“ইন্নাল হামাদা লিল্লাহ, আসসালাতু আসসালামু আ’লা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)”
সম্মানিত ভাইয়েরা,
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
১. মনে রাখতে হবে আমরা আল্লাহর কাছ থেকে এসেছি আবার আল্লাহর কাছেই ফিরে যাব
২. আমাদেরকে আল্লাহর ইবাদত করতে হবে কোন শর্ত ছাড়াই
৩. আনুগত্য করতে আল্লাহর, রাসুল (ﷺ)-এর এবং দায়িত্বশীলদের যতক্ষণ না পর্যন্ত দায়িত্বশীল শরীয়ত বিরোধী কোন নির্দেশ না দেন।
৪, আল্লাহ আমাদেরকে খলীফার মর্যাদা দিয়ে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, আল্লাহ বলেন-
সূরাঃ আল-বাকারা [২:৩০]
وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَٰٓئِكَةِ إِنِّى جَاعِلٌ فِى ٱلْأَرْضِ خَلِيفَةً
”আবার সেই সময়ের কথা একটু স্মরণ কর যখন তোমাদের রব ফেরেশতাদের বলেছিলেন, “আমি পৃথিবীতে একজন খলীফা-প্রতিনিধি নিযুক্ত করতে চাই ৷”
সুতরাং দাসত্ব এবং মর্যাদার দিক থেকে আমাদের পরিচয় দু’টি
-আব্দাল্লাহ ও
-খালিফাতুল্লাহ
৫. আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষকে হায়াত এবং মৃত্যুর মাঝামাঝি অবস্থায় নির্ধারিত সময় এবং সুযোগ দিয়েছেন কাজের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের জন্য। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন-
সূরাঃ আল-মুলক [৬৭:২]
ٱلَّذِى خَلَقَ ٱلْمَوْتَ وَٱلْحَيَوٰةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا وَهُوَ ٱلْعَزِيزُ ٱلْغَفُورُ
তিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন, কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ? আর তিনি পরাক্রমশালী ও ক্ষমাশীলও।
৬. এই নির্ধারিত সময় এবং সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আমাদেরকে হায়াতের সফর শেষে আগামীকাল (পরকালের) এর জন্য কি প্রস্তুতি নিয়েছি তার ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। সুরা হাশরের ১৮ নং আয়াতে আল্লাহ তা’য়াল সেই নির্দেশই দিয়েছেন-
সূরাঃ আল-হাশর [৫৯:১৮]
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ وَلْتَنظُرْ نَفْسٌ مَّا قَدَّمَتْ لِغَدٍ وَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ إِنَّ ٱللَّهَ خَبِيرٌۢ بِمَا تَعْمَلُونَ
”হে ঈমানদাররা, আল্লাহকে ভয় করো। আর প্রত্যেকেই যেন লক্ষ রাখে, সে আগামীকালের জন্য কি প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। আল্লাহকে ভয় করতে থাক। আল্লাহ নিশ্চিতভাবেই তোমাদের সেই সব কাজ সম্পর্কে অবহিত যা তোমরা করে থাক।”
৭. মানুষের গোপন এবং প্রকাশ্য সব কিছুর খবর জানেন, দুনিয়ার কোন কিছুই আল্লাহর অজানার বাহিরে নয়।
৮. আল্লাহ মানুষকে পরীক্ষা করবেন এবং কিভাবে করবেন তাও জানিয়ে দিয়েছেন সুরা বাক্বারার ১৫৫ আয়াতে-
وَلَنَبْلُوَنَّكُم بِشَىْءٍ مِّنَ ٱلْخَوْفِ وَٱلْجُوعِ وَنَقْصٍ مِّنَ ٱلْأَمْوَٰلِ وَٱلْأَنفُسِ وَٱلثَّمَرَٰتِ وَبَشِّرِ ٱلصَّٰبِرِينَ
” আর নিশ্চয়ই আমরা ভীতি, অনাহার, প্রাণ ও সম্পদের ক্ষতির মাধ্যমে এবং উপার্জন ও আমদানী হ্রাস করে তোমাদের পরীক্ষা করবো। এ অবস্থায় যারা সবর করে”
