বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেছেন, রাসূল (সা.) বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত হিসেবে দুনিয়াতে প্রেরিত হয়েছিলেন। তার অন্যন্য সাধারণ চরিত্র মাধুর্য্য সম্পর্কে সুরা কলমের ৪নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী’। সুরা আম্বিয়ার ১০৭নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্বজগতের জন্য রহমতরূপে প্রেরণ করেছি।’ মূলত আল্লাহ তায়ালার নির্দেশিত পথ ও রাসূল (সা.) এর অনুসৃত আদর্শ থেকে বিচ্যুত হওয়ার কারণেই সমাজ-রাষ্ট্রে অশান্তি ও অবক্ষয়ের জয়জয়কার চলছে। তাই দুনিয়ায় শান্তি ও আখেরাতে মুক্তির জন্য একমাত্র আল্লাহর দাসত্ব ও রাসূল (সা.) এর প্রদর্শিত আদর্শকে সর্বান্তকরণে গ্রহণ করতে হবে। তিনি বিশ্বনবী (সা.) এর আদর্শ অনুসরণে সমাজ পরিবর্তনে আপসহীন ভূমিকা পালন করতে সকলের প্রতি আহবান জানান।
তিনি আজ রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত সীরাতুন্নবী (সা.) বিষয়ক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহা. রেজাউল করিম, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি লস্কর মোহাম্মদ তসলিম ও মাহফুজুর রহমান, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন, ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, আধ্যাপক আব্দুল করিম ও নাজিম উদ্দীন মোল্লা, ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য হেমায়েত হোসাইন, ডা. ফখরুদ্দীন মানিক ও মোস্তাফিজুর রহমান প্রমূখ।
সেলিম উদ্দিন বলেন, গোটা বিশে^ই জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে উৎকর্ষতা এসেছে। মানুষের জীবনাচারণ, বোধ-বিশ্বাস, রুচীবোধ, কৃষ্টি-সংস্কৃতিতে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। কিন্তু অতীব পরিতাপের বিষয় যে, মানুষের বহিরাভরণ জৌলুসপূর্ণ ও দৃষ্টিনন্দন হলেও বৈশ্বিক পর্যায়ে শান্তির প্রত্যাশা বরাবরই অধরায় থেকে গেছে। মূলত ইসলামী আদর্শের বিচ্যুতিই এই অশান্তি ও অবক্ষয়ের মূল কারণ। মানব রচিত মতবাদের কারণেই গোটা বিশ্বই এখন অশান্ত হয়ে উঠেছে। রাসূল (সা.) ও খোলাফায়ে রাশেদা অহীর বিধান অনুসরণের মাধ্যমে প্রায় অর্ধেক পৃথিবীতে শান্তির সুবাতাস বইয়ে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে মুসলিম শাসকদের মধ্যে যারা আল্লাহর নির্দেশিত পথ ও রাসূল (সা.) এর আদর্শ অনুসরণে শাসনকার্য পরিচালনার চেষ্টা করেছিলেন তারাও সমাজ, রাষ্ট্র ও বৈশ্বিক পর্যায়ে শান্তি, প্রগতি, উন্নয়ন, অগ্রগতি সর্বোপরি ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় সফল হয়েছিলেন। দার্শনিক জর্জ বার্ণাডশ এর ভাষায়, ‘আমার বিশ্বাস নবী মুহাম্মদের মত কোন ব্যক্তি যদি বর্তমান বিশ্বের একনায়কের পদে আসীন হতেন, তাহলে তিনিই বর্তমান বিশ্বের সমস্যাবলীর এমন সমাধান দিতে পারতেন, যার ফলে সমস্ত বিশ্বে কাঙ্খিত শান্তি ও সুখ নেমে আসত।’ মূলত মানব রচিত মতবাদের মাধ্যমে কোন ভাবেই বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তাই বর্তমান বিশ্বকে শান্তির নীড় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হলে অহীর বিধান অনুসরণের কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস সংবিধানের মূলনীতি। সংবিধানের শিরোনামায় পবিত্র কুরআনের আয়াত ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ স্থান পেয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলামের অনুসরণ ও অনুশাসন প্রতিষ্ঠিত না থাকায় স্বাধীনতার প্রায় ৫ দশক পরও ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন আজও অপুরণীয় রয়ে গেছে। একশ্রেণির রাজনীতিকদের আদর্শিক দেউলিয়াত্বের কারণেই দেশে ভোট ডাকাতির মত ন্যাক্কারজনক কাজ প্রায় প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। তাই দেশকে কল্যাণ রাষ্ট্র ও ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হলে বিশ্বনবী (সা.) এর আদর্শ অনুসরণের কোন বিকল্প নেই।
তিনি আরও বলেন, ইসলাম আল্লাহর পক্ষ থেকে অদ্বিতীয় ও পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। কালামে পাকে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম’। (সুরা আল ইমরাম-১৯) অনত্র বলা হয়েছে, ‘যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন তালাশ করে, কখনোই তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতিগ্রস্থ হবে’। (সুরা আল ইমরান-৮৫) মূলত আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ করার মিশন দিয়েই দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। কালামে হাকীমের ঘোষণায় বলা হয়েছে, ‘তোমরাই সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যাণের জন্য তোমাদের উদ্ভব হয়েছে। সুতরাং তোমরা সৎকাজের আদেশ দেবে এবং অন্যায় কাজে বাধা দেবে আর আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। ( সুরা আল ইমরান-১১০) তাই বিশ^মানবতার ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির জন্য আমাদের দাওয়াতি কার্যক্রমের সম্প্রসারণ ঘটাতে হবে।
মহানগরী আমীর বলেন, কালামে হাকীমে জামায়াতবদ্ধ জীবনের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। হাদিসে কুদসীতে বলা হয়েছে, ‘হারেস আল আশয়ারী (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, আমি তোমাদের পাঁচটি কাজের নির্দেশ দিচ্ছি, আল্লাহ আমাকে এগুলোর নির্দেশ দিয়েছেন। ১. জামায়াত বা দলবদ্ধ হবে, ২. নেতার আদেশ মন দিয়ে শুনবে, ৩. তার আদেশ মেনে চলবে, ৪. হিযরত করবে অথবা আল্লাহর অপছন্দীয় কাজ বর্জন করবে এবং ৫. আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। যে ব্যক্তি জামায়াত বা সংগঠন ত্যাগ করে এক বিঘত পরিমাণ দূরে সরে গেল সে যেন নিজেদের কাঁধ থেকে ইসলামের বা বাধন খুলে ফেললো, যতক্ষণ না সে সংগঠনে ফিরে আসবে। আর যে ব্যক্তি জাহেলিয়াতের নিয়ম-নীতির দিকে লোকদেরকে আহবান জানাবে সে জাহান্নামের জ্বালানী হবে, যদিও সে রোজা রাখে, নামাজ পড়ে এবং নিজেকে মুসলমান বলে দাবি করে। (আহমদ, তিরমিজি) তাই আমাদেরকে সকল অবস্থায় সংঘবদ্ধ থেকে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশিত ও রাসূল (সা.) অনুসৃত মূলনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে হবে।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক রাজনীতিতে ইসলামী আন্দোলন একটি অপ্রতিরোধ্য শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ফলে বেড়েছে জুলুম-নির্যাতনও। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি তা থেকে মোটেই আলাদা নয়। তাই ইসলামী আন্দোলনের এই ক্রান্তিকাল মোকাবেলা করে আল্লাহর দ্বীনকে সমুন্নত করতে হলে মুসলমানদের মধ্যে বৃহত্তর ঐক্যের কোন বিকল্প নেই। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সুরা আল ইমরানের ১০৩ নং আয়াতে বলেছেন ‘তোমরা সকলে আল্লাহর রশিকে শক্তভাবে ধারণ করো। পরষ্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’। বস্তুত, যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সেই মহান আল্লাহর একত্ববাদের প্রতি অবিচল থেকেই ইসলামী আন্দোলনকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সুরা হা মীম সাজদাহর ৩০ নং আয়াতে মোমেনদের সুসংবাদ দিয়ে বলেছেন, ‘যারা বলে আমাদের রব আল্লাহ এবং সে কথার ওপর অবিচল থাকে। তাদের নিকট অবতীর্ণ হয় ফেরেস্তা এবং বলে তোমরা ভীত ও চিন্তিত হয়ো না এবং তোমাদের প্রদত্ত জান্নাতের যে ওয়াদা রয়েছে তার জন্য আনন্দিত হও’। তিনি ঈমানের বলে বলীয়ান হয়ে ইসলামী আন্দোলনের বর্তমান ক্রান্তিকাল মোকাবেলায় সকলে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার আহবান জানান।