বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহা. রেজাউল করিম বলেছেন, সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি না পেলেও পিঁয়াজের মূল্য আকাশচুম্বী হওয়ায় জনমনে রীতিমত আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। মূলত একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণায়নের উপর্যুপরি ব্যর্থতার কারণে পিঁয়াজের মূল্য এখন সকল সীমা অতিক্রম করেছে। অথচ সরকারের পক্ষে বলা হচ্ছে, ‘৭ শ টাকায় গোস্ত খেতে পারলে আড়াই টাকায় পিঁয়াজ খেতে পারবেনা কেন?’ যা সরকারের পক্ষে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সাথে নির্মম পরিহাস ছাড়া কিছু নয়। মূলত সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলেই দেশের মানুষের জন্য তাদের কোন দায়বদ্ধতা নেই। তাই কথাবর্তা বলার ব্যাপারে খুবই বেপরোয়া। তিনি অবিলম্বে কৃত্রিমভাবে মূল্য বৃদ্ধির জন্য দায়িদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে দ্রুত পিঁয়াজের মূল্য স্বাভাবিক করার সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান। অন্যথায় জনগণ ব্যর্থ সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমে আসবে।
তিনি আজ রাজধানীতে দেশে কৃত্রিমভাবে পিঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে এবং অবিলম্বে বাজার নিয়ন্ত্রণের দাবিতে এক বিক্ষোভ পরবর্তী সমাবেশে এসব কথা বলেন। বিক্ষোভ মিছিলটি উত্তর বাড্ডা কামিল মাদসারার সামনে থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরীর সহকারি সেক্রেটারি লস্কর মোহাম্মদ তসলিম ও মাহফুজুর রহমান, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন ও নাজিম উদ্দীন মোল্লা, ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য ডা. ফখরুদ্দীন মানিক, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ঢাকা মহানগরী উত্তরের সভাপতি মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ, ঢাকা মহানগরী উত্তরের মজলিশে শুরা সদস্য মু. আতাউর রহমান সরকার, ডা. শফিউর রহমান, নাসির উদ্দীন, ইব্রাহিম খলিল ও আব্দুল আউয়াল আজম, শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত, শিবিরের ঢাকা মহানগরী উত্তরের সভাপতি আজিজুল ইসলাম সজীব ও প্রাইভেট সভাপতি নাহিদ প্রমুখ।
ড. এম আর করিম বলেন, মূলত সরকারের উদাসীনতা ও বণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতার কারণেই পিঁয়াজের মূল্য ইতোমধ্যেই বিশ্ব রেকর্ড করে ফেলেছে। অভিজ্ঞমহল মূল্যবৃদ্ধির জন্য সরকার সংশ্লিষ্টতাকেও দায়ি করছেন। গত কয়েক দিন আগে বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ১০০ টাকার কম কেজি দরে পিঁয়াজ পাওয়ার সম্ভাবনা আপাতত নেই। পিঁয়াজের চালান দেশে এসে পৌঁছলে পিঁয়াজের দাম কমে আসবে। কিন্তু পিঁয়াজের বাজারে মন্ত্রীর কথার কোন প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়নি। আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি, বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি পিঁয়াজ ২২০ টাকা থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রাকে পর্যুদস্ত করে তুলেছে। তাই এই মূল্যবৃদ্ধির দায় সরকার কোন ভাবেই এড়াতে পারে না।
তিনি বলেন, সরকার দেশ পরিচালনায় সার্বিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তারা জনগণকে সুশাসন উপহার দিতে পারেনি। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও সকল সময়ের চেয়ে খারাপ পর্যায়ে। সরকারি দলের ছাত্রসংগঠন দেশের শিক্ষাঙ্গনগুলোতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। মাত্র কিছুদিন আগে বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা পিটিয়ে হত্যা করেছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য। সর্বপরি পিঁয়াজের বাজার কারা নিয়ন্ত্রণ করছে-এ প্রশ্ন এখন সাধারণ মানুষের মুখে মুখে। পিঁয়াজের মুল্য বৃদ্ধিতে কি অসাধু ব্যবসায়ীরা, না সরকার দলীয় লোকজন জড়িত-সে প্রশ্নের কোন সদুত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে পরিস্থিতির উন্নতির পরিবর্তে অবনতিই হচ্ছে। তিনি পিঁয়াজের মূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রীর অবিলম্বে পদত্যাগ দাবি করেন।
তিনি আরও বলেন, এখন খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৭৫ টাকা। পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা। পাইকারি বাজারে এক দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকা। এ কারণে খুচরা বিক্রেতারাও বাড়তি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে কপাল খুলেছে আড়তদার ও মজুদদারদের। পাইকারিতেই প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করে তারা লাভ করেন ৮৩ টাকা। মূলত বাণিজ্য মন্ত্রীর দায়িত্বহীন বক্তব্যই পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধিকে আরো উসকে দিয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের রেশ কাটতে না কাটতেই শিল্পমন্ত্রী জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে বলেন, পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক বলে জানিয়েছেন। যা সরকার ও সরকার সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতারই পরিচয় বহন করে। তিনি সরকার দায়দায়িত্বহীন কথা বলা বন্ধ করে পিঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানান।