বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেছেন, ইসলামী আন্দোলনের পথচলা কখনোই বাধাহীন ছিল না বরং সকল বাধা-প্রতিবন্ধকতা ও জুলুম-নির্যাতন মোকাবেলা করেই ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা দ্বীন প্রতিষ্ঠায় আপোষহীন থেকেছেন। তাদের এই আত্মত্যাগ ও কোরবানীর কারণেই আগামী দিনে শান্তিময় এক নতুন বিশ্বের হাতছানি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাই কোন অবস্থায় আমাদের মনোবল হারানোর কোন সুযোগ নেই। তিনি দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যেকোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকার জন্য ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের প্রতি আহবান জানান।
তিনি আজ রাজধানীর উত্তরায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের উত্তরা জোন আয়োজিত এক কর্মী শিক্ষা শিবিরে আলোচনাকালে এসব কথা বলেন। শিক্ষা শিবিরে আরও আলোচনা পেশ করেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহা. রেজাউল করিম, ঢাকা মহানগরীর মজলিশে শুরা সদস্য এইচ এম আতিকুর রহমান, জামাল উদ্দীন, এ্যাডভোকেট ইব্রাহীম খলিল ও এ্যাডভোকেট মনিরুল হক প্রমূখ।
সেলিম উদ্দিন বলেন, শুধু আমাদের দেশে নয় বরং বৈশ্বিকভাবেই ইসলামী আন্দোলন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখী। আর তা ইতিহাসের ধারাবাহিকতা মাত্র। অতীতে যারাই দ্বীনে হকের দাওয়াত দিয়েছেন অবিশ্বাসী ও কুফরী শক্তি তাদের উপরই জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছে। নবী-রাসুল (সা.)গণও এ ধরনের জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাদের কাউকে কাউকে এজন্য হত্যাও করা হয়েছে। এমনকি শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.)ও অবর্ণনীয় জুলুম-নির্যাতন মোকাবেলা করে দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য যে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছেন তা মুসলিম উম্মাহর জন্য চিরস্মরণীয় আদর্শ হয়ে আছে। দ্বীন প্রচারের কারণেই তাকে তার পরিবার-পরিজন সহ সাহাবীদের দীর্ঘদিন ‘শিয়াবে আবি তালিবে’ সম্পূর্ণ অমানবিকভাবে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। এমনকি তাদের খাদ্যদ্রব্য ও পানীয় সরবরাহও বন্ধ করে দেয়া হয়। ক্ষুধার জ্বালা মেটানোর জন্য তারা বাবলা গাছের ছাল ও পাতা খেতেও বাধ্য হয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত তাকে জন্মভূমির মায়া ত্যাগ করে মক্কা থেকে মদীনায় হিযরত করতে হয়েছে। তাই দ্বীনের বিজয় নিশ্চিত করতেই সমস্যাসঙ্কুল পথ অতিক্রম করেই ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের মূল পুঁজি। তাই ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের অবশ্যই আত্মগঠনে মনোনিবেশ করতে হবে। নৈতিকতা ও মূল্যবোধ জাগ্রত করার জন্য বেশি বেশি কুরআন, হাদিস ও ইসলামী সাহিত্য অধ্যয়ন করতে হবে।
ইসলামী আদর্শ ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে নিজ নিজ পরিবার ও সমাজ গঠনে আত্মনিয়োগ করতে হবে। ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা মোকাবেলায় আমাদেরকে আদর্শ ও চরিত্র মাধুর্য দিয়ে এবং যুক্তিপূর্ণ ভাষায় সুন্দরভাবে জনগণের মাঝে উপস্থাপন করতে হবে। এই জন্য সকল ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের সামাজিক ও জনকল্যাণমূলক কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে। সে জন্য নিজেদের কর্মস্পৃহা ও যোগ্যতা বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। প্রতিটি ঘরে ঘরে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। একই সাথে বাড়াতে হবে নিজেদের মানও। তাহলেই আমরা আমাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবো-ইনশা আল্লাহ।
তিনি আরও বলেন, মূলত ইসলামী আন্দোলনের মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে ইখলাস ও দ্বীনের প্রতি অগাধ ভালবাসা। আল্লাহর নির্দেশিত পথ ও রাসুল (সা.) এর অনুসৃত নীতির প্রতি অবিচলতায় হচ্ছে আমাদের বিজয়ের চালিকা শক্তি। তিনি নবী-রাসুল (সা.) অনুসৃত নীতি ও প্রশিক্ষণের বাস্তব প্রয়োগের মাধ্যমে দ্বীনকে বিজয়ী আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে ময়দানে অকুতোভয় সৈনিকের ন্যায় কাজ করতে সকলের প্রতি আহবান জানান।