৯. দুনিয়ার বাড়ি, গাড়ি, সম্পদ, ঐশ্বর্য্য সব কিছুই প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়।
সূরাঃ আল-হাদিদ [৫৭:২০]
ٱعْلَمُوٓا۟ أَنَّمَا ٱلْحَيَوٰةُ ٱلدُّنْيَا لَعِبٌ وَلَهْوٌ وَزِينَةٌ وَتَفَاخُرٌۢ بَيْنَكُمْ وَتَكَاثُرٌ فِى ٱلْأَمْوَٰلِ وَٱلْأَوْلَٰدِ كَمَثَلِ غَيْثٍ أَعْجَبَ ٱلْكُفَّارَ نَبَاتُهُۥ ثُمَّ يَهِيجُ فَتَرَىٰهُ مُصْفَرًّا ثُمَّ يَكُونُ حُطَٰمًا وَفِى ٱلْءَاخِرَةِ عَذَابٌ شَدِيدٌ وَمَغْفِرَةٌ مِّنَ ٱللَّهِ وَرِضْوَٰنٌ وَمَا ٱلْحَيَوٰةُ ٱلدُّنْيَآ إِلَّا مَتَٰعُ ٱلْغُرُور
“ভালভাবে জেনে রাখো দুনিয়ার এ জীবন, একটা খেলা, হাসি তামাসা, বাহ্যিক চাকচিক্য, তোমাদের পারস্পরিক গৌরব ও অহংকার এবং সন্তান-সন্তুতি ও অর্থ-সম্পদে পরস্পরকে অতিক্রম করার চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। এর উপমা হচ্ছে, বৃষ্টি হয়ে গেল এবং তার ফলে উৎপন্ন উদ্ভিদরাজি দেখে কৃষক আনন্দে উৎফূল্ল হয়ে উঠলো। তারপর সে ফসল পেকে যায় এবং তোমরা দেখতে পাও যে, তা হলদে বর্ণ ধারণ করে এবং পরে তা ভূষিতে পরিণত হয়। পক্ষান্তরে আখেরাত এমন স্থান যেখানে রয়েছে কঠিন আযাব, আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। পার্থিব জীবন প্রতারণার উপকরণ ছাড়া আর কিছুই নয়।
১০. আল্লাহর কাছে মানুষের মার্যাদা নির্ধারিত হবে তাক্বওয়ার ভিত্তিতে।
১১. আল্লাহর বিরাট মেহেরবানী আমাদেরকে নেয়ামত ভরা এই সংগঠনে শামীল করেছেন এবং আমাদের মুরুব্বীদের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত সংগঠনের গুরু দায়িত্ব আমাদের উপর অর্পিত হয়েছে।
১২. আমরা সবাই সবার জায়গায় থেকে দায়িত্বশীল, আমাদেরকে দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাস করা হবে। রাসূল ﷺ বলেন-
ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: ্র كُلُّكُمْ رَاعٍ، وَكُلُّكُمْ مَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتهِ
ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, প্রতিটি মানুষই দায়িত্বশীল, সুতরাং প্রত্যেকে অবশ্যই তার অধীনস্থদের দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। সংক্ষেপিত -[বুখারি ২৫৫৮, ৮৯৩, ২৪০৯, ২৫৫৪, ২৭৫১, ৫১৮৮, ৫২০০, ৭১৩৮, মুসলিম ১৮২৯, তিরমিযি ১৭০৫, আবু দাউদ ২৯২৮, আহমদ ৪৪৮১, ৫১৪৮, ৫৮৩৫, ৫৮৬৭, ৫৯৯০]
১৩. সুতরাং এ দায়িত্ব পালন সম্পর্কে আমাদেরকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে-
আল্লাহ এবং রাসূলের কিতাব থেকে শিক্ষা নিতে হবে কিতাবের (আরবী) ভাষায়।
শব্দে শব্দে কুরআন বুঝার চেষ্টা করতে হবে।
আমাদের নিজ, নিজের পরিবার ও অপর ভাইদের পরিবারকে গড়ে তুলতে হবে কুরআনের শিক্ষার আলোকে।
আমার অর্জিত জ্ঞান অনুযায়ী আমল করা এবং অন্যদের কাছে সে দাওয়াত পৌছানোর চেষ্টা করতে হবে।
আমাদের কথা ও কাজের মিল রাখা। একইভাবে অন্য ভাইদেরকে সংশোধন করার চেষ্টা করতে হবে।
সুরা সফ এর ২ ও ৩ নং আয়াতে এই তাগিদ দিয়েছেন এবং সতর্ক করেছেন।
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لِمَ تَقُولُونَ مَا لَا تَفْعَلُونَ
“হে মু’মিনগণ! তোমরা এমন কথা কেন বল যা নিজেরা করো না?”
