বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান বলেছেন, দেশে পরিকল্পিভাবে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। এজন্য বাজার সিন্ডিকেট এককভাবে দায়ি নয় বরং রাজনৈতিক অপশক্তি এর পেছনে রয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করতে পারছে না। তারা যা বলতে চায় তা বলতে দেয়া হচ্ছে না। জুলুম-নির্যাতন সহ্য করলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তাই জনগণের ক্ষোভের মুখে সরকারকে একদিন ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হবে। তিনি গণপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহবান জানান।
তিনি আজ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত ওয়ার্ড সভাপতি-সেক্রেটারি, থানা কর্মপরিষদ-শূরা ও তদুর্ধ দায়িত্বশীলদের ভার্চুয়াল শিক্ষাশিবিরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ডঃ মুহাম্মদ রেজাউল করিমের পরিচালনায় সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিমের দারসুল কুরআনের মাধ্যমে শুরু হওয়া শিক্ষাশিবিরে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ, সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল ও এহসানুল মাহবুব জোবায়ের। আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর আব্দুর রহমান মুসা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি লস্কর মোহাম্মদ তসলিম, মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দীন মোল্লা ও ডাঃ ফখরুদ্দীন মানিক প্রমূখ।
আমীরে জামায়াত বলেন, দেশে মূল্যস্ফীতি এখন সকল সময়ের সীমা অতিক্রম করেছে। ফলে নিন্ম আয়ের ও নিন্ম মধ্যবৃত্তের মানুষ সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন। সরকারের কারণেই দেশে অবক্ষয়ের জয়জয়কার চলছে। হারাম মদকে হালাল করা হয়েছে। ২১ বছর বয়স হলেই মদ পানের অধিকার ও কোন এলাকায় ১শ জন মদ্যপায়ি থাকলে সেখানে মদের দোকানের বৈধতা দেয়া হয়েছে। যা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আবেগ-অনুভূতি, ধর্মীয়বোধ-বিশ্বাস, ঈমান-আকিদার পরিপন্থী ও রাষ্ট্রীয় সংবিধানের গুরুতর লঙ্ঘন। তিনি জাহেলী যুগের কথা উল্লেখ করে বলেন, আইয়্যামে জাহেলিয়াতে কাবাঘরে নগ্নমূর্তি স্থাপন করে যেভাবে নৃত্য করা হতো-সরকার দেশকে সেদিকেই টেনে নিচ্ছে। সে ধারাবাহিকতায় দেশে পর্ণস্টার আমদানী করে যুব সমাজকে বিপথগামী করা হচ্ছে। অথচ ১২ বছর আগে দেশে এমনটি কখনো কল্পনাও করা যেত না। তাই এই ইসলামী বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টিতে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
তিনি বলেন, সরকার জামায়াতসহ দেশপ্রেমী রাজনৈতিক শক্তিকে বিশেষভাবে টার্গেট করেছে। সে ধারাবাহিকতায় জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের সাজানো মামলা ও মিথ্যা সাক্ষের মাধ্যমে পরিকল্পিভাবে শহীদ করা হয়েছে। দেশ ও জাতিস্বত্তাবিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবেই মেধাবী ও চৌকস ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকেও কথিত বিদ্রোহের তকমা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী অতীতে যারাই দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এবং মানুষের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছে তারা কখনোই চিরস্থায়ী হয়নি; আর কখনো হবেও না। তিনি গণদুর্দশার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, দেশ ভালো নেই; ভালো নেই জনগণও। এক অর্থে আমরাই ভালো আছি। আমরা তো শাহাদাতের তামান্না নিয়ে এই আন্দোলনে এসেছি। ইতোমধ্যেই আমাদের প্রায় সকল শীর্ষ নেতাকেই পরিকল্পিতভাবে শহীদ করা হয়েছে। তাই শহীদের রক্ত পিচ্ছিল পথেই আমাদেরকে দ্বীন বিজয়ের প্রত্যয়ে নিরলসভাবে কাজ করতে হবে।
ডাঃ শফিকুর রহমান বলেন, দেশকে বদলাতে হলে সবার আগে নিজেকে বদলাতে হবে। এই পরিবর্তন হতে হবে অবশ্যই কুরআন-সুন্নাহর আলোকে। তাহলেই দেশে ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে।
