বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেছেন, ’৫২-র ভাষা আন্দোলন শুধু ভাষার জন্য নয় বরং এই আন্দোলন স্বাধীকার আন্দোলনের জোরালো ভীত রচনা করেছিল। সে পথ ধরেই আমরা ১৯৭১ সালে লাল সবুজের পতাকা পেয়েছি। কিন্তু অতীব পরিতাপের বিষয় যে, আমরা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার, বাক-স্বাধীনতা সহ মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা পাইনি। মহল বিশেষের অহমিকা ও ক্ষমতা আকড়ে ধরে থাকার মানসিকতার কারণে রক্ত দিয়ে অর্জিত বাংলা ভাষা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি; লাল সবুজের পতাকা আজ হচ্ছে ক্ষত-বিক্ষত। শহীদদের যথার্থভাবে মূল্যায়নও করা হয়নি।
তিনি ভাষা আন্দোলনে শহীদদের গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের যথাযথভাবে রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শনের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান।
আজ ২০ ফেব্রুয়ারী রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও মহান শহীদ দিবসের আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহা. রেজাউল করিমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর আব্দুর রহমান মুসা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি ডা.ফখরুদ্দিন মানিক ও নাজিমুদ্দিন মোল্লা, শিবিরের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি মাসুদুর রহমান এবং জামায়াত নেতা আবুল বাশার প্রমূখ।
মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, ১৯৪৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল। এদেশের ইসলামী আদর্শে বিশ্বাসী চিন্তাশীল ও দেশপ্রেমিক মানুষ ভাষা আন্দোলনের অগ্রপথিকের ভূমিকা পালন করেন। তাদের দ্বারা গঠিত তামাদ্দুন মজলিস এ আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। অধ্যাপক গোলাম আযম ছিলেন ভাষা আন্দোলনের অগ্রসৈনিক। তিনি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর কাছে মানপত্রও পাঠ করেছিলেন। অধ্যাপক গোলাম আযম ডাকসুর নির্বাচিত জিএস থাকলেও রাজনৈতিক সংকীর্ণতার কারণে ডাকসুর নামফলক থেকে তার নাম মুছে ফেলা হয়েছে। জুলুমবাজ সরকারের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে কারারুদ্ধ অবস্থায় এই কিংবদন্তী ভাষাসৈনিক মৃত্যুবরণ করেছেন। মহল বিশেষের হীন্যমনতার কারণেই ভাষা আন্দোলনের কৃতিত্ব থেকে অধ্যাপক গোলাম আযমকে বঞ্চিত করা করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। কিন্তু এতে তারা কোনভাবেই সফল হয়নি; হবেও না বরং ইতিহাসই প্রকৃত ভাষা সৈনিকদের মর্যাদা নিশ্চিত করবে।
তিনি বলেন, অন্যায়, অবিচার, অপরাজনীতি ও বৈষম্যের পরিবর্তে ন্যায়-ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠাই ছিল স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে দুর্বার মুক্তি সংগ্রামের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করলেও প্রায় পাঁচ দশক পরেও স্বাধীনতার সুফলগুলো আজও আমাদের কাছে অধরায় রয়ে গেছে। নির্বাচনের নামে দেশ ও জাতির সাথে চলছে নির্মম প্রহসন। সাম্প্রতিক স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলো তা থেকে মুক্ত থাকতে পারেনি। তিনি একুশের চেতনায় শোষণ, বঞ্চনা ও দারিদ্রমুক্ত, মানবিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে ইসলামী সমাজ গঠনে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।