বুড়িগঙ্গার তীরে অবস্থিত প্রায় সাতশ’ বছরের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী নগরী ঢাকা। মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে ১৬০৮ সালে ঢাকায় রাজধানী স্থাপিত হলে বিশ্বব্যাপী এ নগরীর মর্যাদা ও গুরুত্ব বেড়ে যায়। সে হিসেবে রাজধানী ঢাকার বয়স প্রায় ৪১৩ বছর। পুরনো এ শহরটি সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক। কিন্তু এই নগরীর ক্রমবিবর্তনের চাহিদার আলোকে নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়নি। মূলত রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতার কারণেই ঢাকা মহানগরী অপরিকল্পিত ও জনদুর্ভোগের নগরী হিসেবে রয়ে গেছে। নাগরিক সুবিধা খুবই অপ্রতুল ও নিম্নমানের। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সময়োপযোগী ও গতিশীল প্রশাসন এবং দক্ষ জনবল অপরিহার্য। উন্নত বিশ্বের নগর ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ঢাকাকে সর্বাধুনিক নগরীতে রূপান্তরিত করাও জরুরি। এজন্য বড় প্রয়োজন নগর প্রশাসনের ‘সদিচ্ছা’। এই সদিচ্ছার অনুপস্থিতিই এখন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
অপরিকল্পিত গড়ে ওঠা ঢাকা শহরটি জনঘনত্বের মাত্রা ছাড়িয়েছে। নাগরিক সুযোগ-সুবিধা মারাত্মক বিঘ্নিত হচ্ছে। যানজট, জলজট, মশার উপদ্রবসহ নানা সংকটে ঢাকাবাসীর জীবন রীতিমতো বিপর্যস্ত। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও মারাত্মক নেতিবাচক। নগরীতে হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, গুম, অপহরণ, গুপ্তহত্যা ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বেড়েছে। আশঙ্কাজনক বেড়েছে রাজনৈতিক হানাহানি। আধুনিকতার নামে মাদকে ধ্বংস হচ্ছে যুবসমাজ। সরকার ও নগর প্রশাসন মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি দিতে পারছে না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বিভেদ ও নেতিবাচক রাজনীতি পরিহার করে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। ঢাকায় সামাজিক সম্প্রীতির বন্ধন সৃষ্টি করা খুবই প্রয়োজন। পঞ্চায়েত বা পাড়া সংস্কৃতি গড়ে তোলা দরকার।
গণপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে রাজনৈতিক দলগুলোর লেজুড়বৃত্তির ঊর্ধ্বে উঠে নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালন করতে হবে। আর রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য নগর প্রশাসনকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা ও আইনের অপপ্রয়োগে সহজেই সমাজের যুবসমাজ মাদকসেবনে লিপ্ত। মাদকের এই ভয়াবহ ছোবল নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় আইন সংশোধন ও আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন করা জরুরি। ভ্রাম্যমাণ আদালতসহ নানাবিধ জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে মাদকমুক্ত সুস্থ সমাজ গঠনে সর্বস্তরের সচেতন নগরবাসীকে এগিয়ে আসতে হবে। বর্ষা মওসুমে জলাবদ্ধতা নগরীর অন্যতম সমস্যা। নাগরিক পরিষেবার আওতায় পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পয়ঃনিষ্কাশন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পানি নিষ্কাশন, টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেটসহ নাগরিক সেবার টেকসই সমাধান করা জরুরি। একেক সেবা সংস্থা একেকভাবে সেবা নিশ্চিত করায় সারা বছর নগরজুড়ে খোঁড়াখুঁড়ি চলে। নগরবাসীর এ ভোগান্তি লাঘবে সকল সেবা সংস্থার সংযোগলাইন এক জায়গায় আনতে ইউটিলিটি ডাক্ট/ট্যানেল তৈরি জরুরি হয়ে পড়েছে। এজন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহসী পদক্ষেপ দরকার।
ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে রাজধানীর নাগরিক পরিষেবার মান ক্রমান্বয়ে নিম্নমুখী। মূলত অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও রাজউকের নকশাবহির্ভূত ইমারত নির্মাণ, রাজউকের দুর্বল মনিটরিং ব্যবস্থা ও অপ্রতুল ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার কারণেই নগরীর জলাবদ্ধতা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে অপরিকল্পিত ও নকশাবহির্ভূত ইমারত নির্মাণ বন্ধ, নগরায়ণে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার এবং পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিতে হবে। উন্নত বিশ্বে শহরের জনসংখ্যা সহনীয় মাত্রায় রাখার জন্য বড় শিল্পকারখানা স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া হয় না। রাজধানী শহর থেকে অন্য শহরে যেতে হলে শহরের ভেতর দিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে বাইপাস ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। ঢাকাকে কেন্দ্র করে তিনটি বাইপাস সড়ক বা রিংরোড করার পরিকল্পনা থাকলেও কোনোটি কার্যকরভাবে গড়ে ওঠেনি। গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে বাস রুট রেশনালাইজেশন সিস্টেম গড়ে তোলা জরুরি। এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হলেও তেমন কোনো অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এছাড়া কৌশলগত গণপরিবহন পরিকল্পনা (এসটিপি) বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। এজন্য ঢাকায় অন্যতম সমস্যা যানজট নিরসন হচ্ছে না। শহরের মধ্যে চলাচলকারী যানবাহনের গতি যাতে শ্লথ না হয়, সে বিষয়টি মাথায় রেখে ইউটার্নের পরিবর্তে ইউলুপ, ওভারপাস ও আন্ডারপাসের ব্যবস্থা করতে হবে। বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শহরের কেন্দ্রস্থলের পরিবর্তে প্রান্তে গড়েতুলতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়, চিকিৎসা ও কারিগরি মহাবিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন ধরনের গণপরিবহনযোগে আসা-যাওয়া করে। কিন্তু আমাদের দেশের নগরব্যবস্থায় এসবের অনুপস্থিতির কারণেই পরিকল্পিত নগর কাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। আর যানজট মুক্ত করে একটি বসবাসযোগ্য ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন মহানগরী গড়ে তুলতে হলে এসব সমস্যার গ্রহণযোগ্য সমাধান লাগবে। সম্প্রতি রাজধানীর যানজট নিরসনে একাধিক উড়াল সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। আশা করা হয়েছিল, এগুলো চালু হলে যানজট সমস্যা সহনীয় মাত্রায় আসবে। কিন্তু পরিকল্পনায় ত্রুটি থাকার কারণে উড়াল সেতুগুলো কাক্সিক্ষত ফল দিতে ব্যর্থ হচ্ছে।
যানবাহন বিশেষজ্ঞদের অভিমত, ব্যয়বহুল উড়াল সেতুর পরিবর্তে বিভিন্ন সড়কে ইউলুপ ও শহরের চতুর্মুখী মোড়গুলোতে ওভারপাস ও আন্ডারপাস নির্মাণ করা হলে তা অধিক ফলপ্রসূ হতো। পাশাপাশি হাঁটা-চলার উপযোগী ফুটপাত নির্মাণ এবং মানসম্পন্ন গণপরিবহণ চলাচলের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। একইভাবে দ্বিতল বা ত্রিতল বিশিষ্ট বাসস্ট্যান্ড নির্মাণ করেও যানযট অনেকাংশে নিরসন করা সম্ভব। বায়ু ও শব্দ দূষণ ঢাকার অন্যতম মৌলিক সমস্যা। এই সমস্যাগুলো নাগরিক জীবনের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। মূলত মানহীন ও চলাচল অনুপযোগী যানবাহনের কালো ধোঁয়া, পরিবেশবান্ধব জ্বালানির অভাব, নগরীর অভ্যন্তরে ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য অপসারণে অব্যবস্থাপনা, সিটি করপোরেশনের উদাসীনতা ও সেবার নিম্নমান থেকেও বায়ুদূষণ হয়ে থাকে। এই বিব্রতকর অবস্থা থেকে নগরবাসীকে রক্ষা করতে হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বায়ুদূষণ রোধে মানহীন যানবাহন প্রত্যাহার, পরিবেশবান্ধব জ্বালানির ব্যবহার নিশ্চিতকরণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া দরকার।
শব্দদূষণও ঢাকার বড় সমস্যা। আমাদের দেশে রয়েছে শব্দদূষণ নীতিমালা। ২০০৬ সালে প্রণীত এই নীতিমালা অনুযায়ী আবাসিক এলাকায় সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ শব্দসীমা হলো ৫৫ ডেসিবল এবং রাত ৯টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ৪৫ ডেসিবল। এর বেশি শব্দ সৃষ্টি করা দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু এ বিধিমালা মানা হচ্ছে না। মূলত উদাসীনতা, দায়িত্বহীনতা ও নীতিমালার যথাযথ প্রয়োগের অভাবেই ঢাকা নগরীসহ এলাকার শব্দদূষণ রোধ কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খুবই নাজুক। শহরের বিভিন্ন স্থানে বর্জ্য ফেলার নির্ধারিত স্থান থাকলেও এগুলো উন্মুক্ত। এ কারণে প্রতিদিন ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত বর্জ্য জমা হওয়ায় তা নির্ধারিত স্থান ছাড়িয়ে সড়কের ওপর এসে পড়ে। উন্মুক্ত স্থানে বর্জ্য ফেলার কারণে আশপাশের স্থানও দুর্গন্ধময় থাকে। খোলা ট্রাকে অতিরিক্ত বর্জ্য বোঝাইয়ের কারণে সড়ক নোংরা হয়ে চলাচলে মারাত্মক অস্বস্তি সৃষ্টি করে। আমাদের দেশে জৈব ও অজৈব বর্জ্য পৃথক করার যেমন ব্যবস্থা নেই, অনুরূপ জৈব বর্জ্য দিয়ে বিদ্যুৎ ও সার উৎপাদনের পরিকল্পনা এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে গৃহীত হয়নি। সরকারি উদ্যোগের অভাবে কোনো বেসরকারি সংস্থাও এগিয়ে আসেনি।
নানা সমস্যায় জর্জরিত ঢাকাবাসীর আবাসন সমস্যাও বেশ প্রকট। নিয়ন্ত্রণহীন বাড়িভাড়া নগর জীবনের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ঢাকার ৬০ শতাংশের বেশি জনগোষ্ঠী অস্থায়ী আবাসনে বসবাস করেন। এমনকি নগরীর ৪০ শতাংশ মানুষের বসবাস অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বস্তিতে। কিছু সংখ্যক মানুষের আবার বস্তিতেও স্থান হয় না বরং তারা খোলা আকাশের নিচে রাস্তাঘাটে মানবেতর জীবনযাপন করেন। বর্ষা মওসুমে এসব ভাগ্যাহত বনি আদম বৈরী প্রাকৃতিক অবস্থার মুখোমুখি হন। আবার শীতকালে তাদেরকে তীব্র শীতের কবলে পড়তে হয়।
সরকার অনুমোদিত বাসস্থান ও তার সরবরাহ মোট প্রয়োজনের ১ শতাংশের বেশি নয়। তাই নগরীর আবাসন সমস্যা সমাধানকে অগ্রাধিকার দিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। আর সে লক্ষ্যে শ্রমজীবী ও নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য মানসম্মত এবং স্বল্প ভাড়ার আবাসন প্রকল্প গ্রহণ করা দরকার। এমনকি একান্ত মানবিক কারণে ছিন্নমূল ও ভাসমান লোকদের পুনর্বাসন করাও খুবই জরুরি। সঙ্গত কারণেই রাজউক, নগর উন্নয়ন অধিদফতর ও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা নিয়ে নগরীর আবাসন সমস্যা সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। এক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনও ভূমিকা রাখতে পারে। বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণেও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। জীবিকার তাগিদেই মানুষের জীবন হয়ে উঠেছে নগরকেন্দ্রিক। উন্নত ও সুন্দর জীবনের জন্য সবার আগে প্রয়োজন নিরাপদ স্বাস্থ্যসম্মত নগর ব্যবস্থাপনা। কিন্তু ঢাকার স্বাস্থ্যসেবার মান খুবই নিম্নমানের। ঢাকায় জাতীয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান ছাড়া নগর কেন্দ্রিক কোনো সেবা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের ওয়ার্ডভিত্তিক স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তাদের তেমন তৎপরতাও লক্ষ্য করা যায় না। মশা নিয়ন্ত্রণে কাঠামো থাকলেও জনগণের স্বাস্থ্যসেবার দিকে খেয়াল রেখে কর্তৃপক্ষকে মশা নিধনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে দেখা যায় না। নগর প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে খুবই উদাসীন। তাই নগরীর মশা নিধনে মশার উৎস সব ড্রেন, নালাসহ সংশ্লিষ্ট ময়লাযুক্ত স্থানে নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানো জরুরি।
নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ, স্বাস্থ্যবান ও সংস্কৃতিমনা হিসেবে গড়ে তুলতে হলে সুস্থ ধারার ক্রীড়া ও সংস্কৃতি চর্চার কোনো বিকল্প নেই। মূলত শরীরচর্চা ও বিনোদন যুবসমাজকে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী করে। তাছাড়া এটি মানসিক বিকাশ সাধন, শৃঙ্খলাবোধ, চরিত্রগঠন, পরস্পরের প্রতি সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় সাংস্কৃতিক বিনিময়কে জোরদার ও শক্তিশালী করে তোলে। কিন্তু ঢাকার ক্রীড়া পৃষ্ঠপোষকতা একেবারে দায়সারা গোছের। নগরীর জনসংখ্যার তুলনায় খেলার মাঠও পর্যাপ্ত নয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় খেলার মাঠ নেই। নেই ক্রীড়াবিদদের জন্য আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা ও ক্রীড়া সামগ্রীর সহজলভ্যতা। পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ক্রীড়া সংগঠক ও ভালো মানের ক্রীড়াবিদও সৃষ্টি হচ্ছে না।
বেকারত্ব দূরীকরণে বাছাইকৃত যুবকদের বাধ্যতামূলক ভাষা ও কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত করা দরকার। জীবনমুখী শিক্ষাকে উন্নত করে যুবকদের যুব-উন্নয়ন প্রশিক্ষণের আওতায় ব্যবসায় উদ্যোগ গ্রহণের সুযোগ তৈরি করতে হবে। হকার্সদের জন্য আলাদা বহুতল বিশিষ্ট হকার্স মার্কেট নির্মাণ জরুরি। উন্নত দেশের শিক্ষাব্যবস্থাও উন্নত। তাই দেশ ও জাতিকে নতুন শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উপযোগী করে গড়ে তুলতে হলে মানসম্পন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলত হবে। সময়োপযোগী পাঠদানপদ্ধতি, মেধাবী ও বিত্তহীন শিক্ষার্থীদের পৃষ্ঠপোষকতা, আধুনিক শিক্ষা অবকাঠামো, সর্বাধুনিক শিক্ষা উপকরণ, ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সার্বিক শান্তিপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। যোগ্য ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষার্থীদের মেধাবিকাশে সহায়ক শিক্ষার সম্প্রসারণ, উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে আসন বৃদ্ধি, মেধাবীদের বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি এবং শিক্ষার্থীদের প্রণোদনা দেওয়া জরুরি।
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা এখনও বৈশ্বিক মানের হয়ে ওঠেনি। বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় আমরা এখনও পিছিয়ে। ঢাকার যানজট, আবাসন সমস্যা, পরিবহন ব্যবস্থায় আধুনিকায়ন, সর্বাধুনিক পরিবহন উপকরণ, যানজট সহনীয় পর্যায় রাখা, নগরীর রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, পর্যাপ্ত উড়াল সেতু, আন্ডারপাস, বাইপাসের সুবিধা বৃদ্ধি, শিক্ষা সম্প্রসারণ, শিক্ষাক্ষেত্রে প্রণোদনা, বিত্তহীন শিক্ষার্থীদের নগর প্রশাসনের সার্বিক সহায়তা, ছিন্নমূলদের পুনর্বাসন, বায়ু ও শব্দ দূষণমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতকরণ, ক্রীড়া ও আত্মবিনোদনের ক্ষেত্রে পৃষ্ঠপোষকতা, সুস্থ ধারার সংস্কৃতি চর্চা, নিরাপদ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পরিবেশবান্ধব জ্বালানি নিশ্চিতকরণ, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, লোডশেডিং সমস্যা নিরসনে সৌরবিদ্যুৎ প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি।
নগরবাসীর উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্যসেবা, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা এবং চিকিৎসাসেবা বিকেন্দ্রীকরণে নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে উন্নতমান ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা অত্যাবশ্যক। উল্লিখিত সকল সমস্যার সমাধান ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে ঢাকাকে একটি বাস উপযোগী সর্বাধুনিক মেগা সিটি গড়ে তোলার লক্ষ্যে সর্বস্তরের নগরবাসীর সহযোগিতাও প্রয়োজন।
লেখক: কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।