বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেছেন, আল্লাহ তা’য়ালাই রিযকের মালিক এবং তিনি সকল জীবের জন্যই পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখেন। তাই বাজারে নিত্যপণ্যের সংকট হওয়ার কথা নয়। কিন্তু সরকারের লাগামহীন দুর্নীতি, অনিয়ম ও বাজার সিন্ডিকেটের কারণেই দেশে নিত্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়েছে এবং মূল্যস্ফীতি এখন অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। ফলে দেশে নিরব দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে। দেশে নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। এতে প্রমাণ হয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পেছনে সরকার সংশ্লিষ্টদের বড় ধরনের ভূমিকা রয়েছে। তিনি অবিলম্বে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে করে বাজারে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান। অন্যথায় জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমেই সকল সমস্যার সমাধান করা হবে।
তিনি আজ রাজধানীতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্দ্ধগতির প্রতিবাদে এবং অবিলম্বে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের দাবিতে এক বিক্ষোভ পূর্ব সমাবেশে এসব কথা বলেন। সমাবেশটি উত্তর বাড্ডা ব্রিজের নিচে অনুষ্ঠিত হয় এবং সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে গুলশান লিংক রোডের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি লস্কর মোহাম্মদ তসলিম, মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দিন মোল্লা ও ডা. ফখরুদ্দীন মানিক, ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য হেমায়েত হোসাইন, মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ, জামাল উদ্দীন, শিবিরের ঢাকা মহানগরী পশ্চিমের সভাপতি সাব্বির আহমদ, উত্তরের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, ঢাকা মহানগরী উত্তরের মজলিসে শূরা সদস্য মু. আতাউর রহমান সরকার, মেজবাহ উদ্দীন নাঈম, এ্যাডভোকেট ইব্রাহিম খলিল ও কুতুব উদ্দীন প্রমূখ।
সেলিম উদ্দিন বলেন, সরকারের রহস্যজনক নিরবতার কারণেই আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার অজুহাত দেখিয়ে রিফাইনারি কোম্পানিগুলো হঠাৎ করেই ভোজ্য তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। শুধু সরবরাহ সংকটের কারণেই মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে লিটারপ্রতি সয়াবিনের দাম গড়ে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। ফলে প্রতি লিটার সয়াবিন ১৮৫ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মূলত, রিফাইনারী কোম্পানিগুলো চাহিদা মতো তেল সরবরাহ করছেন না। প্রতিদিন ১, ২ ও ৫ লিটার মিলিয়ে ৮শ থেকে হাজার লিটারের চাহিদা থাকলেও কোম্পানি থেকে ৩শ থেকে ৪শ লিটারের বেশি পাওয়া যাচ্ছে না। তেল লুকিয়ে রেখে মূল্যবৃদ্ধির অভিযোগও উঠেছে সরবারাহকারীসহ বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু এসব অনিয়মের সাথে সরকার সংশ্লিষ্টরা জড়িত থাকার কারণেই সরকার তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না।
তিনি বলেন, মূলত, সরকারের উদাসীনতার কারণেই সার্বিক মূল্য পরিস্থিতির বড় ধরনের অবনতি হয়েছে। বাজারে পেঁয়াজ ৬৫ টাকা, আদা ৮৫ টাকা, চায়না রসুন ১০০ টাকা, দেশী রসুন ৭০ টাকা, শুকনা মরিচ ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সবজি ৮০-১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ঢেঁড়স-করলার দাম ঠেকেছে ১২০ টাকা, বরবটি ১৬০ টাকা। লাউশাক, পালং শাক, লাল শাক, কলমি শাক, কচু শাকসহ সবধরনের শাকের বাজার এখন সাধারণ মানুষের লাগালের বাইরে। ফলে জনদুর্ভোগ এখন চরমে উঠেছে।
তিনি আরো বলেন, দেশে মূল্যস্ফীতি এখন সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। চাল, ডাল, তেল, আটা, লবণ, চিনি, পেঁয়াজ, ডিম, গোস্ত ও তরিতরকারি সহ সবকিছুতেই অগ্নিমূল্য। সরকার এক মাসের ব্যবধানে আবার নতুন করে এলপি গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির কারণে জনদুর্ভোগ ব্যাপকভাবে বেড়ে গেলেও সরকারের মন্ত্রীরা জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে বলে পরিহাস শুরু করেছেন। তাই এই গণবিরোধী সরকারকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তিনি গণপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলনে যেকোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে সকলের প্রতি আহবান জানা।
মহানগরী আমীর বলেন, সরকার নিজেদের অবৈধ ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতেই দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধ্বংস করে দিয়েছে। দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারের দলীয় কার্যালয়ে পরিণত করা হয়েছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের রক্ষাকবজ কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি বাতিল করে কথিত নির্বাচনের নামে ভোট চুরির মহড়া প্রদর্শন করা হচ্ছে। তিনি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য দলনিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান। অন্যথায় রাজপথে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের মাধ্যমে জনগণই নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে।