বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি লস্কর মোহাম্মদ তসলিম বলেছেন, ভারতীয় সুপ্রীম কোর্ট অযোধ্যায় ধ্বংসকৃত বাবরী মসজিদের স্থানে রাম মন্দির নির্মাণের যে নির্দেশ দিয়েছে সে রায়ে ভারতীয় সংবিধান, আইন ও ঐতিহাসিক সত্যতার বিষয়টি বিবেচনায় আনা হয়নি বরং রায়ে উগ্রবাদীদের প্রতি সর্বোচ্চ আদালতের অনুরাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। ঘোষিত রায়ে ভারতীয় সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য ক্ষুন্ন হয়েছে। তাই আদালতের সুনাম, ঐতিহ্য, ন্যায়বিচার, ভারতীয় সংবিধানের মর্যাদা ও মুসলমানদের ধর্মীয় অধিকার রক্ষায় এই রায় পুনর্বিবেচনা করতে হবে। অন্যথায় ভারতের পক্ষে ইতিহাসের কলঙ্কমোচন করা সম্ভব হবে না।
তিনি মঙ্গলবার রাজধানীতে ভারতীয় সুপ্রীম কোর্ট ঐতিহাসিক বাবরী মসজিদের স্থলে কথিত রাম মন্দির নির্মাণের আদেশ দিয়ে রায় ঘোষণার প্রতিবাদে ও বিতর্কিত রায় পূনর্বিবেচনার দাবিতে এক বিক্ষোভ মিছিলের পরবর্তী সমাবেশে এসব কথা বলেন। বিক্ষোভ মিছিলটি মিরপুর-১ নম্বর থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে টেকনিক্যালে এসে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন ও নাজিম উদ্দীন মোল্লা, ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য ডা. ফখরুদ্দীন মানিক, ঢাকা মহানগরী মজিলশে শুরা সদস্য নাসির উদ্দীন, মু. আতাউর রহমান সরকার ও সাইফুল ইসলাম, শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত, কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক সালাহউদ্দীন আইয়ুবী, ঢাকা মহানগরী পশ্চিমের সভাপতি যোবায়ের হোসেন রাজন ও প্রাইভেট বিশ^বিদ্যালয় সভাপতি আবু নাহিদ প্রমূখ।
লস্কর তসলিম বলেন, ঐতিহাসিক বাবরী মসজিদ ১৫২৮ খ্রীষ্টাব্দে ভারতে মুঘল সম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট জহিরুদ্দীন মোহাম্মদ বাবরের আদেশে নির্মিত হয় এবং তাঁর নাম অনুসারে নামাঙ্কিতও করা হয়। ১৯৯২ সালে একটি রাজনৈতিক সমাবেশের উদ্যোক্তারা, ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অনুযায়ী মসজিদ ক্ষতিগ্রস্থ হবে না এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় একটি রাজনৈতিক সমাবেশ শুরু করে। কিন্তু উগ্রবাদী হিন্দুরা সে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। ফলে সে সমাবেশ দাঙ্গার রূপ নেয় এবং ঐতিহাসিক এই মসজিদটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা হয়। ফলস্বরূপ ওই একই সালে ভারতের প্রধান শহরগুলোতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত হয়। ফলে মুম্বাই ও দিল্লী শহরে কয়েক মুসলমানের প্রাণহানীর ঘটনা ঘটে। তাই ভারত সরকার এই কলঙ্কের দায় কোন ভাবেই এড়াতে পারে না।
তিনি বলেন, ভারতে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ‘বাবরী মসজিদের স্থানে পূর্বে মন্দির ছিল’ মর্মে যে দাবি করছে তা সম্পূর্ণ অসত্য, বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর ও ভিত্তিহীন। বিরোধপূর্ণ স্থানে খনন কাজ করেও মন্দিরের কোন চিহ্ন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ববিদরাও ঐ স্থানে মন্দিরের কোন নিদর্শন আবিষ্কার করতে পারেনি। সুপ্রিম কোর্টও মেনে নিয়েছে যে, পুরাতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণের রিপোর্টে কোনোভাবেই প্রমাণ হচ্ছে না যে, একটা মন্দিরকে ভেঙ্গে ওখানে মসজিদ তৈরি করা হয়েছিল। এ থেকেই প্রমাণিত হচ্ছে যে, বাবরী মসজিদের স্থানে মন্দির নির্মাণের দাবি সম্পূর্ণ অন্যায় ও অযৌক্তিক এবং ন্যায়নীতির পরিপন্থী। ভারতের একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি এবং কোলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতিসহ একাধিক বিচারপতি ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত তাদের বক্তব্যে বলেছেন যে, ‘ইতিহাস পুননির্মাণ করা আদালতের কাজ নয়। আদালত সিদ্ধান্তে পৌঁছায় অকাট্য প্রমাণ এবং প্রামাণ্য নথিপত্রের ভিত্তিতে। বাবরী মসজিদ যেখানে ছিল, সেই জমিতে মন্দির তৈরির নির্দেশ সুপ্রিম কোর্ট কোনো অকাট্য প্রমাণ ও প্রামাণ্য নথির ভিত্তিতে দেয়নি। এই রায় আইন ও সংবিধানের ভিত্তিতে দেয়া হয়নি।’ এই রায় আবেগ তাড়িত ও ভারতীয় সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।