করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত ১৬ হাজার ৭৮২ মানুষ মারা গিয়েছে। করোনা টেস্টে পজিটিভ হয়েছে প্রায় চার লাখ মানুষ। প্রতিদিন এই পরিসংখ্যান হু হু করে বাড়ছে। ভয় ও আতঙ্কের বড় কারণ এই রোগ মারাত্নক ছোঁয়াচে। একজনের সংস্পর্শে অন্যজন আক্রান্ত হচ্ছে।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় পশ্চিম ও প্রাচ্যের দেশগুলো সারাদেশ লকডাউন করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে ব্যহত হচ্ছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে মানুষের জীবিকা। বেকারত্ব এবং ব্যবসায়িক মন্দা দেখা দিতে শুরু করেছে। সামনের দিনগুলো আরো ভয়ানক হতে যাচ্ছে। বিশ্বের পরাশক্তিরাই আগে ধরাশায়ী হয়েছে। আধুনিক জ্ঞান, বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনার শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। মানুষ আজ বড়ই অসহায়। মহান আল্লাহকে ডাকা ছাড়া কোনো উপায় অবশিষ্ট নেই।
‘মানুষকে যখন দুঃখ-দৈন্য স্পর্শ করে, তখন একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে ডাকতে থাকে। এরপর আল্লাহ দয়া করলে মানুষ ভুলে যায় বিপদে পড়ে এর আগে আল্লাহকে ডেকেছিল।’ (সুরা জুমার ৮)
বিপদ আপদ আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে
‘আল্লাহর অনুমোদন ছাড়া কখনো কোনো মুসিবত আসে না। যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ঈমান পোষণ করে আল্লাহ তার দিলকে হিদায়াত দান করেন। আল্লাহ সব কিছু জানেন।’ (সূরা তাগাবুন ১১)
‘পৃথিবীতে এবং তোমাদের নিজেদের ওপর যেসব মুসিবত আসে তার একটিও এমন নয় যে, সৃষ্টি করার পূর্বে একটি গ্রন্থে লিখে রাখিনি। এমনটি করা আল্লাহর জন্য খুবই সহজ কাজ।’ (সূরা হাদীদ ২২)
বিপদ কেনো আসে?
বিপদ আপদ মূলত মানুষের দুই হাতের কামাই। কৃতকর্মের প্রতিদান স্বরূপ মানুষ দুনিয়াতেই বিপর্যয়ের স্বাদ পায়।
‘স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে।’ (সূরা রূম ৪১)
দুনিয়াজুড়ে অশ্লীলতার সয়লাব। হারাম খাওয়া সীমা ছাড়িয়েছে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন চীনের উহান শহরে সাপ ও বাদুড় খাওয়ার কারণে এই ভাইরাস মানুষের মধ্যে ছড়িয়েছে। অপরাধীরা ন্যূনতম কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। শাসকরা দেশে দেশে জনপদের ওপর চালাচ্ছে নির্মম জুলুম। মানুষের অধিকার হরণ আজ যেনো উৎসবে পরিণত হয়েছে।
সকল বিপর্যয় যেমন কৃতকর্মের ফল একইসাথে বিশ্বাসীদের জন্য পরীক্ষা। মহান আল্লাহ বলেন,
‘আর নিশ্চয়ই আমরা ভীতি, অনাহার, প্রাণ ও সম্পদের ক্ষতির মাধ্যমে এবং উপার্জন ও আমদানী হ্রাস করে তোমাদের পরীক্ষা করবো। এ অবস্থায় যারা সবর করে এবং যখনই কোন বিপদ আসে বলে, ‘আমরা আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহর দিকে আমাদের ফিরে যেতে হবে’ তাদেরকে সুসংবাদ দিয়ে দাও। তাদের রবের পক্ষ থেকে তাদের ওপর বিপুল অনুগ্রহ বর্ষিত হবে, তাঁর রহমত তাদেরকে ছায়াদান করবে এবং এই ধরণের লোকরাই হয় সত্যানুসারী।’ (সূরা বাকারা ১৫৫-১৫৭)
বিপদ থেকে মুক্তির উপায়
করোনাভাইরাসের মতো অনেক বিপর্যয়ের কারণ ও প্রতিকার মানুষের অজানা। বড় অসহায় হয়ে পড়ে আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞান। কিন্তু আল্লাহর প্রতিশ্রুতি হচ্ছে তাঁর প্রতি আত্মসমর্পন করলে তিনি এমন উপায়ে বিপদ থেকে উদ্ধার করবেন যা সে কল্পনাও করতে পারে না।
‘যে ব্যক্তিই আল্লাহকে ভয় করে চলবে আল্লাহ তার জন্য কঠিন অবস্থা থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় সৃষ্টি করে দেবেন এবং এমন পন্থায় তাকে রিযিক দেবেন যা সে কল্পনাও করতে পারে না। যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর নির্ভর করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাঁর কাজ সম্পূর্ণ করে থাকেন। আল্লাহ প্রতিটি জিনিসের জন্য একটা মাত্রা ঠিক করে রেখেছেন।’ (সূরা আত তালাক ২,৩)
‘তাদেরকে তো এ ছাড়া আর কোন হুকুম দেয়া হয়নি যে, তারা নিজেদের দীনকে একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত করে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদাত করবে, নামায কায়েম করবে ও যাকাত দেবে, এটিই যথার্থ সত্য ও সঠিক দ্বীন।’ (সূরা বাইয়্যেনা ৫)
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারী থেকে বাঁচতে মহান আল্লাহর প্রতি রুজু হওয়ার বিকল্প নেই। নিজের নফস, সমাজ ও রাষ্ট্রের দাসত্ব থেকে বেরিয়ে এসে মহান আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা হওয়ার চেষ্টা করতে হবে।