র দুটি ঘোড়া। কিন্তু মুসলমানদের ছিল বিশ্বনবী (সা.)-এর নেতৃত্ব এবং মহান আল্লাহর সাহায্য। আর এই ঐতিহাসিক যুদ্ধই ইসলাম ও মুসলমানদের বিশ্ব পরাশক্তিতে পরিণত করতে সমর্থ হয়েছিল। তিনি বদরের মাসে সিয়াম ও কিয়াম পালনের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি ও তাজকিয়া অর্জনে আত্মনিযোগ করতে শ্রমিকদের প্রতি আহবান জানান।