كَبُرَ مَقْتًا عِندَ ٱللَّهِ أَن تَقُولُوا۟ مَا لَا تَفْعَلُونَ
“আল্লাহর কাছে এটা অত্যন্ত অপছন্দনীয় কাজ যে, তোমরা এমন কথা বলো যা করো না।”
আমার ইউনিট, ওয়ার্ড তথা দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকার মানুষদের সাথে সমব্যাথী হবেন, তাদের পাশে দাঁড়াবেন, সামর্থ্যানুযায়ী তাদের সহযোগিতা করবেন।
আমাদের ভাইদের ব্যাপারেও আন্তরিক এবং দরদী অভিভাবক এর মত ব্যবহার করবেন।
লেনদেনের স্বচ্ছতার ব্যাপারে আরো অনেক বেশি সতর্ক হতে হবে।
ঋনমুক্ত হবেন, ঋন মুক্ত থাকবেন।
সদস্য ভাইয়েরা সকল ইউনিট এবং কর্মীদের ভাগ করে নিয়ে ত্বত্তাবধান করবেন।
পরিবারের প্রতি হক আদায় করবেন। বাবা মায়ের হক আদায় এবং তাদের জন্য দোয়া করবেন,আল্লাহ যেভাবে শিখিয়ে দিয়েছেন-
সূরাঃ বনি ইসরাইল- ২৩ ও ২৪
وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوٓا۟ إِلَّآ إِيَّاهُ وَبِٱلْوَٰلِدَيْنِ إِحْسَٰنًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِندَكَ ٱلْكِبَرَ أَحَدُهُمَآ أَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُل لَّهُمَآ أُفٍّ وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوْلًا كَرِيمً
“তোমার রব ফায়সালা করে দিয়েছেনঃ (১) তোমরা কারোর ইবাদাত করো না, একমাত্র তাঁরই ইবাদাত করো। (২) পিতামাতার সাথে ভালো ব্যবহার করো। যদি তোমাদের কাছে তাদের কোনো একজন বা উভয় বৃদ্ধ অবস্থায় থাকে, তাহলে তাদেরকে “উহ্” পর্যন্তও বলো না এবং তাদেরকে ধমকের সুরে জবাব দিয়ো না বরং তাদের সাথে মর্যাদা সহকারে কথা বলো।”
وَٱخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ ٱلذُّلِّ مِنَ ٱلرَّحْمَةِ وَقُل رَّبِّ ٱرْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِى صَغِيرًا
“আর দয়া ও কোমলতা সহকারে তাদের সামনে বিনম্র থাকো এবং দোয়া করতে থাকো এই বলেঃ হে আমার প্রতিপালক! তাদের প্রতি দয়া করো, যেমন তারা দয়া, মায়া, মমতা সহকারে শৈশবে আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন।”
স্ত্রীর হক আদায় করবেন।
সন্তানদেরকে আদরের শাসনে গড়ে তুলবেন।
ইউনিটের যে সকল ভাই শপথ নিয়েছেন তারা শপথের হক আদায় করবেন এবং যারা এখনো নেননি তারা দ্রুত শপথের বলে বলিয়ান হয়ে দ্বীন কায়েমের পথে আরো বলিষ্ঠভাবে এগিয়ে আসবেন।
মানুষকে মানুষের দাসত্ব থেকে মুক্তির এই আন্দোলনে যথাযথ হক আদায় করে ভূমিকা পালন করবেন।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে কবুল করুন। আমীন॥
আল্লাহ হাফেজ। আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।