বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেছেন, ইসলামী আন্দোলনের ওপর জুলুম-নির্যাতন ইতিহাসের ধারাবাহিকতা মাত্র। যুগে যুগে নবী-রাসুল (সা.)গণ পর্বত প্রমাণ বাধা-প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করেই দ্বীনি আন্দোলনের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়েছেন। তিনি দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যেকোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকার জন্য ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের প্রতি আহবান জানান।
তিনি আজ রাজধানীতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের গুলশান জোন আয়োজিত এক ইউনিট দায়িত্বশীল শিক্ষা শিবিরে আলোচনাকালে এসব কথা বলেন। শিক্ষা শিবিরে আরও আলোচনা পেশ করেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর আব্দুর রহমান মুসা, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য নাজিম উদ্দীন মোল্লা ও বনানী থানা আমীর সাইফুল ইসলাম প্রমূখ।
সেলিম উদ্দিন বলেন, ইসলামী আন্দোলন এখন বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদী অপশক্তি এবং কায়েমী স্বার্থবাদীরা দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের জন্য এখন প্রধান প্রতিবন্ধক। অতীতে যারাই মানুষের কাছে দ্বীনে হকের দাওয়াত দিয়েছেন অবিশ্বাসী ও আল্লাহদ্রোহী শক্তি তাদের উপরই জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছে। এমনকি শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.)ও অবর্ণনীয় জুলুম-নির্যাতন মোকাবেলা করে দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য যে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছেন। দ্বীন প্রচারের কারণেই তাকে তার পরিবার-পরিজন সহ সাহাবীদের দীর্ঘদিন ‘শিয়াবে আবি তালিবে’ সম্পূর্ণ অমানবিকভাবে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। এমনকি তাদের খাদ্যদ্রব্য ও পানীয় সরবরাহও বন্ধ করে দেয়া হয়। ক্ষুধার জ্বালা মেটানোর জন্য তারা বাবলা গাছের ছাল ও পাতা খেতেও বাধ্য হয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত তাকে জন্মভূমির মায়া ত্যাগ করে মক্কা থেকে মদীনায় হিযরত করতে হয়েছে। তাই দ্বীনের বিজয় নিশ্চিত করতে সমস্যাসঙ্কুল পথ অতিক্রম করেই ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। অন্যথায় দ্বীন বিজয়ের স্বপ্ন অধরায় থেকে যাবে।
তিনি বলেন, নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও চরিত্র মাধুর্য্য ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের মূল পুঁজি। তাই ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের অবশ্যই আত্মগঠনে মনোনিবেশ করতে হবে। নৈতিকতা ও মূল্যবোধ জাগ্রত করার জন্য বেশি বেশি কুরআন, হাদিস ও ইসলামী সাহিত্য অধ্যয়ন করা জরুরি। ইসলামী আদর্শ ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে নিজ নিজ পরিবার ও সমাজ গঠনে আত্মনিয়োগ করতে হবে। ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা মোকাবেলায় আমাদেরকে নৈতিকতা, আদর্শ ও চরিত্র মাধুর্য দিয়ে এবং যুক্তিপূর্ণ ভাষায় সুন্দরভাবে জনগণের মাঝে উপস্থাপন করতে হবে। এই জন্য সকল ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের সামাজিক ও জনকল্যাণমূলক কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে। প্রতিটি ঘরে ঘরে ইসলামের দাওয়াত সম্প্রসারণের ব্যবস্থা করতে হবে। একই সাথে বাড়াতে হবে নিজেদের মানও। তাহলেই আমরা আমাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবো-ইনশা আল্লাহ।
তিনি আরও বলেন, মূলত ইসলামী আন্দোলনের মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে ইখলাস ও দ্বীনের প্রতি অগাধ ভালবাসা। আল্লাহর নির্দেশিত পথ ও রাসুল (সা.) এর অনুসৃত নীতির প্রতি অবিচলতায় হচ্ছে আমাদের বিজয়ের মূল চালিকা শক্তি। আর নিজ আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে প্রজ্ঞা ও দুরদর্শিতার সাথে ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে বেগবান করতে হবে। তিনি নবী-রাসুল (সা.) অনুসৃত নীতি ও প্রশিক্ষণের বাস্তব প্রয়োগের মাধ্যমে দ্বীনকে বিজয়ী আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে ময়দানে অকুতোভয় সৈনিকের ন্যায় কাজ করতে সকলের প্রতি আহবান জানান।