তিনি ইসলামী আন্দোলনে নেতৃত্বের কথা উল্লেখ করে বলেন, কোন দায়িত্বই ছোট নয়। তাই কোন পর্যায়ে দায়িত্ব পালনে গাফিলতি করার সুযোগ নেই। কারণ, প্রত্যেক দায়িত্বশীলকে আল্লাহ তায়ালার কাছে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে যথাযথভাবে জবাবদিহি করতে পারলে আল্লাহ তায়ালা মহাপুরস্কার জান্নাত দান করবেন। অন্যথায় জাহান্নামই হবে তার পরিণাম। তাই সমাজ পরিবর্তনের জন্য দাওয়াতি কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও নিজেদের আমল-আখলাকেও গুণগত পরিবর্তন আনতে হবে। তিনি প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছানোর জন্য ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের প্রতি আহবান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, সে ব্যক্তিই উত্তম, যিনি সমাজসেবা করেন। সমাজসেবা আল্লাহর সন্তষ্টির অন্যতম মাধ্যম। আর দেশকে কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করতে হলে সমাজসেবার মাধ্যমে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদেরকে সবার আগে গণভিত্তি সৃষ্টি করতে হবে। তাহলেই সমাজবিপ্লব অবশ্যাম্ভাভাবী হয়ে উঠছে। তিনি দেশে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে একটি নিয়মতান্ত্রিক সফল বিপ্লব সাধনের জন্য সকলকে একযোগে কাজ করার আহবান জানান।
মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, পবিত্র মাহে রমজান সমাগত। তাই এই মাসের কল্যাণ ও বরকতকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে। মানুষকে আল্লাহমুখী করে আর্ত-মানবতার কল্যাণে ইসলামী আন্দোলনের আন্দোলনের কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আর মানুষের কল্যাণে কাজ করাই উত্তম কাজ। মূলত, দেশকে একটি কল্যাণরাষ্ট্রে পরিণত করাই জামায়াতে ইসলামীর আন্দোলনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। আর সে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আমাদেরকে অবিরাম সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।
এহসানুল মাহবুব জোবায়ের বলেন, ইসলামকে বিজয়ী আদর্শ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে হলে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের নেতৃত্বের গুণাবলী আর্জন করতে হবে। কারণ, দ্বীন বিজয়ের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ। আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে, আছে অযোগ্যতাও। তাই দ্বীনের স্বার্থেই আমাদের সীমাবদ্ধতা ও অযোগ্যতা কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালাতে হবে। আমাদের মিশনই হলো তাওহীদ, রিসালাত ও আখেরাত। তিনি সকলকে তাওহীদের পতাকায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে বেগবান করার আহবান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, রাষ্ট্র ক্ষমতাই ইসলামী আন্দোলনের প্রকৃত সাফল্য নয় বরং আল্লাহর সন্তষ্টিই প্রকৃত সফলতা। তাই ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদেরকে আল্লাহর প্রতি সন্তষ্ট থেকে তার সন্তষ্টি অর্জনের জন্য প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালাতে হবে। তিনি দেশের চিত্র তুলে ধরে বলেন, সরকার দেশকে নেতৃত্ব ও মেধাশূণ্য করতেই আমাদের শীর্ষনেতাদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। এই সরকারের সময়ে মায়ের পেটে শিশুও নিরাপদ নয়। আবরারের মত মেধাবীরা প্রতিনিয়ত হত্যা ও গুমের শিকার হচ্ছেন। তাই দেশে ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠার জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। আর আমরা কুরআনের সমাজ প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত কোন ভাবেই থেমে যাব না। তিনি দ্রব্যমূল্যের পরিকল্পিত উর্দ্ধগতি ও মদের উম্মুক্ত লাইসেন্সের প্রতিবাদে মহানগরীর প্রতিটি পাড়া-মহল্লায়, ওয়ার্ড ও থানায় সকলকে সোচ্চার প্রতিবাদ গড়ে তোলার আহবান জানান।