বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর জননেতা ডাঃ শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা পরপর ২ বার স্বাধীনতা অর্জন করলেও স্বাধীনতার লক্ষ্য আজও অনেক ক্ষেত্রেই অধরাই রয়ে গেছে। গণতন্ত্র, গতান্ত্রিক মূল্যবোধ, সাম্য, আইনের শাসন ও উন্নত জীবনের আকাক্সক্ষা নিয়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করলেও ‘৪৭ পরবর্তী সময়ে শুধুমাত্র ভৌগলিক কারণে আমাদের প্রতি চরম বৈষম্য করা হয়েছে। পরবর্তী ৫০ বছরেও আমাদের সে আশা পূরণ হয়নি। তাই স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে হলে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদেরকেই মূল ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি দ্বীন বিজয়ের প্রত্যয়ে কর্মীদের সর্বোচ্চ ত্যাগ শিকারে প্রস্তুত থাকার আহবান জানান।
তিনি আজ রাজধানীতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত এক ভার্চুয়াল কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন নায়েবে আমীর ও সাবেক সংসদ সদস্য ডাঃ সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল। বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর আব্দুর রহমান মুসা, শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি হাফেজ রাশেদুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি লস্কর মোহাম্মদ তসলিম, মাহফুজুর রহমান ও নাজিম উদ্দিন মোল্লা প্রমূখ।
সম্মেলনে শুরুতে কালামে হাকীম থেকে দারস পেশ করেন সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম। বক্তব্য শেষে মুহারাম আমীরে জামায়াত মহানগরী আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের লেখা আল কুরআনের আলোকে ইসলামী আন্দোলনের সফলতা ও ইসলামী আন্দোলনঃ মৌলিক, সঠিক কর্মপন্থা ও ভ্রান্তির অপনোদন নামীয় ২ টি বইয়ের মোড়ক উম্মোচন করেন এবং গ্রন্থ দু’টির বহুল প্রচার ও সফলতা কামনা করেন।
আমীরে জামায়াত বলেন, মূলত গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার জন্যই সর্বস্তরের সাধারণ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু স্বাধীনতার অর্জনের দাবিদাররাই দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে ধ্বংস করেছে। ভোগবাদী শাসনে দেশ ও জাতি এখন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সৃষ্টি হয়েছে মানুষে মানুষে বৈষম্য। চারিদিকে মজলুম মানুষের আহাজারী। তাই জাতিকে এই সংকট থেকে মুক্ত করতে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের অগ্রসৈনিকের ভূমিকা পালন করতে হবে। আর এই পথ মোটেই মসৃণ নয় বরং কংটকাপূর্ণ। তাই শাহাদাতের তামান্না নিয়ে দেশ, জাতি ও ইসলামের কল্যাণে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যেতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলমান। তাই এই দেশ কুরআন-সুন্নাহর আলোকে পরিচালিত হওয়ায় কাক্সিক্ষত। কিন্তু সে লক্ষ্যে এখনও আমারা পৌঁছতে পারিনি। তবে আগামী দিনে হবে না এমন নয় বরং চলমান স্রোত পাল্টিয়ে দিয়ে রাজনীতিতে ইতিবাচক ও নতুন ধারা দৃষ্টি করতে হবে। দেশকে কল্যাণরাষ্ট্রে পরিণত করতে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। তিনি ইসলামের কাক্সিক্ষত বিজয়ের লক্ষ্যে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।
ডাঃ সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ঘোষণা করেছেন, মু’মিনের জন্য বিজয় নিশ্চিত। দুনিয়াবি জীবনে আমাদের পদপদবী ভিন্নতর হলেও আমাদের মৌলিক পরিচয় হলো আমরা মু’মিন। কিন্তু দাবী করলেই মু’মিন হওয়া যাবে না বরং যথাযথ গুণাবলী অর্জনের মাধ্যমেই নিজেকে মু’মিন হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আর মু’মিনের প্রাথমিক গুণাবলী হচ্ছে, আল্লাহ ইবাদত করা, তার সাথে কাউকে শরীক না, পিতামাতা, প্রতিবেশী, এতিম ও মুসাফিরদের হক যথাযথভাবে আদায় করা। তাই এসব বিষয় মু’মিনের উপেক্ষা করার কোন সুযোগ নেই। তিনি ঈমানের ওপর বলিষ্ঠ থাকার জন্য কর্মীদের প্রতি আহবান জানান।
মাওলানা এটিএম মা’ছুম বলেন, গোটা বিশ্বই ইহুদী-খ্রীষ্টান অপশক্তির দ্বারা জুলুম-নির্যাতনের শিকার। আমাদের প্রিয় জন্মভূমিও তা থেকে আলাদা নয়। জুলুমবাজ ও কর্তৃত্ববাদী সরকার ইসলাম ও ইসলামী আন্দোনের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাই সরকারের জুলুম-নির্যাতনে বিচলিত হওয়া যাবে না বরং সকল ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করেই ইসলামী আন্দোলনকে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে। তিনি আন্দোলনকে গতিশীল ও বেগবান করার জন্য কর্মীদেরকে আদর্শিক ও চারিত্রিক শক্তিকে কাজে লাগানোর আহবান জানান।
সাইফুল আলম খান মিলন বলেন, মানুষ পাশ্চাত্যকে অনুসরণ করে। আমাদের দেশের মানুষও এখন পাশ্চাত্যমুখী। তারা পরাক্রমের সাথেই বিশ্ব শাসন করছেন। জাতিসংঘসহ আন্তজার্তিক সংস্থাগুলো তাদের অন্যায় কাজের অনুমোদন দিতেই ব্যস্ত। তারা এখন অপ্রতিরোধ্য শক্তি। তারা ইসলাম ও মুসলামদের ধ্বংস করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। তাই মূল্যবোধহীন কথিত সভ্যতার বিপরীতে মুসলমানদেরকে নতুন সভ্যতা গড়ে তুলতে হবে।
এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, জামায়াতে ইসলামী একটি আদর্শবাদী আন্দোলন। জামায়াত প্রচলিত কোন রাজনৈতিক দল নয় বরং নিয়মতান্ত্রিক ও কল্যাণমুখী রাজনৈতিক দল। জামায়াত সমাজ থেকে জাহেলিয়াতের মূলোৎপাটন করে ন্যায়-ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এজন্য তাকওয়াবান নেতৃত্ব ও আদর্শবাদী এবং ত্যাগী কর্মীবাহিনীর কোন বিকল্প নেই। তিনি রাজধানীকে ইসলামের দুর্গ ও ইসলামী আন্দোলনের রাজধানী বানাতে কর্মীদের সর্বোচ্চ ত্যাগ শিকারের আহবান জানান।
মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইসলামকেই একমাত্র জীবন ব্যবস্থা হিসাবে মনোনীত করেছেন। মূলত মানবতার মুক্তির সনদই হচ্ছে ইসলাম। তাই বিশ্বমানবতার মুক্তির জন্য সকলকেই ইসলামের পতাকাতলেই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ইসলামের বিরুদ্ধে অতীতে যেমন ষড়যন্ত্র হয়েছে এবং এখনও তা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু সকল ষড়যন্ত্রই ব্যর্থ হয়েছে। তাই সকল বাধা-প্রতিবন্ধকত ও ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করেই ইসলামকে বিজয়ী আদর্শ হিসাবে প্রতিষ্ঠার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিক্রান্ত হলেও আমরা এখন স্বাধীনতার সুফল থেকে অনেকটাই বঞ্চিত হচ্ছি। দেশে মানবাধিকার নেই; নেই কথা বলার অধিকার। জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার নেই। এমনকি মানুষের গ্যারান্টি স্বাভাবিক মৃত্যুর। ফলে দেশে এক কঠিন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এমতাবস্থায় দেশকে এই শাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে মুক্ত করতে হলে দ্বীনকে বিজয়ী করার কোন বিকল্প নেই।
সভাপতির বক্তব্যে মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, ইসলামী আন্দোলন একটি ইবাদত। আমরা মু’মিন, মুসলিম, ঈমানদার ও দ্বীনি কাফেলার গর্বিত কর্মী। এটি আল্লাহ তায়ালার বড় নিয়ামত। জান্নাত নিশ্চিত করার জন্য আল্লাহ আমাদেরকে এই পথে এনেছেন। তাই অধিকার হারা মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদেরকে এই মহতি সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে। কুরআন-সুন্নাহর আলোকে দেশকে ন্যায়-ইনসাফের ভিত্তিতে কল্যাণরাষ্ট্রে পরিণত করতে আমাদের সকল সামর্থের যথাযথ ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু একটি মহল দেশে ইসলামের অগ্রযাত্রা রুখে দেয়ার জন্য গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। বাতিলরা বালির বাধ দিয়ে আমাদের অগ্রযাত্রা কোন ভাবেই রোধ করতে পারবে না। বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা মহানগরী নানাবিধ সমস্যায় জড়িত। তাই এই রূপসী নগরীকে বাসযোগ্য করে গড়ে তোলার জন্য নগরীর সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করে তা সমাধানে গণসচেতনতা সৃষ্টির জন্য জামায়াতের নেতাকর্মীদেরকে নিরলসভাবে কাজ করতে হবে। জামায়াতকর্মীদের অবশ্যই গণসম্পৃক্ততা বৃদ্ধি এবং সাধারণ মানুষের যেকোন সমস্যা সমাধান, মানবিক তৎপরতা ও সমাজ কল্যাণমূলক কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে। তিনি ঢাকা নগরীকে সর্বাধুনিক নগরীতে পরিণত করার জন্য নগরবাসীকে সাথে নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদেরকে একযোগে কাজ করার আহবান জানান।