খেলাফত ও রাজতন্ত্র সুস্পষ্টভাবে দুটি জিনিস। হযরত আবু বকর, হযরত উমর, হযরত উসমান এবং হযরত আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) ছিলেন খুলাফায়ে রাশেদীন এটা মুসলিম উম্মাহর আকীদা বিশ্বাসে পরিণত হয়েছে। হযরত মুয়াবিয়া (রা), রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। তার এবং তাঁর বংশধরদের মাধ্যমে রাজতন্ত্রে এমনসব নীতিমালাও চালু হয়, যা ছিলাে খুলাফায়ে রাশেদীনের নীতিমালার সুস্পষ্ট বিরােধী। ফলে হযরত মুয়াবিয়া (রা)-কে খুলাফায়ে রাশেদীনের অন্তরভুক্ত গণ্য করা হয় না।
কিন্তু কিছু লােক হযরত আলী (রা)-এর প্রতি বিদ্বেষের কারণে, কিছু লােক হযরত মুয়াবিয়া (রা)-এর প্রতি অন্ধ ভক্তির কারণে আর কিছু লােক অজ্ঞতার কারণে খেলাফত ও রাজতন্ত্রের সুস্পষ্ট পার্থক্য মুছে ফেলতে চান। রাজতন্ত্র কর্তৃক প্রবর্তিত বহু অন্যায় নীতি অপব্যাখ্যা দিয়ে তারা সমর্থন করতে চান। | মাওলানা সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী (র) তার খিলাফত ও রাজতন্ত্র গ্রন্থে এ দুটোর সুস্পষ্ট পার্থক্য তুলে ধরেন। ইসলামী খিলাফত কিভাবে রাজতন্ত্রে রূপান্তরিত হয়, সে ইতিহাস তুলে ধরেন। এ ক্ষেত্রে কার কি ভূমিকা ছিলাে—সে কথাও তিনি তুলে ধরেন—অকাট্য যুক্তি প্রমাণ দিয়ে। এ যাচাই বিশ্লেষণের কাজ তিনিই প্রথম করেননি, তার পূর্বেও বহু ইসলামী মণীষী এ কাজ করে গেছেন।
কিন্তু ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা আন্দোলনের নেতা, স্বপ্ন দ্রষ্টা ও রূপকার মাওলানা মওদূদী (র)-এর ‘খেলাফত ও রাজতন্ত্র’ গ্রন্থ প্রকাশ হতেই তিনি সাহাবীর বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন বলে আইউবী ও কংগ্রেসী খেলাফতের পক্ষের হুজুরানে কিরাম আদাজল খেয়ে তার বিরুদ্ধে যবানী এবং কলমী জিহাদ শুরু করেন। তার বিরােধিতায় তারা আদল, ন্যায়-নীতি ও সুবিচারের কোনাে প্রকার তােয়াক্কা করেননি। নিজেদের অন্ধ বিশ্বাসে আঘাত লাগাটাকেই তারা যথেষ্ট মনে করেছেন।
তালে স্বৈর শাসক আইয়ুব খানের খিলাফতকে (!) শানদার করার কাজে নিয়ােজিত মুফতী মুহাম্মদ শফী (র)-এর পুত্র তকী উসমানী সাহেব এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি অনেকটা অন্ধতা, বিদ্বেষ ও একপেশে ভাবধারা নিয়ে মাওলানা মওদূদী (র)-এর খিলাফত ও রাজতন্ত্র গ্রন্থের বিরুদ্ধে আইয়ুব খানের আল বালাগ পত্রিকায় লিখতে থাকেন। পরে সেসব গ্রন্থাকারে প্রকাশ হয়।
মাওলানা মওদূদী (র)-এর ব্যক্তিগত সহকারী মালিক গােলাম আলী (পরে পাকিস্তান শরীয়া কোর্টের জাস্টিস) মাসিক তরজমানুল কুরআন পত্রিকায় তকী উসমানী সাহেবের বক্তব্যের দলিল-আদিল্লা ভিত্তিক পর্যালােচনা প্রকাশ করতে থাকেন। তকী উসমানী সাহেব তার কিছু কিছু বক্তব্যের সমালােচনা মূলক জবাব পুনরায় আল বালাগ পত্রিকায় প্রকাশ করেন। মালিক গােলাম আলী সাহেব সেগুলােরও অকাট্য তথ্য ও তত্ত্বভিত্তিক জবাব প্রদান করেন।
অবশেষে মালিক গােলাম আলী সাহেবের এসব জবাবী পর্যালােচনাই “খিলাফত ও মুলুকিয়াত পর এ’তেরাজাত কা তাজকিয়া’ নামে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। গ্রন্থটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দলিল।
যারা খিলাফত ও মুলুকিয়াত বিষয়ে যুক্তিসিদ্ধ জ্ঞানার্জন করতে চান, যারা রাজতন্ত্র প্রবর্তকদের ভ্রান্তি অবহিত হতে চান, যারা মাওলানা মওদূদী (র)-এর। খেলাফত ও রাজতন্ত্র গ্রন্থের উপর প্রমাণিক ধারণা অর্জন করতে চান, সর্বোপরি যারা বিভ্রান্তির জবাব দেয়ার যােগ্যতা অর্জন করতে চান, তাদের জন্যে এ গ্রন্থটি একটি অকাট্য দালিলিক হাতিয়ারের কাজ দেবে।
বইটি পড়তে ও ডাউনলোড করতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন।
খেলাফত ও রাজতন্ত্র গ্রন্থের ওপর অভিযোগের পর্যালোচনা