বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম বলেছেন, ‘মিরাজ’ রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বিশেষ মুজিজা এবং আল্লাহর কুদরতের মহানিদর্শন। সূরা বনি ইসরাইলের ১ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘পবিত্র ও মহিমাময় তিনি, যিনি তাঁর বান্দাকে রজনীযোগে ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসায়; যার পরিবেশ আমি বরকতময় করেছিলাম। তাঁকে আমার নিদর্শন দেখানোর জন্য, নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’ তাই ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির জন্য জীবনের সকল ক্ষেত্রে মিরাজের নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। তিনি মিরাজের শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করতে সকলের প্রতি আহবান জানান।
তিনি আজ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত ‘মিরাজের তাৎপর্য ও গুরুত্ব’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ডঃ মুহাম্মদ রেজাউল করিমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন তা’মিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ ও বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন মাওলানা যাইনুল আবেদীন। আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহনগরী উত্তরের নায়েবে আমীর আব্দুর রহমান মুসা, বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন আ ন ম রশীদ আহমদ এবং ঢাকা মহানগরী উত্তরের মজলিসে শূরা সদস্য ও উলামা বিভাগের সভাপতি ড. মাওলানা হাবিবুর রহমান প্রমূখ।
মাওলানা এটিএম মা’ছুম বলেন, কেউ কেউ মিরাজ রাসূল (সাঃ) স্বপ্নযোগে হয়েছে বলে দাবি করলেও বাস্তবে সশরীরেই হয়েছে। মূলত, আল্লাহ তায়ালা তাঁর অলৌকিক নিদর্শন, নবুয়তের সপক্ষে এক বিরাট দলিল, জ্ঞানীদের জন্য উপদেশ, মুমিনদের জন্য জ্বলন্ত প্রমাণ, হেদায়েত, নিয়ামত ও রহমত, ভূমণ্ডল ও নভোমণ্ডর সম্পর্কে সম্যক জ্ঞানার্জন, সৃষ্টিজগতের রহস্য উন্মোচন, স্বচক্ষে জান্নাত-জাহান্নাম অবলোকন, পূর্ববতী নবী-রাসুলদের সঙ্গে পারস্পরিক সাক্ষাৎ ও পরিচিতি, মহাকাশ, আরশ, কুরসি, লওহ, কলম প্রভৃতি সামনাসামনি দেখিয়ে দেওয়ার জন্য তাঁর প্রিয় হাবিবকে নিজের একান্ত সান্নিধ্যে আসার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। বায়তুল মুকাদ্দাসে মহানবী (সা.)-এর ইমামতিতে হযরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে সকল নবী-রাসুলগণের সালাত আদায় করার মাধ্যমে তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠত্ব ও আদর্শ শিক্ষার অনুসরণীয় বিশ্বজনীন রূপটি প্রমাণিত হয়েছে।
তিনি বলেন, মিরাজ ছিল মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে বিশ্বনবী (সাঃ) জন্য একটি অনন্য উপহার। হাদিসে রাসূল (সাঃ)এ এসেছে, মিরাজের রাতে রাসূল (সা.) ও তাঁর উম্মতের জন্য কয়েকটি উপহার প্রদান করা হয়। প্রথমত, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। দ্বিতীয়ত, শিরককারী ছাড়া সকল উম্মতের জন্য ক্ষমার ঘোষণা। তৃতীয়ত, সূরা আল-বাকারার শেষাংশ। চতুর্থত, সূরা বনি ইসরাইলের ১৪ দফা নির্দেশনা। এগুলো হচ্ছে, ‘একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করা ও তাঁর সঙ্গে কারও শরীক না করা, পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করা, আত্মীয়স্বজন, এতিম ও মুসাফিরের হক যথাযথভাবে আদায় করা, অপচয় না করা, অভাবগ্রস্তদের ও প্রার্থীকে বঞ্চিত না করা, হাত গুটিয়ে না রেখে সব সময় কিছু দান করা, অন্যায়ভাবে কোনো মানুষকে হত্যা না করা, দারিদ্র্যের ভয়ে সন্তান হত্যা না করা, ব্যভিচারের নিকটবর্তী না হওয়া, এতিমের সম্পদের ধারের কাছে না যাওয়া, যে বিষয়ে জ্ঞান নেই তা অনুসন্ধান করা, সঠিক ওজন পরিমাপ করা, প্রতিশ্রুতি পালন করা, পৃথিবীতে দম্ভভরে চলাফেরা না করা’। মূলত, এসব নির্দেশনা একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার গাইড লাইন। তিনি মেরাজের নির্দেশনা মোতাবেক দেশকে ন্যায়-ইনসাফভিত্তিক কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্দোলনে সকলকে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তোলার আহবান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য মাওলানা যাইনুল আবেদীন বলেন, বিশ্বনবী (সাঃ) এর মিরাজ বিশ্ব ইতিহাসের অতিগুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যময় ঘটনা। মূলত, মদীনায় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগেই মহানবী (সাঃ)-কে একটি ইসলামী রাষ্ট্রের রূপরেখা দেয়া হয়েছিল। আর সে রূপরেখা বাস্তবায়নের মাধ্যমেই তিনি মদীনাকে একটি অপরাধমুক্ত কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি মিরাজের রূপরেখা অনুযায়ি একটি কল্যাণমুখী সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সকলকে একাত্ম হওয়ার আহবান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, পবিত্র মিরাজের শিক্ষা ও নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণের মধ্যেই রয়েছে বিশ্বমানবতার সর্বাঙ্গীন কল্যাণ। মূলত, ইসলাম ও মুসলমানদের ওপর উৎপীড়নের পরিসমাপ্তির দ্বারপ্রান্তে আদর্শ সমাজ ও জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনের বুনিয়াদি মূলনীতি মিরাজের মাধ্যমে মানবজাতির জন্য উপহার হিসেবে পাঠানো হয়েছে। যা মহাগ্রন্থ আল কুরআনের সূরা বনি ইসরাইলের মিরাজসংক্রান্ত আলোচনায় বিধৃত হয়েছে। তাই ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুমহান জীবনাদর্শ ও মিরাজের শিক্ষামূলক অধ্যাদেশ বাস্তবায়নের কোন বিকল্প নেই। তিনি একটি আদর্শ ও কল্যাণমুখী জাতি ও সমাজ গঠনে মিরাজের রূপরেখা অনুসরণে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের প্রতি আহবান জানান।