সাধারণ মানুষের সাথে একজন মুসলমানের সম্পর্ক হয় একজন উন্নত আখলাকের সম্ভ্রান্ত ভদ্র মানুষের মতো। তার সুন্দর আখলাকের পেছনে ভিন্ন কোনো মতলব লুকায়িত থাকে না। আল্লাহর ভয় আল্লাহর সামনে জবাবদিহিতার ভয়ই তাকে ভালো আখলাক অর্জনে উদ্বুদ্ধ করে। একজন আদর্শ মুসলিম কাউকে ধোঁকা দেয় না। কারো সাথে বিশ্বাস ভঙ্গ করে না। কারো ভালো দেখে হিংসা করে না। একজন আদর্শ মুসলিম হয়ে থাকে খুবই সহনশীল ও দয়ালু প্রকৃতির। তার চেহারায় সদা হাসি ফুটে থাকে। কাউকে গালি দেয় না।
একজন মুসলিম নিজের সাথে সংশ্লিষ্ট নয় এমন কাজে মাথা ঘামায় না। মিথ্যা বলে না। কুধারণা করে না। গীবত করে না। কারো নামে অপবাদ রটায় না। সে খুব বিনয়ী হয়। কাউকে বিদ্রুপ করে না। মানুষের উপকারের চেষ্টা করে। বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে সন্ধির চেষ্টা করে। হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে মানুষকে সৎ পথে ডাকে। রোগীর সেবা করে। অসুস্থদের দেখতে যায়। কেউ তার সাথে ভালো আচরণ করলে সে তার প্রতিদান দেওয়ার চেষ্টা করে। সম্ভব না হলে অন্তত তার শোকর আদায় করে।
একজন আদর্শ মুসলিম জনবিচ্ছিন্ন হয়ে থাকে না। সে মানুষের সাথে মিলেমিশে থাকে। তাদের থেকে কষ্ট পেলে তা হাসিমুখে সয়ে নেয়। মানুষের সাথে যথাসম্ভব সহজভাবে মেশার চেষ্টা করে। বৈধ উপায়ে তাদেরকে বিভিন্ন সময় আনন্দ দেয়। প্রত্যেককে সেই পরামর্শই দেয়, যাতে তার কল্যাণ। সকল বিষয়ে সে সহজতা ও সাবলীলতা পসন্দ করে। কাঠিন্য ও কৃত্রিমতাকে বর্জন করে।
সব বিষয়ে ইনসাফপূর্ণ ফায়সালা করে। কারো প্রতি অবিচার করে না। কারো প্রতি অন্যায় পক্ষপাতিত্ব করে না। কারো সাথে মুনাফেকী করে না। কাউকে তোষামোদ করে না। লোক দেখানোর জন্যে, সুনামের জন্য কাজ করে না। সময় ও অবস্থা যেমনই হোক সে সর্বদা সরল পথে অটল থাকে। সময় বুঝে খোলস বদলায় না। তার চিন্তা হয় উঁচু। চিন্তার হীনতা ও তুচ্ছতা থেকে সে মুক্ত থাকে। কথাবার্তায় আড়ম্বর প্রকাশ করে না।
আদর্শ মুসলিম হয় খুব মহানুভব ও সম্ভ্রান্ত। কাউকে কিছু দিয়ে খোঁটা দেয় না। সে খুবই অতিথিপরায়ণ হয়। মেহমানদের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করে না। হঠাৎ কোনো মেহমান এসে গেলে মেহমানদারি করতে অক্ষমতা প্রকাশ করে না। নিজে না খেয়ে হলেও তাকে খাওয়ায়।
সে ঋণগ্রস্তদের বোঝা হালকা করার চেষ্টা করে। নিজে অভাবে থাকলেও সেটা অন্যকে বুঝতে দেয় না। তার নিকট উপরের হাত নিচের হাত থেকে পছন্দনীয়। সে অভ্যাসের দাস হয় না। অভ্যাসগুলোকে সে আল্লাহর দেয়া বিধানের অনুগামী বানায়। সে তার প্রত্যাহিক জীবন যথা খাওয়া, পরা, ঘুমানো, সালাম বিনিময়, রোগী দেখতে যাওয়া ইত্যাদি বিষয়ে ইসলামী শিষ্টাচার পালন করে।
একজন আদর্শ মুসলিমের নিকট ইসলাম শুধু কিছু আচার অনুষ্ঠানের নাম নয়। ইসলাম ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন এবং আন্তর্জাতিক জীবন- জীবনের সকল অঙ্গনে আল্লাহর বিধান পালনের নাম। সে সর্বদা ন্যায় ও সত্যের পক্ষে থাকে। সে কখনো ভাষাগত কিংবা জাতিগত সাম্প্রদায়িকতার শিকার হয় না। সে আধুনিক যুগের চটকদার সেøাগানে ধোঁকা খায় না। সে কখনোই অমুসলিমদেরকে নিজের অন্তরঙ্গ বন্ধু বানায় না। তাদের কাছে মুসলমানদের গোপন কথা ফাঁস করে না। সে অমুসলিমদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে হুঁশিয়ার থাকে।
আন্তর্জাতিকভাবেও একজন মুসলিমের রয়েছে কিছু দায়িত্ব। একজন আদর্শ মুসলিম সেসকল দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে। পৃথিবীর যেখানেই কোনো মুসলিম নির্যাতিত হয়, সে নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। সাধ্য অনুযায়ী সে এ নিপীড়ন বন্ধের চেষ্টা করে। সে মুসলমানদের তাদের অতীত ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দেয় এবং বর্তমানের বেঘোর ঘুম থেকে জাগানোর চেষ্টা করে। ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তাদের মনে আশার আলোক জ্বেলে দেয়।
আল্লাহ তাআলা সর্বপ্রথম নিজেকে আদর্শ মুসলিম হিসাবে গড়ে তোলার তাওফীক দিন। তারপর এর মাধ্যমে অন্যদেরকেও উপকৃত করুন। আমীন।
উৎসঃ দৈনিক ইনকিলাব