প্রথম কথা
২৮ অক্টোবর ২০০৬, ইতিহাসের নিয়মিত এবং পরিচিত অধ্যায়। বিস্মিত কিংবা উদ্বিগ্ন অথবা হতাশায় নিমজ্জিত হওয়ার মতো কোনো ঘটনাও নয় বরং নিজেদের যাচাই-বাছাই করার মতো গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ছিল এই দিনটি। এ রকম একটি দিন যা আমাদের জন্য প্রথমও নয় কিংবা শেষও নয়, এসেছিলো, এসেছে, আসবে যা বলা যায় নিঃসন্দেহ এক ঐতিহাসিক বাস্তবতা। আমাদের শুধু বিবেচনায় নিতে হবে যে এ দিনটিকে আমরা কিভাবে গ্রহণ করেছি।
আদর্শিক শক্তির বিকাশ
সত্য প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত একটি সংগঠনের জন্য এ এক অনিবার্য অনুষদ। পার্থিব প্রস্তুতির চূড়ান্ত ধাপে উত্তীর্র্ণ হয়ে থাকলেও নৈতিক অবস্থানের প্রশ্নে ন্যূনতম দুর্বলতাও গ্রহণযোগ্য হবে না তা প্রমাণ করতে ২৮ অক্টোবরের মতো দিনগুলোর কী বিকল্প আছে তা আমার মনে পড়ে না। ২৮ বছরের শিক্ষা ২৮ অক্টোবরের মতো একটি দিনের অভিজ্ঞতার কাছে ম্লান হতে পারে, আবার ২৮ অক্টোবরের মতো একটি দিনের প্রত্যাশিত অভিজ্ঞতা ২৮ বছরের অর্জিত শিক্ষাকেও হার মানিয়ে দিতে পারে। এমন দিনগুলো কেউ প্রত্যাশা করে না কিন্তু এরকম দিনগুলোর মুখোমুখি হলে তা সাদরে গ্রহণ করতে সামান্যতমও দ্বিধা করে না আদর্শের পতাকাবাহীরা। এমন দিনের পরিচয় তো পবিত্র কুরআনে একাধিক জায়গায় মুমিনদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে, শুধু স্মরণ করানো নয় বরং এর মুখোমুখি হওয়া বাধ্যতামূলকও বটে। এমনকি এ ধরনের দিনকে উপেক্ষা করে অবজ্ঞা করলে তার পরিণতি হতো ভয়াবহ তারও বিশদ বিবরণ সহজ সরলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
নিজেকে যাচাই করার গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফর্ম
পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র পরিবর্তনে ব্যক্তি পরিবর্তনের যে বিকল্প নেই তা আমাদের সবারই জানা। সেই ব্যক্তি তার নিজের কতোখানি পরিবর্তন সাধন করতে পেরেছে তা নির্ধারণের এরকম এক একটি ২৮ অক্টোবরের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। ব্যক্তি তার প্রয়োজন এবং সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে ওঠে বৃহৎ পরিমণ্ডলে নিজেকে উপস্থাপন করে কতোটা সফল প্রমাণ করতে সক্ষম তা বিবেচনার এইতো পথ। একজন মানুষ কতোটা দুনিয়ামুখী অথবা একজন মানুষ কতোটা আল্লাহমুখী তার জন্য জীবনের কোনো না কোনো পর্যায় তো ২৮ অক্টোবরের মতো দিনের সাথে তার সাক্ষাৎ হওয়াটা অনিবার্য। কেবল এমনই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি আনন্দ অনুভব করবে। কুরআনুল কারিমে ইসলাম এবং ইসলামী আন্দোলনের যে পরিচয় পেশ করা হয়েছে এটিই সেই পথ; যে পথ নবী-রাসূল (সা)গণ তাদের জীবনে অতিক্রম করেছেন। আমরা যারা সেই আন্দোলনের পথের পথিক তাদের জীবনেও সেই পথের সাক্ষাৎ পাওয়াটা তো চরম সৌভাগ্যেরও বটে।
মুমিনের কোনো পরাজয় নেই
মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একজন মুমিনের সমস্ত চেষ্টা-প্রচেষ্টাই এক একটি বিজয়ের অধ্যায় রচনা করে। সেখানে পরাজয়ের ছিটেফোঁটা তো দূরে থাক ন্যূনতম ব্যর্থতারও অবকাশ থাকে না। তাই আল্লাহকে বিশ্বাসী একজন মানুষ তার জীবনে পরাজয় বলতে কোনো বিষয়ের কল্পনাও করতে না পারার কথা, আসলে তা অসম্ভব। আমরা বিজয় এখনো দেখিনি ঠিকই তবে এটাও সত্য যে আমরা কখনো পরাজয়ও মানিনি। অর্থপূর্ণ বিজয় তো সেটাই যেখানে পরাজয় না মানার মানসিকতা। ২৮ অক্টোবরে খুবই কাছ থেকে আমরা পরাজয় না মানার আল্লাহতে বিশ্বাসী একদল মানুষের সাক্ষাৎ পেয়েছি যে মানুষগুলো আল্লাহকে ভয় করতো বলে নরপিশাচরূপী একদল লগি-বৈঠাধারী হায়েনারা তাদের সমস্ত আগ্নেয়াস্ত্র দিয়েও পরাভূত তো করতেই পারেনি বরং ভয়ে কম্পমান থেকেছে লড়াইয়ের শেষ পর্যন্ত। যে ভয় এখনো ওদের অন্তরে বিদ্যমান। ওরা মুখের ফুৎকারে আমাদের শেষ করে দিতে চায় অথচ মহান মাবুদের সিদ্ধান্ত তিনি তার দ্বীনকে সমস্ত মানবরচিত মতবাদের ওপর বিজয়ী করবেনই। ২৮ অক্টোবর আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে সেদিন কেঁপেছিলো ঢাকার পল্টনের রাজপথ আর আজ এখনকার ২৮ অক্টোবরগুলোতো কাঁপে জালিম শাহির ফাঁসির মঞ্চ। আর এক ২৮ অক্টোবর আমাদের সামনে অপেক্ষমাণ যেদিন স্বতঃস্ফূর্ত আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে প্রকম্পিত হবে ৫৬ হাজার বর্গমাইল। রাত যখন গভীর হয়েছে ফজরের আজানের জন্য মুয়াজ্জিনও তো প্রস্তুত। আর আমরা সে ২৮ অক্টোবরেরই গর্বিত পথিক, আমাদের বিজয় অবশ্যম্ভাবী।
মৃত লাশে নৃত্য
তখন এবং আজ একজন সুস্থ মানুষ আরেক জন সুস্থ মানুষকে সাপের মতো পিটিয়ে মানুষ হত্যা করার দৃৃশ্য ২৮ অক্টোবর ২০০৬-এর আগে কেউ কি কখনো দেখেছে কিংবা কল্পনা করেছে, তা ভাবাও অসম্ভব। মৃত লাশের ওপর লগি-বৈঠাধারীদের ঘৃণ্য নৃত্য সেদিন শুরু হয়েছিলো যা এখন ফিলিস্তিনে চলমান। তারই ধারাবাহিকতা দৃশ্যমান এখন আমাদেরই মিয়ানমারের মুসলিম ভাই-বোনদের ওপর। এদের দেশ ভিন্ন দল কিংবা পরিচয় আলাদা কিন্তু নরপিশাচরূপটা হায়েনাতুল্য মানসিকতায় একই। এরা অমানুষ, এরা মানবতার দুশমন। এরা প্রকৃতপক্ষে আজ কিংবা কাল যুদ্ধাপরাধী কিংবা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত হবেই। নির্মম করুণ পরিণতিও উপেক্ষা করতে পারবে না তারা। ইতিহাসের অমোঘ বিধানের পরিপ্রেক্ষিতেই এখন শুধু সেই করুণ পরিণতি বিশ্ববাসীর অবলোকন করার পালা।
খুবই বাস্তব কারণে ২৮ অক্টোবর ২০০৬ মুছে ফেলা যাবে না। লগি-বৈঠা হাতে সমবেত হওয়ার নির্দেশদাতারা তার বাস্তবায়নকারী অমানুষরূপী ভাড়াটে খুনিরা খুব সহজে পার পেয়ে যাবে আইনের মারপ্যাঁচে- বোধ হয় তারা নিজেরাও মনে করে না। আর একই কায়দায় ক্ষমতা ধরে রেখে সেই করুণ পরিণতি থেকে বাঁচার শেষ চেষ্টার নাটকের সর্বশেষ দৃশ্যটুকু আমরা প্রত্যক্ষ করছি। হয়তো এই অশুভ শক্তির নাটকের দৃশ্য যেখানে শেষ সেখান থেকেই ২০০৬-এর ২৮ অক্টোবরের আরেক এক সোনালি অধ্যায়ের শুরু হবেই ইনশাআল্লাহ।