‘আত্মোৎসর্গ ও ত্যাগের মহিমায় সমুজ্জ্বল পবিত্র ঈদ-উল-আযহা’র প্রকৃত শিক্ষা রাষ্ট্রীয়, সমাজ, পরিবার ও ব্যক্তিজীবনে প্রতিফলন ঘটিয়ে কল্যাণমুখী সমাজ প্রতিষ্ঠায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। পবিত্র ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে নগরবাসীর উদ্দেশে এক শুভেচ্ছা বাণীতে তিনি এসব কথা বলেন।
মহানগরী আমীর বলেন, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রতি একনিষ্ঠ আনুগত্য, তাঁর প্রকৃত সন্তুষ্টি ও মানব কল্যাণে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগই ঈদুল-উল-আযহার প্রকৃত শিক্ষা। মূলত এই আনন্দ ত্যাগের; ভোগের নয়। পবিত্র ঈদ-উল-আযহা আমাদেরকে এ শিক্ষা দেয় যে, প্রকৃত সুখ আর আনন্দের উৎস প্রাচুর্যে বা সম্পদে নয় বরং ত্যাগ ও কুরবানীর মধ্যেই রয়েছে অনাবিল সুখ, শান্তি ও প্রকৃত সমৃদ্ধি। তাই কুরবানীর শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আত্মগঠন ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে আর্ত-মানবতার মুক্তির জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, পবিত্র ‘জিলহজ্ব’ মাস এক মহামহিমান্বিত ও বরকতপূর্ণ মাস। এ মাসেই মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহীম (আ.) আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নির্দেশ পালনার্থে স্বীয় পুত্র হযরত ঈসমাইল (আ.)-কে কুরবানি করতে প্রয়াসী হয়েছিলেন। যা সৃষ্টির আদিকাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত অনন্য সাধারণ ও নজীরবিহীন। হযরত ইব্রাহীম (আ.) এর আদর্শ অনুসরণেই মুসলিম উম্মাহ দিবসটিকে পবিত্র ঈদ-উল-আযহা হিসাবে পালন করে আসছে। তিনি মহিমান্বিত এই মাসে প্রিয় পুত্র ঈসমাঈল (আ.)-কে কুরবানি করতে গিয়ে মহান আল্লাহর নির্দেশ পালনার্থে যে ত্যাগের নজরানা পেশ করেছিলেন তা শত-সহস্র বছর পরেও মুসলিম উম্মাহর জন্য অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় আদর্শ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত আছে এবং কেয়ামত পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে।
সেলিম উদ্দিন বলেন, জাগতিক লোভ-লালসা ও কামনা-বাসনার উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে পশু প্রবৃত্তির উপর বিজয় অর্জনই ঈদ-উল-আযহার প্রকৃত শিক্ষা। অন্যায়-অসত্য, অনাচার-পাপাচার, হিংসা-বিদ্বেষ, জুলুম-নির্যাতন, বিভেদ-বিসংবাদ বন্ধ করে সমাজ-রাষ্ট্রে সার্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানবজাতির প্রকৃত কল্যাণ সাধন করা পবিত্র ঈদ-উল-আযহার উদ্দেশ্য। এ উদ্দেশ্য যখন সাধিত হয়, তখনই আমাদের জন্য ঈদ আনন্দঘন, স্বার্থক ও অর্থবহ হয়ে ওঠে।
তিনি বলেন, সরকার বৈশ্বিক মহামারী করোনা মোকাবেলায় সাফল্য দেখাতে পারেনি। এই প্রাণঘাতি ভাইরাসে এ পর্যন্ত সারাদেশে প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষ আক্রান্ত এবং তিন হাজারের অধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। মূলত লাগামহীন দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে দেশের স্বাস্থ্যখাত এখন বিপর্যস্ত। সরকারের দায়িত্বহীনতা ও উদাসীনতার কারণেই রিজেন্ট ও জেকেজির মত মানহীন ও ভূঁইফোর হাসপাতালগুলো করোনার ভাইরাস পরীক্ষার অনুমতি পেয়েছে এবং কথিত পরীক্ষার নামে দেশ ও জাতির সাথে প্রতারণায় লিপ্ত হয়েছে। ফলে সারাদেশেই এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দেশ ও জাতির এই দুর্যোগকালীন মুহূর্তে আমাদের মাঝে হাজির হয়েছে ত্যাগের মহিমায় সমুজ্জ্বল পবিত্র ঈদ-উল-আযহা। তাই ঈদের শিক্ষা ধারণ করে আমাদের সকল সামর্থকে কাজে লাগিয়ে করোনা দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তিনি করোনা দুর্গতদের কল্যাণে মহানগরী জামায়াতের সকল স্তরের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানান।
সেলিম উদ্দিন বলেন, দুনিয়ায় শান্তি ও আখেরাতে মুক্তিই মোমিন জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এক্ষেত্রে সুরা বাকরার ১৭৭ ও সুরা আল বালাদের ১০-১৮ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ হলো, মহান আল্লাহ তায়ালা, পরকাল, ফেরেস্তা, তার কিতাবসমূহ ও নবী-রাসুল(সা.)গণের প্রতি যথাযথভাবে ঈমান এবং নিজেদের অর্জিত সম্পদ থেকে আত্মীয়-স্বজন, অসহায়-এতিম, মিসকিন, পথিক-মুসাফির এবং বন্দীমুক্তির জন্য ব্যয় করতে হবে । একই সাথে যেকোন দুর্যোগ ও দুর্ভিক্ষে দুর্গত মানুষের কাছে খাবার পৌঁছাতে হবে। সর্বপরি করোনার নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় কর্মহীন মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করাও জরুরি। বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী একটি গণমুখী ও কল্যাণকামী রাজনৈতিক দল হিসেবে বিপন্ন মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য সম্ভব সবকিছু করে যাচ্ছে। তিনি দুর্গত মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য সামর্থবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানান।
মহানগরী আমীর পবিত্র ঈদ-উল-আযহার প্রকৃত শিক্ষা ধারণ ও বাস্তব জীবনে প্রতিফলন ঘটিয়ে শোষণ ও বঞ্চনামুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে বেগবান করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালানোর আহবান জানান এবং পবিত্র ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে নগরবাসীর প্রতি শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।