বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেছেন, সরকার দেশ পরিচালনায় পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি তারা করোনা মহামারী ব্যবস্থাপনায় কোন সফলতা দেখাতে পারেনি। চলমান সঙ্কটের শুরু থেকেই মাস্ক ও পিপিই ক্রয়ে বড় ধরনের দুর্নীতি-অস্বচ্ছতা, ত্রাণ সামগ্রী বিতরণে স্বেচ্ছাচারিতা ও লুটপাটের পর এখন অযৌক্তিক মূল্যে মানহীন করোনার টিকা ক্রয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। সরকার এখনও আমাদের জন্য করোনার টিকা প্রদানের নিশ্চয়তা প্রদান করতে পারেনি। এমতাবস্থায় বিলম্বে ও উচ্চমূল্যে টিকা ক্রয়ের সিদ্ধান্ত রীতিমত রহস্যজনক। তিনি অবিলম্বে অযৌক্তিক মূল্যে টিকা ক্রয়ের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার ও যৌক্তিক মূল্যে মানসম্পন্ন টিকা ক্রয় করে সকল নাগরিকের জন্য টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান।
তিনি আজ রাজধানীতে অতিরিক্ত দামে নিম্নমানের টিকা আমদানী ও আওয়ামী লুটপাটের প্রতিবাদে এক সমাবেশে এসব কথা বলেন। মিছিলটি যমুনা ফিউচারের সামনে থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে কুড়িল বিশ^রোডে গিয়ে শেষ হয়। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ডা. ফখরুদ্দীন মানিক ও নাজিম উদ্দীন মোল্লা, মহানগরী কর্মপরিষদ সদস্য জামাল উদ্দিন ও ইয়াছিন আরাফাত, মহানগরী মজলিসে শূরা সদস্য আতাউর রহমান সরকার ও মেসবাহ উদ্দীন নাঈম, শিবিরের মহানগরী পশ্চিমের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মারুফ ও উত্তরের সভাপতি ডা. কেরামত আলী প্রমূখ।
সেলিম উদ্দিন বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে করোনার টিকা কিনতে ভারতের চেয়ে প্রায় ৪৭ শতাংশ বেশি দামে নিম্নমানের টিকা ক্রয় করা হচ্ছে। একই টিকা যেখানে ভারত ২.৭২ ডলার বা ২৩১ টাকায় ক্রয় করছে, বাংলাদেশ তা ৪ ডলার বা ৩৪০ টাকা দরে ৪৭ শতাংশ বেশি দামে কিনছে সম্মত হয়েছে। এমনকি টিকা ক্রয়ে ঔষধ প্রশাসনের বিদ্যমান আইন অনুসরণ এবং কোন কোন নথির ভিত্তিতে ক্রয়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে সরকারের পক্ষে সে বিষয়টিও স্পষ্ট করা হয়নি। তিনি করোনার টিকা ক্রয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করে টিকা সংরক্ষণ এবং দেশব্যাপি সকল নাগরিকের মাঝে টিকা বিতরণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহবান জানান।
তিনি বলেন, সরকার দেশেকে দুর্নীতি ও লুটপাটের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছে। এমনকি দুর্নীতির কালো থাবা থেকে মুক্ত থাকতে পারেনি আমাদের স্বাস্থ্যখাতও। রাষ্ট্রের এই অতিগুরুত্বপূর্ণ খাতে নিয়ন্ত্রণহীন দুর্নীতির কারণেই নাগরিকরা কাঙ্খিত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বরাবরই। দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন মতে, স্বাস্থ্য খাতে কেনাকাটা, নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি, পদায়ন, চিকিৎসাসেবা, জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি, ওষুধ সরবরাহসহ ১১টি খাতে দুর্নীতি এখন প্রায় অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী বরাবরই দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা বললেও তা এখন রীতিমত ফাঁকা বুলিতে পরিণত হয়েছে। ফলে দেশের স্বাস্থ্যখাতকে স্বেচ্ছাচারিতা ও নৈরাজ্যমুক্ত করা যায়নি। মূলত সরকার জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় আসেনি বলেই জনগণের জন্য তাদের কোন দায়বদ্ধতা নেই। আসলে এই সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততই জনগণের ভোগান্তি বাড়বে। তাই দেশ ও জাতির কল্যাণেই অগণতান্ত্রিক শক্তির বদলে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তিনি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।